Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Durgapur Barrage

Bengal Polls: ভোটের প্রচারে ফের ব্যারাজ সংস্কার

ইতিমধ্যেই সংযুক্ত মোর্চার ঘোষণাপত্রে জায়গা পেয়েছে দুর্গাপুর ব্যারাজ ও দামোদর সংস্কারের বিষয়টি।

৩১ নম্বর লকগেট মেরামতির জন্য ব্যারাজের সমস্ত জল বার করে দেওয়া হয়।

৩১ নম্বর লকগেট মেরামতির জন্য ব্যারাজের সমস্ত জল বার করে দেওয়া হয়। ফাইল চিত্র।

সুব্রত সীট
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ০৫ এপ্রিল ২০২১ ০৭:১১
Share: Save:

বিধানসভা বা লোকসভা, যে নির্বাচনই হোক না কেন, দুর্গাপুর ব্যারাজ সংস্কার এবং তাকে কেন্দ্র করে জল সরবরাহের বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয় এই শহরে। দুর্গাপুরে ভোট প্রচারে নেমে এ বারেও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা ব্যারাজ সংস্কারের বিষয়ে তাঁদের ভাবনার কথা জানাচ্ছেন। উঠছে নানা দাবি। তৈরি হচ্ছে রাজনৈতিক চাপান-উতোর।

ইতিমধ্যেই সংযুক্ত মোর্চার ঘোষণাপত্রে জায়গা পেয়েছে দুর্গাপুর ব্যারাজ ও দামোদর সংস্কারের বিষয়টি। দুর্গাপুর পূর্বের সিপিএম প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরী ও দুর্গাপুর পশ্চিমের কংগ্রেস প্রার্থী দেবেশ চক্রবর্তী, দু’জনেরই বক্তব্য, ‘‘দুর্গাপুর বাঁচাতে গেলে ব্যারাজ সংস্কার করতেই হবে। ব্যারাজের গভীরতা বাড়াতে হবে। তা না হলে যেমন জলের আকাল দেখা দেবে, তেমনই অতিবৃষ্টিতে ব্যারাজে বিপর্যয়ের আশঙ্কাও তৈরি হবে।’’ দুর্গাপুর পূর্বের তৃণমূল প্রার্থী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘ব্যারাজ সংস্কারের বিষয়ে কেন্দ্র কোনও দায় নিতে চায় না। রাজ্যের সীমিত আর্থিক ক্ষমতার মধ্যে চেষ্টা করছে।’’ যদিও, বিজেপির দুর্গাপুর পশ্চিমের প্রার্থী লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের পাল্টা দাবি, ‘‘কেন্দ্র সরকার প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করার কথা বারবার বলেছে। কিন্তু রাজ্য সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না করায় কাজ হয়নি।’’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দামোদরের ব্যারাজ থেকে জল নিয়ে পরিশুদ্ধ করে তা পানীয় জল হিসেবে সরবরাহ করে দুর্গাপুর পুরসভা, ডিএসপি, ডিভিসি। শিল্প-কারখানার জলও আসে দামোদরের ব্যারাজ থেকেই। ব্যারাজ থেকে বেরিয়ে যাওয়া ফিডার ক্যানাল থেকে পাম্প চালিয়ে জল তোলার ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে-সঙ্গে পলি জমে ব্যারাজের জলধারণ ক্ষমতা কমে যায়। ডিভিসি সূত্রে জানা যায়, ব্যারাজ তৈরির সময়ে, জলাধারটির গভীরতা ছিল ৬.১ মিলিয়ন ঘনমিটার। ডিভিসি-র করা ২০১১-র একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, তা কমে হয়েছে ৩.৩৯৭ মিলিয়ন ঘনমিটার। এই পরিস্থিতিতে ২০২০-র অগস্টে দুর্গাপুর পূর্ব কেন্দ্রের বিদায়ী সিপিএম বিধায়ক সন্তোষ দেবরায় প্রধানমন্ত্রীর দফতরে চিঠি দিয়ে দাবি করেন, বর্তমানে জলাধারের গভীরতা নেমে এসেছে ২.৫ মিলিয়ন ঘনমিটারে।

এই পরিস্থিতিতে দুর্গাপুরের ভোট-মরসুমে ফের ব্যারাজ সংস্কার নিয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের বিষয়টি সামনে আসছে। ২০১৩-য় বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৎকালীন সিপিএম সাংসদ সাইদুল হক তৎকালীন কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী হরিশ রাওয়াতকে সমস্যার কথা জানিয়ে চিঠি দেন। জবাবে মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, রাজ্য সরকার ব্যারাজের বালি তোলার কাজ করবে। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করবে কেন্দ্র। ২০১৭-য় কেন্দ্রীয় জলসম্পদ মন্ত্রী উমা ভারতী দুর্গাপুরে এসে দাবি করেন, ঝাড়খণ্ড দামোদর সংস্কারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব জমা দিয়েছে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থেকে তেমন কোনও প্রস্তাব তিনি পাননি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৎকালীন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় সেই দাবি উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

এ দিকে, ২০১৭-র মে’তে বড়জোড়ার নির্বাচনী জনসভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, কেন্দ্র এগিয়ে না আসায় ১৩০ কোটি টাকা খরচে ব্যারাজ সংস্কারের কাজ আপাতত রাজ্য সরকার নিজেই শুরু করেছে। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই টাকায় ইতিমধ্যেই ব্যারাজের ছ’টি গেট বদলানো হয়েছে। আরও ছ’টি বদলানো হবে। বাকিগুলির সংস্কারের কাজ চলছে।

পাশাপাশি, নাগরিকদের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে শহরের বিকল্প জলের উৎস নিয়েও। কারণ, ২০১৭ ও ২০২০, দু’বার ব্যারাজে বিপর্যয়ের সময়েই দেখা গিয়েছিল, দুর্গাপুর শহর জুড়ে জলের ‘কালোবাজারি’, ‘আকাল’। দুর্গাপুর পুরসভা যদিও সে অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, ইতিমধ্যেই শহরে ১৯টি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। কিন্তু বিরোধীদের অভিযোগ, এখনও নাচন জলাধার এবং ব্যারাজ লাগোয়া এলাকায় থাকা একটি মজা জলাশয় সংস্কার হয়নি। ফলে, ব্যারাজে আবার বিপত্তি হলে, শহর জুড়ে জলের আকালের আশঙ্কা রয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের একাংশের। এই পরিস্থিতিতে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই জল-সমস্যা সমাধানের কথা বলছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Assembly Election 2021 Durgapur Barrage
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE