গত কয়েক দিন ধরে কেবল নিরামিষ খাচ্ছেন অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়। আধ্যাত্মিক আবহে থাকার চেষ্টা করছেন। প্রথম উপলক্ষ, রথযাত্রা। দ্বিতীয় উপলক্ষ, তিনি সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের ছবি ‘লহ গৌরাঙ্গ’তে অভিনয় করছেন। নিজেই জানালেন অভিনেত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী।
রথযাত্রা নিয়ে এই বছর উচ্ছ্বসিত অনন্যা। কারণ, তাঁর এলাকা মুকুন্দপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নতুন মন্দির। ৪০ বছর ধরে সেখানে রথযাত্রা পালন, রথের মেলাও হত ঠিকই। কিন্তু, সেই ভাবে কোনও মন্দির ছিল না। সেই মন্দির প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই বছর। তাই রথযাত্রা থেকে উল্টোরথ, ব্যস্ততায় কাটছে অনন্যার। অভিনেত্রী তথা নেত্রী বলেন, “এই বছর জানুয়ারি মাসে এই মন্দির উদ্বোধন হয়। ইস্কনের রাধারমণজি উদ্বোধন করেন। মালা রায়, অরূপ বিশ্বাস, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ইন্দ্রনীল সেন, সুজিত বসু-সহ বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এসেছিলেন।”
আমিষ খাবার পছন্দ অনন্যার। নিজেকে মাছে-ভাতে বাঙালি বলতেই স্বচ্ছন্দ বোধ করেন তিনি। কিন্তু রথ উপলক্ষে আমিষ খাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রেখেছেন তিনি। প্রায় স্নানযাত্রার দিন থেকেই নিরামিষ খাওয়া শুরু করেছেন তিনি। অনন্যা বলেন, “জনপ্রতিনিধি হিসাবে অনেক কিছুই মাথায় রাখতে হয়। রথযাত্রা উপলক্ষে মন্দিরে বৈষ্ণবেরা আসছেন রোজ। ওঁরা স্নানযাত্রার দিন থেকেই নিরামিষ খাওয়া শুরু করেছেন। পরিষ্কার বস্ত্র পরছেন। নিরামিষ খেলে এই পবিত্রতা রক্ষা পায় বলে মনে করা হয়।”
এই সব দিক মাথায় রেখে কয়েক দিনের জন্য আমিষ থেকে দূরে থাকছেন অনন্যা। তাঁর কথায়, “জগন্নাথদেব তো শ্রীকৃষ্ণেরই রূপ। আসলে যাঁরা শ্রীকৃষ্ণের ভক্ত তাঁরা আমিষ-নিরামিষ বিষয়টা খুবই বাছবিচার করেন। তবে আমি যেমন জগন্নাথদেবের পুজোয় আছি। তেমনই আছি দুর্গাপুজোতেও। আমাদের দুর্গাপুজোর নবমীতে তো মাংস হয়। আমি দুই ক্ষেত্রেই আছি। আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে আধুনিকতার মধ্যে মেলবন্ধন রাখতে হবে।”
আরও পড়ুন:
নিরামিষ খাওয়ার আরও একটি কারণ হল ‘লহ গৌরাঙ্গ’ ছবিতে বিষ্ণুপ্রিয়া চরিত্র। সেই চরিত্রের সঙ্গে একাত্ম হতে আমিষ থেকে দূরে থেকেছেন তিনি। অভিনেত্রীর কথায়, “আধুনিকমনস্কেরা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে মনে করে দিন শুরু করে। আবার অন্য দিকে পুরাতনীরা বা আধ্যাত্মিক মানুষেরা চৈতন্যদেব, শ্রীরামকৃষ্ণকে সর্বক্ষণ স্মরণ করেন। তাই ‘লহ গৌরাঙ্গ’ ছবিতে অভিনয় করার জন্যই নিরামিষ খাওয়া শুরু করেছিলাম। সেটাই চলছে। যদিও আমি নিরামিষ খাবার যে খুব পছন্দ করি তা নয়। বাড়িতে বরাবরই মাছ-মাংসের মতো খাবারই হয়েছে।”
বাঙালির পাতে আমিষ থাকবে। এটাই বছরের পর বছর হয়ে এসেছে। আজকাল আমিষ দেখলে ‘গেল গেল’ রব ওঠে। কিন্তু বাঙালি বরাবরই আমিষপ্রেমী, মনে করেন অনন্যা। সব শেষে তিনি বলেন, “এক দিকে রথযাত্রা। অন্য দিকে ছবিতে অভিনয়। তাই একটা আধ্যাত্মিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে মাত্র। নিরামিষ খেলাম, কিন্তু মানুষের ক্ষতি করলাম বা মিথ্যাচার করলাম, এমন ভাবনায় আমি বিশ্বাসী নই। তাই আমিষ-নিরামিষ নিয়ে আমার কোনও পাপ-পুণ্য বোধ নেই। আমার দলের ছেলেরা বিগ্রহ ধরবেন বলে দীর্ঘ দিন ধরে নিরামিষ খাচ্ছে। বলা ভাল, ওদের নেতৃত্ব দিই বলেই আমিও নিরামিষ খাচ্ছি মাত্র।”
নিজের এলাকার রথযাত্রায় থাকার পাশাপাশি এর মধ্যে দিঘা যাওয়ার পরিকল্পনাও করেছেন অনন্যা।