ছবি: এপি।
এগারো ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও খোঁজ মিলল না এয়ার এশিয়ার জেড ৮৫০১ যাত্রিবাহী বিমানের। এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পরই যৌথ ভাবে তল্লাশি অভিযানে নামে সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়া। বিকেল পর্যন্ত তল্লাশি চালিয়েও বিমানের কোনও হদিশ মেলেনি। অন্ধকার নেমে আসায় এ দিনের মতো তল্লাশি অভিযান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের বিমান এমএইচ ৩৭০-র রহস্যোদ্ঘাটন হতে না হতেই রবিবার ফের রহস্যজনক ভাবেই নিখোঁজ হয়ে গেল এয়ার এশিয়ার যাত্রিবাহী বিমান কিউ জেড ৮৫০১। এ দিন বিমানের নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে সংস্থাটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বিমানটিতে মোট ১৫৫ জন যাত্রী ও ৭ জন বিমানকর্মী রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ইন্দোনেশিয়ার ১৫৬, দক্ষিণ কোরিয়ার ৩, ফ্রান্সের ১ এবং মালয়েশিয়ার ১ ও সিঙ্গাপুরের ১ জন যাত্রী। এ ছাড়াও রয়েছেন দুই পাইলট, চার জন ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্ট ও এক জন ইঞ্জিনিয়ার। রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ১৭ মিনিট নাগাদ এয়ার এশিয়ার ওই বিমানটি ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া থেকে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা হয়। সিঙ্গাপুরের চাঙ্গি বিমানবন্দরে সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ পৌঁছনোর কথা ছিল বিমানটির। কিন্তু ওড়ার ৪২ মিনিট পরেই বিমানটির সঙ্গে জাকার্তা এটিসি-র সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, নিখোঁজ হওয়ার আগে খারাপ আবহাওয়ার জন্য বিমানটির পথ পরিবর্তন করতে চেয়েছিলেন পাইলট। অন্য দিকে ইন্দোনেশিয়ার বিমান পরিবহণমন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, নিখোঁজ হওয়ার আগে পর্যন্ত বিমানটির অবস্থান ছিল বোর্নিও দ্বীপের পশ্চিম কালিমান্তানের পন্তিয়ানাক শহরের উপর। তানজুং পান্দান এবং পন্তিয়ানাকের মাঝামাঝি বিমানটির সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তবে বিমানটি থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও বিপদ সঙ্কেত পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছে পরিবহণমন্ত্রক। পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে চাঙ্গি বিমানবন্দরে একটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার খোলা হয়েছে। বিমানটির অবস্থান চিহ্নিত করতে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে অনবরত তথ্য আদানপ্রদান করা হচ্ছে। গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখেছে ভারত, চিন এবং অস্ট্রেলিয়া। ভারতীয় নৌবাহিনী সূত্রে খবর, বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সমুদ্রে মোট তিনটি অনুসন্ধানকারী জাহাজ ও একটি পি-৮১ বিমান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সারাদিনের উত্কণ্ঠার মধ্যে অসমর্থিত সূত্রে খবর আসে বিমানটি সুমাত্রার পূর্ব বেলিতুং-এ বিমানটি ভেঙে পড়েছে। সেখানে বিমানটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে পাওয়া গিয়েছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই আসরে নামেন মালয়েশিয়ার পরিবহণ মন্ত্রী লিও তিয়ং লাই। বিমান ভেঙে পড়ার খবরটি খারিজ করে তিনি লোকজনকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান। তাঁরা যাতে কোনও রকম গুজবে কান না দেন সেই অনুরোধও করেন লাই।
২০১৪-র মধ্যে কয়েক মাসের ব্যবধানে পর পর তিনটি বিমান দুর্ঘটনায় রীতিমতে ‘অস্বস্তি’তে মালয়েশীয় সরকার। প্রধানমন্ত্রী নাজিব রজক এ দিনের বিমান নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েং লুং-ও এ বিষয়ে গভীর আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ইন্দোনেশিয়ার সুরাবায়া বিমানবন্দরে উদ্বিগ্ন আত্মীয়-পরিজনেরা। ছবি: এপি।
এ বছরের ৮ মার্চ নিখোঁজ ২৩৯ জন যাত্রী নিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায় মালয়েশীয় এয়ারলাইন্সের এমএইচ ৩৭০ বিমান। ভারত, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা-সহ বেশ কয়েকটি দেশ বিমানটির খোঁজে তল্লাশি অভিযান চালায়। কিন্তু নিখোঁজ হওয়ার দশ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনও পর্যন্ত কোনও হদিশই মেলেনি সেই বিমান ও যাত্রীদের। আবার এ বছরের ১৭ জুলাই ফের দুর্ঘটনার শিকার হয় ওই সংস্থার আরও একটি বিমান। ইউক্রেনের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় ২৯৮ জন যাত্রী-সহ বিমানটিকে গুলি করে নামানো হয়। মৃত্যু হয় সব যাত্রীরই। এ দিন কিউজেড ৮৫০১ বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই অনেকে এমএইচ ৩৭০-র পুনরাবৃত্তির আশঙ্কা করছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy