শ্রমিক দিবসের মধ্যরাতেই কাজ বন্ধের নোটিস ঝুলল ভদ্রেশ্বরের ভিক্টোরিয়া চটকলে। এর ফলে বিপাকে পড়লেন স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে কারখানার প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক।
১ মে ছুটির দিন থাকায় কারখানা এমনিতেই বন্ধ ছিল। শনিবার সকালে কাজে যোগ দিতে এসে তেলেনিপাড়ার ওই কারখানায় ‘সাসপেনসন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস দেখেন শ্রমিকেরা। নোটিসের বয়ানে কর্তৃপক্ষ কারখানার রুগ্ণ আর্থিক অবস্থার দোহাই দিলেও তা মানতে নারাজ অধিকাংশ শ্রমিকই। তাঁদের অভিযোগ, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। গণ্ডগোলের আশঙ্কায় শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই কারখানায় পুলিশ প্রহরা বসানো হয়েছে।
শ্রমিক অসন্তোষের জেরে এর আগে কাজ বন্ধ হয়েছে শ্যামনগরের গৌরীশঙ্কর চটকল, জগদ্দলের অকল্যান্ড বা হাওড়ার হনুমান চটকলে। শ্রমিক দিবসেই ব্যারাকপুরের কাঁকিনাড়া চটকল ও নফরচাঁদ চটকলে ‘সাসপেনসন অব ওয়ার্কে-এর নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। ফলে, দু’টি কারখানা মিলিয়ে বেকার হয়ে পড়েন প্রায় নয় হাজার শ্রমিক।
অন্য দিকে, ভিক্টোরিয়া চটকলের সঙ্গেই এ দিন কাজ বন্ধের জেরে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে শ্রীরামপুরের ইন্ডিয়া চটকল এবং রিষড়ার ওয়েলিংটন চটকলে। তবে, এ দিন সকালে ঘণ্টা তিনেক বন্ধ থাকার পর রিষড়ার ওয়েলিংটন চটকলে ফের কাজ শুরু হয়েছে।
ভিক্টোরিয়া চটকলে প্রতি বছরই মে দিবসে সবেতন ছুটি পান শ্রমিকেরা। গত ২৫ এপ্রিলে জেলায় পুরভোটের জন্য কারখানা বন্ধ থাকলে সে দিনেরও বেতন দাবি করেন তাঁরা। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ সে দাবি মানতে রাজি হয়নি। শ্রমিকদের দাবি, এ কারণেই কাজ বন্ধের নোটিস ঝুলিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এ দিনের ঘটনার পর কারখানা চত্বরে দেখা মেলেনি ইউনিয়নের কোনও নেতাদের। গোটা ঘটনায় ক্ষোভে ফুঁসছেন শ্রমিকেরা। মেসিন বিভাগের কর্মী প্রকাশ পাসোয়ানের অভিযোগ, “কারখানার কয়েক জন উচ্চপদস্থ কর্তা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। শ্রমিকদের কথা চিন্তা না করে কারখানাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিচ্ছেন তাঁরা।” একই সুর শোনা গিয়েছে তাঁতঘর বিভাগের কর্মী শান্তুলালের কথায়। তিনি বলেন, “বন্ধ-খোলার এই খেলা আমরা বহু দিন ধরে দেখছি। প্রথমে খারাপ লাগলেও পরে সেটা সয়ে যায়। কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনা ও স্বৈরাচারী শাসনের ফলে কারখানা ধ্বংসের মুখে চলে যাচ্ছে।” এ বিষয়ে এ দিন দুপুর পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। কারখানার প্রেসিডেন্ট (ওয়ার্কশ) আর কে সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে, কারখানা বন্ধের জন্য ‘সাসপেনসন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিসে তিনটি কারণ উল্লেখ করেছেন কর্তৃপক্ষ। এক, কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। দুই, কারখানার উৎপাদন ক্ষমতা কমে যাওয়া। এবং তিন, উৎপাদন কম হওয়ায় কারখানার রুগ্ণ আর্থিক অবস্থা।
২০১৪ সালের ৮ নভেম্বর কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রতিবাদে এই চটকলে আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকেরা। কারখানার ম্যানেজারকে মারধর-সহ ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে তাঁদের বিরুদ্ধে। এর পরের দিন থেকে কারখানা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ ছিল। শ্রমিক-মালিক আলোচনা শেষে চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি ফের তা চালু হয়।
কারখানা বন্ধের খবর পেয়ে এ দিন চন্দননগরের মহাকুমাশাসক পীযূষ গোস্বামী বলেন, “জেলা প্রশাসনের কাছে আগাম কিছু না জানিয়েই কাজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কারখানা কর্তৃপক্ষ। জেলা শ্রম দফতর বিষয়টি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে।’’
চন্দননগরের ডেপুটি লেবার কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, “কারখানা কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আমাদের কিছু জানাননি। ঘটনার কথা জানতে পেরে আমরা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তবে, শ্রমিক সংগঠন, জেলা প্রশাসন এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার যাতে দ্রুত সমাধান হয় সেই চেষ্টা করা হবে।’’