বিধবাদের কি আজও সমাজে কোণঠাসা করা হয়? সমাজ প্রগতিশীল হচ্ছে। পোশাকের রং ও খাওয়াদাওয়ার উপর থেকে তথাকথিত নিষেধাজ্ঞা উঠছে। কিন্তু কোথাও গিয়ে এখনও সূক্ষ্ম ভাবে নানা বিষয়ে তাঁদের কোণঠাসা করা হয়। মনে করেন শতাক্ষী নন্দী। রুদ্রজিৎ রায়ের ছবি ‘পিঞ্জর’-এ এক বিধবা মহিলার চরিত্রে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী।
পারমিতা নামের এই চরিত্রটি অল্প বয়সে স্বামীকে হারায়। তার পর থেকে সে শান্ত, চুপচাপ। শতাক্ষী বলেন, “বিধবাদের নানা রকমের বাধার মুখে পড়তে হয় আজও। নানা ছুতমার্গ রয়েছে তাদের নিয়ে। তাদের কামনা বাসনার প্রসঙ্গ এলে সেগুলি আরও প্রকট হয়। সেই বিষয়টিও রয়েছে এই ছবিতে।”
বাস্তব জীবনে বিধবা মহিলাদের প্রতিদিনের যাপন নিয়ে কী পর্যবেক্ষণ শতাক্ষীর? অভিনেত্রী জানান, খুব অল্প বয়সে তিনি বাবাকে হারিয়েছেন। তাই নিজের মাকেই কাছ থেকে দেখেছেন। তবে পরিবারে তাঁর উপরে কখনও সরাসরি কিছু চাপিয়ে দেওয়া হয়নি। শতাক্ষী বলেন, “আমার মাকে কখনও বলা হয়নি, বাইরে কোথাও যেয়ো না। । খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে কিছু প্রত্যাশা কোরো না। বেশি উজ্জ্বল রঙের লিপস্টিক পোরো না। এ সব কোনও দিন দেখিনি। কিন্তু সমাজের কাঠামো এমন, আমি কিছু বিষয় লক্ষ করেছি।”
আরও পড়ুন:
শতাক্ষী জানান, শুরুর দিকে তাঁর মা নিজের ইচ্ছেগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করতেন। শাড়ি পরলে, সাদা বা খুব হালকা রং খুঁজতেন। ক্রমশ সেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসছেন তিনি। অভিনেত্রী বলেন,“শুধু আমার মা নয়। আরও অনেককেই দেখেছি, সমাজই যেন কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়। মনের মধ্যে নিজেকেই তখন দোষী ভাবতে থাকেন মহিলারা। নিজের ভাললাগাগুলোকে প্রাধান্য দিলেই, তাঁরা খারাপ। তাই পোশাক ও খাওয়াদাওয়ার উপরেও পরোক্ষ ভাবে প্রভাব পড়ে। আমার দিদা আরও আগের প্রজন্মের। তাই তাঁর ক্ষেত্রে বিষয়গুলো আরও প্রকট ভাবে দেখেছি। এই ত্যাগ নিজের ভাল লাগা থেকে নাকি সমাজের চাপিয়ে দেওয়ার জন্য, এই পার্থক্যটা খুব ঝাপসা হতে থাকে তখন।”
শহুরে জীবনে বিষয়গুলি পাল্টাচ্ছে। কিন্তু প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনও নানা ছুতমার্গ দেখা যায়। এমনই একটি চরিত্র ‘পিঞ্জর’-এর পারমিতা। সমাজের নানা বাধা ও ভ্রুকুটি পেরিয়েও সে অবশেষে প্রেমে পড়ে। সেই প্রেম সমাজের কাছে স্বীকৃতি পাবে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এই প্রসঙ্গে ছবির পরিচালক রুদ্রজিৎ রায় জানান, আসলে প্রত্যেকেই খাঁচার মধ্যে থাকে। সেই খাঁচা থেকে বেরিয়ে নিজেকে নতুন করে খুঁজে পাওয়ার গল্প বলে এই ছবি। তাঁর কথায়, “এই যুগে নিজেকেই নিজের পাশে দাঁড়াতে হয়। খাঁচা থেকে বেরিয়ে নিজের জায়গা তৈরি করে নেওয়া একটা লড়াই। কেউ সাহায্য করতে আসে না। শতাক্ষীর চরিত্রটাও এমনই।”