দুর্ঘটনাগ্রস্ত গাড়িটি। ছবি: রাজকুমার মোদক।
বৌভাত থেকে ফেরার পথে গাড়িতে লরির ধাক্কায় মারা গেলেন নবদম্পতি-সহ ১৩ জন। গুরুতর আহত অবস্থায় ৯ জন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দুর্ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার ভোরে আলিপুরদুয়ারের মাদারিহাটে।
পুলিশ সূত্রের খবর, নবদম্পতি-সহ ২৭ জন যাত্রী নিয়ে গাড়িটি মোগলকাটা থেকে চুহাপাড়ার দিকে যাচ্ছিল। মাদারিহাটের কাছে নিয়ন্ত্রণ হারানোর ফলে গাড়িটির সঙ্গে উল্টো দিক থেকে আসা একটি লরির সংঘর্ষ হয়। পুলিশ জানিয়েছে, লরিটি অসম থেকে শিলিগুড়ির দিকে যাচ্ছিল। দুর্ঘটনায় যাত্রী-সহ গাড়িটি রাস্তার উপরেই উল্টে যায়। দুমড়ে-মুচড়ে যায় গাড়িটির সামনের অংশ। ঘটনাস্থলেই মারা যান নবদম্পতি আকাশ মঙ্গর (২২) এবং মানি কিসান (১৯)-সহ ১১ জন। উদ্ধারের পরে বাকি যাত্রীদের নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরও দুই যাত্রীর মৃত্যু ঘটে।
পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় আকাশ ও মানি ছাড়াও মারা গিয়েছেন গাড়ির চালক বিনোদ শা (৩০), চুহাপাড়া চা বাগানের বাসিন্দা জুলিয়া কিশান (৬৫), সোমারি কিশান (৩৫), সুরজ ওরাওঁ (৩৫), ফুলমনি কিশান (৩৩), বিষ্ণু কিশান (২২), নেইমার ওরাওঁ এবং মথুরা চা বাগানের চার বাসিন্দা। তবে মথুরা চা বাগানের বাসিন্দাদের পরিচয় জানা যায়নি।
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা। —নিজস্ব চিত্র।
কী ঘটেছিল এ দিন সকালে?
পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার কালচিনি চুহাপাড়া চা বাগানের বাসিন্দা মানির সঙ্গে মোগলকাটা চা বাগানের বাসিন্দা আকাশের বিয়ে হয়। বৃহস্পতিবার তাঁদের বৌভাত ছিল। সেই উপলক্ষে চুহাপাড়া এবং মথুরা চা বাগান থেকে ২৫ জন কনেযাত্রী একটি গাড়িতে করে মোগলকাটায় আসেন। সারা রাত সেখানেই আনন্দে মেতে ছিলেন তাঁরা। নিয়ম অনুযায়ী ওই রাতে আড়াইটা নাগাদ বর-কনেকে নিয়ে চুহাপাড়ায় মানির বাপের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁরা। মাঝরাস্তায় ঘটে দুর্ঘটনা। মাদারিহাট থানা থেকে ৫০০ মিটার দূরে ঘটা এই দুর্ঘটনায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বিয়ের আনন্দে মাতোয়ারা দুই পরিবারের মধ্যে বিষাদের সুর বেজে ওঠে।
পুলিশ জানিয়েছে, লরির চালক পলাতক। চালকের খোঁজ করার পাশাপাশি দুর্ঘটনার কারণ জানতে আহত যাত্রীদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। চালক মদ্যপ ছিল কি না তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার সকালে ঘটনাস্থলে যান আলিপুরদুয়ারের জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোহন শর্মা। সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। রাজ্য সরকারের তরফ থেকে মৃতদের পরিবার পিছু দু’লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের কথাও ঘোষণা করা হয়েছে।