Advertisement
০৮ মে ২০২৪
Narendra Modi

ব্রিগেডে সভার পরে মোদী স্যারের ভোটের ক্লাস করতে চান পদ্মের রাজ্য নেতারা

ব্রিগেড সমাবেশের জন্য সব নেতাই কলকাতায় থাকবেন। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে মোদীর থেকে ভোটকৌশলের ‘লাস্ট মিনিট সাজেশন’ নিতে চায় রাজ্য বিজেপি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৮:৫৮
Share: Save:

আগামী ৭ মার্চ কলকাতায় ব্রিগেড জনসভার পরে বিজেপি রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গেরুয়া শিবির সূত্রে খবর, ভোট পরিচালনা কী ভাবে হবে, তার দিকনির্দেশ করতেই ওই বৈঠক করতে চান মোদী। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, সেই বৈঠক রাজভবনে হতে পারে। সেখানে রাজ্য স্তরের সব নেতার পাশাপাশি আসতে বলা হবে দলের বিভিন্ন শাখা সংগঠনের নেতৃত্বকেও। কোনও পদে না থাকলেও তৃণমূল-ত্যাগী দুই মুখ শুভেন্দু অধিকারী ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কেও ওই বৈঠকে আসতে বলা হবে। আরও কয়েকজন ‘নবাগত’ বিধায়ককেও ডাকা হতে পারে। তবে সেই তালিকা এখনও চূড়ান্ত নয়। মোদীর কর্মসূচি চূড়ান্ত হওয়ার পরেই তা করা হবে। ব্রিগেড সমাবেশের জন্য তখন সব নেতাই কলকাতায় থাকবেন। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ে মোদীর থেকে ভোটকৌশলের ‘লাস্ট মিনিট সাজেশন’ নিতে চায় রাজ্য বিজেপি।

রাজ্যে একের পর এক সফর চলছে জেপি নড্ডা এবং অমিত শাহর। সরকারি কর্মসূচির পাশাপাশি রাজনৈতিক সমাবেশ করতে আসছেন মোদীও। বুধবার রাতেই কলকাতায় আসার কথা নড্ডার। বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনায় জনসভার পাশাপাশি কলকাতায় বিশিষ্টজনদের নিয়ে একটি সমাবেশেও তাঁর যোগ দেওয়ার কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। পরের দিনই রাজ্যে আসার কথা প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংহের। উত্তরবঙ্গের বালুরঘাটে তাঁর সমাবেশ হওয়ার কথা। একটি মহলের খবর, এর পর রবিবার নাকি আবার রাজ্য সফরে আসতে পারেন মোদী। তবে তানিয়ে এখনও বিভ্রান্তি রয়েছে। তাই ব্রিগেড সমাবেশ নিয়েই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজ্য বিজেপি। মঙ্গলবার ওই প্রস্তুতি নিয়ে রাজ্য বিজেপি-র দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতা শিব প্রকাশ হেস্টিংসের নির্বাচনী কার্যালয়ে বৈঠক করেন। রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ উত্তরবঙ্গে ছিলেন। কিন্তু সেই বৈঠকে সব সাধারণ সম্পাদককে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছিল। সেই সঙ্গে ডাকা হয়েছিল কলকাতা জোনের দায়িত্বপ্রাপ্তদেরও।

বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার বৈঠকের মূল আলোচ্যই ছিল ব্রিগেড সমাবেশের পরিকল্পনা। রবিবার বাম ও কংগ্রেস জোটের ব্রিগেড সমাবেশ। তার ঠিক এক সপ্তাহ পরেই মোদীর সমাবেশ। সুতরাং সমাবেশে উপস্থিতির প্রত্যাশা নিয়ে বিজেপি-র উপর একটা চাপ তো রয়েইছে। কারণ, বাম-কংগ্রেসের ব্রিগেড সমাবেশের সঙ্গে তাদের সমাবেশের তুল্যমূল্য বিচার করবেন রাজ্যবাসী। বুধবারের বৈঠকে ঠিক হয়েছে, কলকাতার আশপাশের সাংগঠনিক জেলা (লোকসভা আসন) থেকে বেশি করে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আসতে হবে। সোমবারেই হুগলি লোকসভা এলাকায় সভা হয়েছে মোদীর। ব্রিগেডে তাই জোর দেওয়া হচ্ছে শ্রীরামপুর লোকসভা এলাকার উপর। একই ভাবে হাওড়া লোকসভা কেন্দ্রের সাতটি বিধানসাভা এলাকাকেও সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি বনগাঁ লোকসভা এলাকা থেকে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষদেরও যাতে ব্রিগেড সমাবেশে হাজির করা যায়, সে ব্যাপারে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে খবর। সম্প্রতি পূর্ব মেদিনীপুরের হলদিয়া ও হুগলির সাহাগঞ্জে মোদীর দু’টি সভায় সমাবেশ ‘সন্তোষজনক’ হলেও ব্রিগেড ভরাতে বাড়তি গুরুত্ব দিতে চাইছে বিজেপি। কারণ, ওই দু’টি সভাস্থলের তুলনায় ব্রিগেড অনেক বড় এলাকা।

একটা সময় পর্যন্ত ঠিক ছিল, রাজ্যে যে ৫টি ‘পরিবর্তন যাত্রা’ চালাচ্ছে বিজেপি তার সমাপ্তি হবে ব্রিগেড সমাবেশে। কিন্তু মোদীর সমাবেশ সফল করতে এখন নতুন পরিকল্পনায় ২ এবং ৩ মার্চের মধ্যে সব ‘পরিবর্তন যাত্রা’ শেষ করে ফেলা হবে। তার ফলে ব্রিগেডের প্রস্তুতিতে জোর দেওয়া যাবে বলেই মনে করছেন রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। রাজ্য বিজেপি নেতাদের একাংশ মনে করছে, ৭ ফেব্রুয়ারি মোদীর ব্রিগেড সমাবেশের আগে নির্বাচন কমিশন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা করলেও করতে পারে। সোমবার অসমের একটি সমাবেশে ৪ থেকে ৭ মার্চের মধ্যে কমিশন ঘোষণা করতে পারেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন মোদী নিজেও। তার উপরে ভিত্তি করেই ব্রিগেড থেকে বিজেপি রাজ্যে চূড়ান্ত পর্বের প্রচার শুরু করতে চাইছে। এখনও পর্যন্ত যা জানা গিয়েছে, সেদিন বেলা ১২টায় শুরু হবে সমাবেশ। মোদী আসবেন দুপুর ২টো নাগাদ। ওই সমাবেশের পরেই রাজভবনে তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসতে চান বিজেপি নেতৃত্ব।

পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গেই বিধানসভা নির্বাচন অসম, তামিলনাড়ু, কেরল এবং পুদুচেরিতে। তবে বিজেপি সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বাংলাকেই। রবিবার দিল্লিতে বিজেপি-রা জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকেও মোদী পশ্চিমবঙ্গের রণকৌশল নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছেন বলে খবর। সেখানে রাজ্যের সব নেতা অবশ্য উপস্থিত থাকতে পারেননি। সোমবার রাজ্যে মোদীর কর্মসূচি থাকায় বেশির ভাগ নেতাই রবিবার দিল্লি যেতে পারেননি। তাই ৭ মার্চেই ‘মোদী স্যার’-এর আসল ক্লাস করতে চান রাজ্য নেতারা। প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১২ জানুয়ারি রাজ্য সফরে এসেও রাজভবনে বিজেপি নেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছিলেন মোদী। সে বার বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে বসার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেও মোদীর সাক্ষাৎ হয়। নীলবাড়ি দখলের লড়াইয়ের আগে এ বার আর তেমন সম্ভাবনা না থাকলেও বিজেপি নেতৃত্বের থেকে নির্বাচন প্রস্তুতির রিপোর্ট নিতে পারেন মোদী। একই সঙ্গে দিতে পারেন প্রয়োজনীয় পরামর্শ। রাজ্য বিজেপি-র নেতারা আশা করছেন, ওই বৈঠকেই মোদী বাংলায় প্রচারে কী ভাবে ও কতটা সময় দেবেন, তারও একটা ধারণা মিলতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE