Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

লালকমল নাকি অন্য হিরে-মানিক

শুধু জোড়াফুলে নয়, জল্পনার নানা সৌরভ ভাসছে আর এক ফুল ঘিরেও।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সন্দীপ পাল
কালীগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২১ ০৭:০৪
Share: Save:

গত বিধানসভা ভোটে কালীগঞ্জ আসনে কংগ্রেসের হয়ে সামান্য ব্যবধানে জিতে পরে তৃণমূলে চলে গিয়েছিলেন জোটপ্রার্থী হাসানুজ্জামান শেখ। তাঁর কাছে হেরে যান প্রাক্তন বিধায়ক তথা তৃণমূলের নদিয়া জেলার কো-অর্ডিনেটর নাসিরুদ্দিন আহমেদ ওরফে লাল। তাঁদের দু’জনের ‘মধুর’ সম্পর্কের কথা কারও অবিদিত নেই।

২০১৬-র বিধনসভা ভোটে জিতে হাসানুজ্জামান তৃণমূলে চলে যাওয়ার পরেই এলাকায় ক্ষমতার ভারসাম্য পাল্টে গিয়েছিল। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হতে থাকে। দু’টি গোষ্ঠী পরস্পরের বিরুদ্ধে লেগে পড়ে। বেশ কিছু পুরনো কর্মী কার্যত বসে যান।

এঁদের দু’জনেই এ বার তৃণমূলের প্রার্থী হতে আগ্রহী। কিন্তু কপাল খুলছে কার?

অঙ্কটা গোলমেলে, সন্দেহ নেই। কেননা তরুণ বিধায়ক হাসানুজ্জামান যুব তৃণমূলের রাজ্য সহ-সম্পাদক এবং রাজ্য তৃণমূল যুব সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। নাসিরুদ্দিন আবার গত লোকসভা ভোটের সময় থেকে মহুয়া মৈত্রের কাছ ঘেঁষেছেন। মহুয়া সাংসদ ও জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী হওয়ার পরেই জেলা কো-অর্ডিনেটরের দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি। মহুয়া জেলার প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারেন বলে কর্মীদের বড় অংশের ধারণা। ফলে বলা চলে, দু’জনেই মগডালে সুতো বেঁধেছেন।

গত বার বাম-কংগ্রেসের মিলিত শক্তিতে জেতা হাসানুজ্জামানকে কেন প্রার্থী করবে দল? তাঁর শিবিরের দাবি, তৃণমূলে যোগ দেওয়া ইস্তক তিনি যুব কর্মীদের উপর ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছেন। এক সময়ে জেলার যুব সভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন। তাঁকে প্রার্থী করা হলে এই যুব বাহিনী অধিকতর সক্রিয় হবে। অন্য দিকে নাসিরুদ্দিনের পক্ষে যুক্তি হল, কালীগঞ্জ ব্লকে সংগঠনকে মজবুত করার পিছনে তাঁর বড় ভূমিকা ছিল। লালের শিবিরের দাবি, তিনি প্রার্থী হলে দলের বহু পুরনো কর্মী ফিরে আসবেন। এ প্রসঙ্গে নাসিরুদ্দিন বলছেন, “নেত্রী ঠিক করবেন, প্রার্থী কে হবে। যে-ই হোক, আমরা সবাই মাঠে নেমে কাজ করব।” বিদায়ী বিধায়ক অবশ্য বারবার ফোন পেয়েও ধরেননি, সম্ভবত ‘ব্যস্ততা’র কারণেই।

তবে যে-ই প্রার্থী হোন, দলের সকলে তাঁর জন্য ‘জান লড়িয়ে দেবে’ এমনটা সাধারণ কর্মীরা প্রায় কেউই বিশ্বাস করছেন না। বরং অনেকেরই আশঙ্কা, এক পক্ষের নেতা প্রার্থী হলে অন্য পক্ষ ততটা গা না-ও ঘামাতে পারে, অন্তর্ঘাতের আশঙ্কাও পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তৃতীয় কেউ প্রার্থী হলে সেই ঝুঁকি কমানো যায়। ফলে জল্পনার আসরে কালীগঞ্জ থেকে নির্বাচিত জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ মল্লিকা চট্টোপাধ্যায়ের নাম যেমন ভাসছে, কালীগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী শেফালি খাতুনের নামও শোনা যাচ্ছে। কেউ কেউ বাইরে থেকে ‘তারকা প্রার্থী’ আনার অঙ্কও কষে ফেলেছেন। তবে তৃণমূলের নদিয়া জেলা মুখপাত্র বাণীকুমার রায়ের দাবি, “ব্যক্তি দেখে আমাদের দলে ভোট হয় না। নেত্রী যা ঠিক করবেন সেই মতোই কর্মীরা মাঠে নেমে কাজ করবেন।”

শুধু জোড়াফুলে নয়, জল্পনার নানা সৌরভ ভাসছে আর এক ফুল ঘিরেও। গত বিধানসভা ভোটে কৃষ্ণনগরের সৈকত সরকার বিজেপির প্রার্থী হওয়ায় স্থানীয় কর্মীদের বড় অংশ ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তাঁদের দাবি, এলাকার কাউকে প্রার্থী করতে হবে। এ বার সবচেয়ে বেশি নাম শোনা যাচ্ছে বড় চাঁদঘরের অভিজিৎ ঘোষের। তিনি ছাত্রজীবন থেকে আরএসএস-এর সঙ্গে যুক্ত। পেশাগত কারণে দীর্ঘদিন দেশের বাইরে কাটিয়েছেন, বর্তমানে কলকাতার বাসিন্দা। রাজ্য ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ভাল বলেই স্থানীয় নেতাকর্মীদের বেশির ভাগের ধারণা।

অভিজিতের দাদা বিশ্বজিৎ ঘোষ দলের জেডপি ১৫ সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে অভিজিৎ বলেন, “যাঁরা দলের কাজ করছেন, তাঁদের এটা ইচ্ছা। তবে দল থেকে সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত আমি কিছুই বলতে পারব না।”

দৌড়ে আছেন দেবগ্রামের বাসিন্দা, জেডপি ১৬ সভাপতি তাপস ঘোষও। জেলা কমিটির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ভাল। স্থানীয় তরুণদের তুলে আনার ক্ষেত্রেও তাঁর সুনাম রয়েছে। তবে তিনিও বলছেন, “দল যা ঠিক করবে তা-ই হবে।” আবার অন্য হিসেবও আছে। কালীগঞ্জ কেন্দ্রে ৫০ শতাংশের বেশি সংখ্যালঘু মানুষের বাস। বিজেপি সূত্রের খবর, সংখ্যালঘু মোর্চার তরফে নদিয়া জেলায় দু’টি আসন দাবি করা হয়েছে, কালীগঞ্জ তার একটি। সেই সূত্রে পলাশির ছোট কুলবেড়িয়ার বাসিন্দা, পেশায় শিক্ষক মানিক মল্লিকের নাম উঠে আসছে। দলের প্রাক্তন জেলা পর্যবেক্ষক, মুর্শিদাবাদের নেত্রী মাফুজা খাতুনের কাছের লোক বলে তিনি পরিচিত। প্রাক্তন সিপিএম পার্টিকর্মী, বর্তমানে বিজেপির জেডপি-১৫ সাধারণ সম্পাদক মানিক বলছেন, “দল যদি আমাকে কোনও দায়িত্ব দেয়, তা যথাযথ ভাবে পালনের চেষ্টা করব।”

জোটের তরফে কালীগঞ্জ আসনটি বামফ্রন্ট পাবে না কংগ্রেস, নাকি আইএসএফ ভাগে টানবে, সেটাই এখনও জোটকর্মীদের কাছে স্পষ্ট নয়। অতএব হাতে রইল পেনসিল!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE