Advertisement
E-Paper

অ্যাংলো ইন্ডিয়ানের বাড়িতে কেকের সঙ্গে কড়াইশুঁটির কচুরি! অম্বরীশ-কনীনিকা-সুদীপের স্মৃতি

সত্তর-আশির দশকের কলকাতা। শহরের বুকে শীত নামত আরও গাঢ় হয়ে। সন্ধ্যা হলেও কুয়াশার জাল। সেই জাল ছিন্নভিন্ন বড়দিনের আলোয়।

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:০৬
কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, অম্বরীশ ভট্টাচার্যের স্মৃতিতে বড়দিন।

কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুদীপ মুখোপাধ্যায়, অম্বরীশ ভট্টাচার্যের স্মৃতিতে বড়দিন। ছবি: ফেসবুক।

তখনও শহর এত আধুনিক নয়। রাস্তায় রাস্তায় আলোর এত রোশনাইও নেই! বাঙালি তখনও ‘সেক্যুলার’। খ্রিস্টানদের বাড়িতেও এ দিন কেক আর কড়াইশুঁটির ‘ককটেল’।

রাস্তায় তখনও উপচানো ভিড় নেই। অ্যাংলো ইন্ডিয়ানেরা তখনও ‘অ্যান্টিক’ হয়ে যাননি। এই দিনে তাঁরা সেজেগুজে বেরিয়ে পড়তেন শহর দেখতে। তাঁদের সঙ্গে কাঁধ মিলিয়ে বাঙালিরাও। সত্তর-আশির দশকের সেই কলকাতার সাক্ষী অনেকেই। আনন্দবাজার ডট কম বেছে নিয়েছে রুপোলি পর্দার তিন জনপ্রিয় মুখকে। এঁরা সুদীপ মুখোপাধ্যায়, কনীনিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, অম্বরীশ ভট্টাচার্য।

তাঁদের বেড়ে ওঠার কলকাতায় বড়দিন কেমন ছিল?

প্রশ্ন তুলতে তিনজনেই স্মৃতিমেদুর। তিন অভিনেতার এক সুর, সেই সময় কলকাতা অন্য রকম ছিল। এত ঝাঁ-চকচকে নয়। এক মাস ধরে আলোয় আলোকময় হয়ে সেজে উঠত না।

সত্তরের দশকে বড়দিনের সকাল।

সত্তরের দশকে বড়দিনের সকাল। ছবি: সংগৃহীত।

এই বক্তব্যের রেশ টেনে কনীনিকা বলেছেন, ‘‘তখন শহর অনেক সহজ-সরল। হয়তো কম আলোয় সাজত। কিংবা উদ্‌যাপন এখনকার মতো করে হত না। বাহুল্য ছিল না বলেই সেই সময়ের সমারোহ আজও ভুলিনি।’’ বো-ব্যারাকে সেই সময় যাওয়ার অত চল ছিল না মধ্যবিত্ত বাঙালির। বদলে তারা চিড়িয়াখানায় যেত। কিংবা ধর্মতলায় যেত বিশেষ দোকানের কেক খেতে। তবে সান্টাক্লজ় কোনও দিন উপহার দেয়নি অভিনেত্রীকে। ‘‘আর সে সময়ে আমরা এখনকার ছেলেপুলেদের মতো পার্টি করতে পারতাম না। আমাদের উদ্‌যাপন বাড়ির সবার সঙ্গে।’’

ধর্মতলা জমজমাট।

ধর্মতলা জমজমাট। ছবি: সংগৃহীত।

অম্বরীশ আবার বো-ব্যারাকে গিয়ে ছানার কেক খেয়েছেন। ‘‘কলকাতা যখন পাম কেকে মজে, আমি তখন ছানার কেক খেয়েছি। ফিরিঙ্গিপাড়ার এটাই তখনকার রেওয়াজ।’’ তিনি এ-ও দেখেছেন, খ্রিস্টান বাড়িতে কেকের সঙ্গে কড়াইশুঁটির কচুরি আর নতুন আলুর দম খাওয়া হচ্ছে! তবে আফসোস তাঁর একটাই, ‘‘ওই আমলে বড়দিনে শহরের রাস্তায় ফিরিঙ্গিদের দেখা যেত। তাঁরা সুন্দর করে সেজে বেড়াতে বেরোতেন। ওঁদের হিলজুতোর সঙ্গে গির্জার ঘণ্টাধ্বনি অদ্ভুত ভাবে মিশে যেত। একুশের শহর ওঁদের দেখতে পেল না।’’

সেজে উঠেছে গির্জা।

সেজে উঠেছে গির্জা। ছবি: সংগৃহীত।

বাঙালি বরাবর ‘সবার রঙে রং মিশাতে হবে’ গোত্রের। সব পালা-পার্বণেই তার উৎসাহ। ছোটবেলায় এই উৎসাহ ছিল সুদীপ মুখোপাধ্যায়ের মধ্যেও। ‘চিরসখা’ ধারাবাহিকের ‘স্বতন্ত্র’র জীবন ছেলেবেলা থেকে সত্যিই স্বতন্ত্র। “বাবা সেনাবাহিনীর চিকিৎসক। নানা জায়গায় ঘুরে কাজ করতেন। আমরাও অনেক সময় তাঁর সঙ্গে নানা জায়গায় থেকেছি। মজার কথা, যিশু খ্রিস্টের জন্মদিনে আমার বাবার জন্মদিন।” তাই বাবা শহরে থাকুন বা না-থাকুন, মুখোপাধ্যায় পরিবারের এ দিন দ্বিগুণ মজা। বাবার জন্য পায়েস হত। তা ছাড়া, ভালমন্দ রান্না। তার পর ইডেন গার্ডেনে ক্রিকেট দেখতে যাওয়া। কিংবা চিড়িয়াখানার উদ্দেশে দল বেঁধে রওনা দেওয়া। “বাবা সেনাবাহিনীতে কাজ করায় কলকাতায় আমাদের ঠিকানা হেস্টিংসের উল্টো দিকে টার্ফ ভিউ আবাসনে। সেখান থেকে রেস কোর্স, কলকাতা টার্ফ ক্লাব পরিষ্কার দেখা যেত। দেখতাম, আলোয় সেজে উঠছে আমার শহর।

ইচ্ছাপূরণের সান্টাক্লজ়?

ইচ্ছাপূরণের সান্টাক্লজ়? ছবি: সংগৃহীত।

সেই সময় ভিড়ভাট্টা কম। রেড রোডে হুসহুস করে গাড়ি ছুটছে। সুদীপ সে সব খুব উপভোগ করতেন। তবে তিন খ্যাতনামীর কেউই কিন্তু ওই বয়সে উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে নিষিদ্ধ পানীয় বা মাদকসেবন করেননি। অম্বরীশ-কনীনিকা-সুদীপ-- তিন জনেরই দাবি, “আমাদের অত সাহস ছিল না। জানতাম, বাড়ির বড়রা জানতে পারলে দুর্গতির শেষ থাকবে না।”

Ambarish Bhattacharya Koneenica Banerjee Sudip Mukherjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy