Advertisement
E-Paper

খাস তালুকেও হারের কলঙ্ক, চিন্তায় তৃণমূল

কলকাতা পুরসভা যে ফের তাদের দখলে থাকবে, তা নিয়ে কারও কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু, ১৮ এপ্রিল যে ভোটের ছবি শহরের মানুষ দেখেছেন, তার পরেও এই ফলাফল চিন্তায় ফেলেছে শাসক দলকে। ঘরোয়া আলোচনায় তৃণমূলের অনেক নেতাই বলেছেন, বিরাট ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করতে সে দিন যে কৌশলে ভোট করা হয়েছে, তাতে ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ১৩০-১৩৫টি পাওয়ার কথা। কিন্তু, এত করেও ১১৪-তে থেমে যেতে হল শাসক দলকে। পরের বছর বিধানসভা ভোটের আগে এই ফলাফল যথেষ্ট উদ্বেগজনক।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০১৫ ১৬:২৮

কলকাতা পুরসভা যে ফের তাদের দখলে থাকবে, তা নিয়ে কারও কোনও সন্দেহ ছিল না। কিন্তু, ১৮ এপ্রিল যে ভোটের ছবি শহরের মানুষ দেখেছেন, তার পরেও এই ফলাফল চিন্তায় ফেলেছে শাসক দলকে। ঘরোয়া আলোচনায় তৃণমূলের অনেক নেতাই বলেছেন, বিরাট ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করতে সে দিন যে কৌশলে ভোট করা হয়েছে, তাতে ১৪৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত ১৩০-১৩৫টি পাওয়ার কথা। কিন্তু, এত করেও ১১৪-তে থেমে যেতে হল শাসক দলকে। পরের বছর বিধানসভা ভোটের আগে এই ফলাফল যথেষ্ট উদ্বেগজনক।

মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ভোটযন্ত্র (ইভিএম) খোলার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে ফলাফলের গতিপ্রকৃতি পরিষ্কার হয়ে যায়। দুপুর পর্যন্ত রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে ফল ঘোষণা না হলেও দেখা যাচ্ছে, গত বারের চেয়ে এ বার তৃণমূলের জেতা ওয়ার্ডের সংখ্যা বেড়েছে। প্রায় কোনও সাংগঠনিক শক্তি না থাকলেও বিজেপি-র আসন সংখ্যাও বেড়েছে (৩ থেকে ৭)। তুলনায় কমেছে বামেদের জেতা ওয়ার্ডের সংখ্যা (৩৩ থেকে ১৫)। কংগ্রেসেরও আসন সংখ্যা কমেছে (১০ থেকে ৫)। তবে গত লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে এই ফল বিজেপি-র পক্ষে মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়।

তবু পুরোপুরি খুশি হতে পারছেন না তৃণমূল নেতৃত্ব। কলকাতার ভোট কেমন হয়েছে, তা বোঝাতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছিলেন, আদর্শ পরিবেশে ভোট হলে তাঁর কাছে এত অভিযোগ আসত না। তিনি এ-ও জানিয়েছিলেন, ভোটের দিন বিরোধী দলগুলির তরফে তাঁর কাছে ৭০টি অভিযোগ জমা পড়েছে। কলকাতার ভোট নিয়ে রিটার্নিং অফিসার যে রিপোর্ট দিয়েছিলেন, তার সঙ্গে যে তিনি সহমত হতে পারছেন না, তা-ও জানিয়েছিলেন কমিশনার। এ জন্য রিটার্নিং অফিসারের কাছে ফের রিপোর্টও তলব করেন তিনি। ‘অবাধ’ ভোটের নামে শহরের অধিকাংশ বুথে যে সে দিন দেদার ছাপ্পা ভোট হয়েছে, লুঠ হয়েছে ভোটবাক্স— সেই অভিযোগ করেছেন ভোট দিতে না পারা বহু নাগরিক। তবু কোনও বুথে পুনর্নির্বাচন করার নির্দেশ দেননি কমিশনার।

এই প্রেক্ষাপটে তাঁদের আসন সংখ্যা কোনও মতেই ১৩০-এর কম হবে না বলেই ধরে নিয়েছিলেন শাসক দলের নেতারা। গত কয়েক দিন ঘরোয়া আলোচনায় তাঁরা বলেছিলেন, নিশ্চিত জয় জেনেও বিধানসভা ভোটের আগের এই ‘ওয়ার্ম আপ ম্যাচে’ যতটা সম্ভব শক্তি বাড়িয়ে নিতে চাইছেন দলনেত্রী। তেমনই নির্দেশ ছিল স্থানীয় নেতাদের কাছে। সেই মতো তাঁরা ‘সফল ভাবে’ কাজ সেরেছেন। তবু ফলাফলে তার প্রতিফলন কোথায়— প্রশ্ন এক শীর্ষ নেতার। ১১৪টি ওয়ার্ডে জিতেও কেন তিনি হতাশ হচ্ছেন, তাঁর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন ওই নেতা। তাঁর কথায়, ১০ এবং ১১ নম্বর বরোতে বামেরা ভাল ফলাফল করেছে। আবার গার্ডেনরিচের মতো সংখ্যালঘু প্রধান বন্দর এলাকাতেও (১৫ নম্বর বরো) তৃণমূলের ফল খারাপ হয়েছে।

ওই তিন বরো এলাকার মধ্যেই রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর অন্যতম দুই প্রধান সৈনিক ফিরহাদ হাকিম ও অরূপ বিশ্বাসের বিধানসভা এলাকা। এ দিন ফলাফল ঘোষণার পর কালীঘাটে মমতার বাড়ির বাইরে ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর বিধানসভায় ফল খারাপ হওয়ার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন ফিরহাদ। তাঁর যুক্তি, ‘‘ভাল ফল করতে হলে কাউন্সিলরদের কাজ করতে হবে। মন্ত্রী হয়ে যাওয়ায় আমিও আগের মতো সময় দিতে পারিনি।’’ তৃণমূলের বর্ষীয়ান নেতা সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বিস্ময়, তাঁর এলাকায় নাম না-জানা বিজেপি প্রার্থী কী করে দ্বিতীয় হয়ে গেলেন তাই নিয়ে। তাঁর ধারণা, কলকাতায় সংখ্যালঘুদের একশো শতাংশ ভোটও তাঁরা পাননি। সুব্রতবাবুর এই ব্যাখ্যার সমর্থন মিলেছে গার্ডেনরিচ এলাকার ফলাফলে।

রাজাবাজারের মতো ঘিঞ্জি সংখ্যালঘু এলাকার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডেও কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে বিপুর ভোটে হেরেছেন তৃণমূলের হেভিওয়েট প্রার্থী পরেশ পাল। তপসিয়ার মতো আধা সংখ্যালঘু এলাকাতেও হেরে গিয়েছেন পুরসভার ডেপুটি মেয়র ফরজানা আলম। আবার, মমতার বিধানসভা এলাকা ভবানীপুরে পুর-চেয়ারম্যান সচ্চিদানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরাজয় যেন তৃণমূলের ইন্দ্রপতন।

মমতা নিজে অবশ্য এই সব ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। তাঁর বক্তব্য, শহরে প্রায় সাড়ে চার হাজার বুথের মধ্যে কয়েকটি নিয়ে অভিযোগ ছিল। অথচ তা নিয়েই তৃণমূলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। এ জন্য সংবাদমাধ্যমকে ‘এক হাত’ নিয়ে তিনি বলেছেন, ‘‘এই ভোটে আমাদের বেশি প্লাস হয়েছে।’’ তাঁর অভিযোগ, অপপ্রচার করে মানুষের রায়কে অপমান করা হচ্ছে।

TMC Kolkata Municipal Corporation Trinamool BJP municipal election Firhad Hakim
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy