বিজেপির বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধের ক্ষেত্র এড়িয়ে কেন তিনি বামেদের বিরুদ্ধে লড়তে নেমেছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন বিস্তর। রাহুল গান্ধীর ওই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন ও ক্ষোভ থাকলেও তাঁর সঙ্গে সম্মুখ সমর এড়িয়েই যেতে চাইছেন সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব। এখনও পর্যন্ত যা ঠিক আছে, রাহুলের লোকসভা কেন্দ্র ওয়েনাড়ে প্রচারে যাচ্ছেন না সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। দলের প্রাত্তন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের নির্বাচনী সফরসূচিতেও আপাতত ওয়েনাড় নেই।
কেরলের ২০টি লোকসভা আসনে ভোট আগামী ২৬ এপ্রিল। সেই উপলক্ষে চলতি সপ্তাহ থেকে নির্বাচনী প্রচার ও উত্তাপ তুঙ্গে উঠছে দক্ষিণী ওই রাজ্যে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবারই কেরলে জোড়া সমাবেশ করেছেন। কংগ্রেসের বর্তমান সাংসদ ও প্রার্থী রাহুলও এ দিন ওয়েনাড়ে পৌঁছে রোড-শো করেছেন। এই দফায় দু’দিন তাঁর প্রচার চলবে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, পরে আবার তিনি আসবেন রাজ্যে দলের প্রচারে। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক ইয়েচুরির কেরল সফর শুরু হচ্ছে আজ, মঙ্গলবার থেকে। তাঁর যাওয়ার কথা উত্তরে কাসারগোড়, কান্নুর, ভাডাকারা, কোঢ়িকোড হয়ে পালাক্কাডে। ওই আসনে প্রার্থী হয়েছেন সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এ বিজয়রাঘবন। পাতানামতিট্টার প্রার্থী, রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী টনাস আইজ়্যাকের প্রচারেও তাঁর যাওয়ার কথা। ইয়েচুরির এই সফর শেষ হবে তিরুঅনন্তপুরমে এসে। উত্তর থেকে দক্ষিণ প্রান্ত পর্যন্ত এই প্রচার-সূচিতে নেই রাহুলের ওয়েনাড়। দলের এক পলিটব্যুরো সদস্যের কথায়, ‘‘কেরলে বাম ও কংগ্রেসের সমঝোতা হওয়ার কোনও পরিস্থিতিই নেই। কিন্তু সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ মঞ্চে দুই পক্ষই আছে। এই সময়ে এক দলের শীর্ষ নেতার কেন্দ্রে তাঁর বিরুদ্ধে অন্য দলের সর্বোচ্চ নেতা প্রচারে গেলে আরও ভুল বার্তা যাবে।’’
সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, কেরলের ওয়েনাড়কে প্রার্থী হওয়ার জন্য বেছে নিয়ে রাহুল আগেই ‘কৌশলগত ভুল’ করেছেন। তার উপরে সেখানে সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রচারে থাকলে তিক্ততা আরও প্রকট হয়ে যেতে পারে।
আরও পড়ুন:
সিপিএমের শীর্ষ নেতৃত্ব তিক্ততা প্রশমনের চেষ্টা চালালেও রাহুল অবশ্য এ দিন রাতে কোঢ়িকোডে কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে আক্রমণ করেছেন। রাহুলের প্রশ্ন, বিজেপি এবং আরএসএস যে ভাবে তাঁকে নিশানা করে, সে ভাবে বিজয়নকে করে না কেন?
তবে রাহুলকে ছাড় দিলেও তাঁর ডান হাত, এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) কে সি বেণুগোপালের কেন্দ্রে প্রচারে যাচ্ছেন ইয়েচুরি। সিপিএম সূত্রের যুক্তি, গত বার কেরলে একমাত্র আলপ্পুঝা আসনটিই তারা জিতেছিল। সেখানেই কংগ্রেসের হয়ে দাঁড়িয়েছেন বেণুগোপাল। সিপিএমকে তার দখলে থাকা আসন রক্ষা করতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করতেই হবে! বেণুগোপালকে নিয়ে অবশ্য অস্বস্তি এবং বিড়ম্বনা রয়েছে বাংলার কংগ্রেসেও। এই রাজ্যে ২০১৬ সালে দু’পক্ষের আসন সমঝোতার সময়ে প্রচারে এসেছিসেন রাহুল, কলকাতায় তাঁর সঙ্গে প্রচারের মঞ্চে গিয়েছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, সিপিএম নেতা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অথচ বেণুগোপাল সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরে ২০২১ সালে বাংলায় আসন সমঝোতা হলেও রাহুল প্রচারে আসেননি। এ বার লোকসভায় সিপিএমের সঙ্গে আসন-রফা করলেও সর্বভারতীয় কংগ্রেস যে অন্য রাজ্যের মতো এখানে আনুষ্ঠানিক ভাবে সমঝোতা ঘোষণা করেনি, তার নেপথ্যে বেণুগোপালের ‘কেরল-দায়’কেই দায়ী করা হচ্ছে কংগ্রেসের অন্দরে!
ওয়েনাড়ে রাহুলের বিরুদ্ধে সিপিআইয়ের প্রার্থী হয়েছেন অ্যানি রাজা। বিজেপির হয়ে লড়ছেন দলের রাজ্য সভাপতি কে সুরেন্দ্রন। বিজেপির অবশ্য দাবি, কংগ্রেস ও বামেদের তলে তলে সমঝোতা রয়েইছে। লোকসভা ভোটের প্রচারে কেরলের একাধিক কেন্দ্রে ঘোরার কথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট, সুভাষিণী আলি, তপন সেনদেরও। এর মধ্যে সুভাষিণীর যাওয়ার কথা ওয়েনাড় লাগোয়া মলপ্পুরমে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)