অভিনব: ‘ফ্ল্যাশ মব’ও এ বার ভোটের প্রচারের মাধ্যম। ফাইল চিত্র
২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচন দেখিয়েছে, ভোটের প্রচারে বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমের পাশাপাশি প্রচার-কৌশলে অভিনবত্ব আনা কতটা জরুরি। এ বছরের বিধানসভা নির্বাচনেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল প্রচারের জন্য অনলাইন মাধ্যমকে বেছে নিয়েছে। অনলাইনের পাশাপাশি বঙ্গের ভোট প্রচারে দেখা যাচ্ছে নানা অভিনবত্ব ও নিত্যনতুন কৌশল। বামেদের ‘টুম্পা সোনা’ গানের প্যারোডি থেকে শুরু করে ‘হল্লা গাড়ি’ অথবা তৃণমূল ও বিজেপি-র ‘খেলা হবে’ শব্দবন্ধের ব্যবহার, বঙ্গের নির্বাচনী প্রচারে নজর কেড়েছে সবই। সমাজমাধ্যমেও ঘুরছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিম, কার্টুন ও ভিডিয়ো। যা সাধারণ মানুষের নজর কাড়ছে। বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারাও সমাজমাধ্যমে এ সব শেয়ার করছেন।
একটা সময় ছিল, যখন ভোট আসার অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা দেওয়ালের দখল নিতে নেমে পড়তেন। প্রার্থী ঘোষণারও আগে শুরু হয়ে যেত দেওয়াল ‘দখল’ করে চুনকামের কাজ। তবে এখন রাজনৈতিক দলগুলি দেওয়াল লিখন, ফ্লেক্স, পোস্টারের পাশাপাশি হাতিয়ার করছে অনলাইন মাধ্যমকে। ফলে প্রচারেও এসেছে অভিনবত্ব। বর্তমানে প্রচার শুধুমাত্র দেওয়াল লিখনে সীমাবদ্ধ রাখতে চাইছে না রাজনৈতিক দলগুলি। তাই ‘হল্লাগাড়ি’ বা ‘খেলা হবে’র মতো প্রচার কৌশল এসেছে ভোটের ময়দানে। আর এই ‘স্মার্ট’ প্রচার নজর কাড়ছে শহর থেকে গ্রামের কমবয়সি ভোটারদের।
তৃণমূল, বিজেপি এবং বাম— সব দলই অভিনবত্ব আনার চেষ্টা করেছে ভোটের প্রচারে। তার জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনাও করা হয়েছে দলীয় নেতাদের তরফে। শাসকদলের অনলাইন প্রচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মী জানান, ভোটারদের একটি বড় অংশ প্রতিদিন অনলাইনে অনেকটাই সময় কাটান। তাই তাঁদের কাছে পৌঁছতে নেট-মাধ্যমকেই প্রচারের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ভাবে খুব সহজেই অনেক মানুষের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায় নিজেদের বার্তা নিয়ে।
বিজেপি-র আইটি সেলের সঙ্গে যুক্ত এক কর্মী জানান, ‘টেক্সট’-এর থেকে ‘ইমেজ’-কেই বেশি পছন্দ করছে বর্তমান প্রজন্ম। তাই প্রচার দেওয়াল থেকে ‘ওয়াল’-এ স্থানান্তরিত হয়েছে। আগামী দিনে ছবি বা ভিডিয়ো-কেন্দ্রিক প্রচার বাড়বে।
বামেদের ভোট প্রচারের সঙ্গে জড়িত এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘ব্রিগেডের প্রচারে ফ্ল্যাশ মবের সাফল্যের পরে হল্লাগাড়ির পরিকল্পনা মাথায় আসে। এর মাধ্যমে মানুষের প্রয়োজনীয়তার কথাগুলি তুলে ধরা হচ্ছে। আর মানুষ এই প্রচার পদ্ধতি গ্রহণ করছেন। তাই অনলাইনে হাজার হাজার মানুষ তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন।’’
উল্টোডাঙার বাসিন্দা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র অমিতাভ সাহা বললেন, ‘‘সময় বদলেছে। এখন কেউই আর আগের মতো দেওয়াল লিখন দেখেন বলে মনে হয় না। মোবাইলেই বেশির ভাগ মানুষ সময় কাটান। ভোটের আগে বিভিন্ন দলের কার্টুন ও মিম বেশ ভালই লাগে।’’
সিপিএম নেতা তথা যাদবপুর কেন্দ্রের প্রার্থী সুজন চক্রবর্তী এ সবে খারাপ কিছু দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘‘রাজনীতিতে কুকথা বাড়ছে। আর এই কুকথার থেকে অনেক ভাল হল্লাগাড়ি বা ফ্ল্যাশ মবের মতো প্রচার কৌশল। এগুলি সাধারণ মানুষের নজর কাড়ছে। মানুষের কথা, মানুষের চাহিদার কথা তুলে আনা হচ্ছে এ সবের মাধ্যমে।’’
২৭ মার্চ শুরু হচ্ছে বঙ্গের ভোট। তার আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের এই নয়া প্রচার পদ্ধতি যে চোখ টানছে আমজনতার, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy