Advertisement
E-Paper

কোটি টাকার বাড়ি-গাড়ি নেই, আছে চারটি ফিতে কাটার ইভেন্ট! নায়িকা হয়ে অসাধারণ কী করলাম: সোহিনী

পুজোয় তাঁকে দেবের সঙ্গে ‘রঘু ডাকাত’ ছবিতে দেখা গিয়েছে। এ বার ফিরছেন একেবারে অন্য ধরনের চরিত্রে। প্রতীম ডি গুপ্তের পরিচালনায় ‘রান্না বাটি’ ছবিতে রাঁধুনির চরিত্রে দেখা যাবে সোহিনীকে।

স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ নভেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৬
সোহিনী সরকার। ছবি: সংগৃহীত।

সোহিনী সরকার। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: দেবের বিপরীতে নাচ-গানের ছবিতে প্রথম অভিনয়। দেব-সোহিনী কি আগামিদিনে জুটি হতে পারে?

সোহিনী: জুটি নিয়ে আমি কী বলব? প্রযোজকেরা ভাবলে হবে। তবে দেব-সোহিনী জুটি হলে ভালই হবে। ইন্ডাস্ট্রিতে জুটিগুলো যদি ভাঙা যায়, তা হলে কিন্তু একঘেয়েমি কমবে। যেমন, ইধিকা আর আবীর। অঙ্কুশের সঙ্গে রুক্মিণী, জিৎ আর ইশা। এ রকম করে জুটি ভাঙলে অন্য রকম ছবি হবে।

প্রশ্ন: দেবের ঘরে সোহিনীর প্রবেশ। এ বার কি অনেক কাজ হবে?

সোহিনী: আগেই তো আলাপ ছিল। দেবের জন্মদিনে গিয়েছি। দেব আমাকে আগেও দুটো ছবিতে অভিনয়ের কথা বলেছিল। চরিত্র পছন্দ হয়নি বলে করিনি। ‘রঘু ডাকাত’-এর প্রচারের সময় দেবই বলেছিল এই বিষয়টা নিয়ে, আমার মনে আছে, ও বলেছিল, ‘তুই তো আমায় না করেছিলি’। দু’বার না বলার পরেও আবার যখন ‘রঘু ডাকাত’-এ আমার কাজ করার জন্য দেব বলে, তখন বুঝেছিলাম দেব আমার ‘না’ বলাকে সম্মান করেছে। পরিবার বা ইন্ডাস্ট্রি— সব জায়গায় দেখেছি মানুষের কত ইগো। ‘না’ বলা মানে লোকে বোঝে প্রত্যাখ্যান বা অসম্মান। দেব এ ভাবে বিষয়টা তো দেখেইনি, উল্টে ওকে বোঝাতে পেরেছিলাম যে আমার চরিত্র পছন্দ হয়নি বলেই করিনি। আমরা দু’জন দু’জনকে শিল্পী হিসাবে সম্মান করি। তবে আলাদা করে ‘দেবের ঘরে’ প্রবেশ বলে আমি মনে করি না।

প্রশ্ন: সে কী! এখন তো ঘর নিয়েই যুদ্ধ। দুর্গাপুজোয় ছবিমুক্তির পরে তো প্রযোজকেরা একে অপরের ঘর নিয়ে লড়াই করে গেলেন…

সোহিনী: এই যুদ্ধ আগেও দেখেছি। তার পরেই দেখি যারা যুদ্ধ করল তারা একসঙ্গে চা খাচ্ছে। ছবি পোস্ট করছে। এর বেশি কিছু বুঝি না। আমি তো আর প্রযোজক নই। তবে ইন্ডাস্ট্রির সমস্যার কথা বাইরের লোক না জানলেই ভাল। আচ্ছা এই বিষয়ে আমার একটা কথা বলার আছে।

প্রশ্ন: কী?

সোহিনী: সারা ক্ষণ তো বলা হয় বাংলা ছবির পাশে দাঁড়ান। আমরা ইন্ডাস্ট্রির লোকজন সবাই কি সবার পাশে আছি? দর্শক বা অনুরাগীরা যদি দেখেন আমরাই পাশে নেই, তা হলে তারা কী ভাবে আমাদের পাশে থাকবে? আগে তো আমাদের সকলকে পাশে দাঁড়াতে হবে, কাছাকাছি আসতে হবে। সেটা দেখে তবেই তো দর্শক আসবে। এর চেয়ে বেশি কী বলব বলুন তো?

প্রশ্ন: আপনি কিন্তু আজকাল কম কথা বলছেন, আরজি করের পর কি সোহিনী নীরব?

সোহিনী: ওই সময় অনেক ধরনের চিন্তাভাবনা চলছিল। আমি ওই সময় বেশি আবেগতাড়িত হয়েছি। পরে অবশ্য অনেক ত্রুটি বিচ্যুতি চোখে পড়েছে। তবে আমার মনে হয় কিছু কিছু সময় একটু চুপ করে থাকা উচিত। সব সময় কথা বললে অন্যের কথা আর কানে আসবে না। কে কী বলছে শুনতেও হবে। আর আমি কোনও রাজনীতিবিদ নই। যদিও আমায় রাজনীতির নানা রকম তকমা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

প্রশ্ন: হ্যাঁ। মানুষ মনে করে বামপন্থী নেত্রী দীপ্সিতা ধর আপনার ননদ, তাই আপনিও বামপন্থী…

সোহিনী: তাতে আমার কিছু এসে যায় না। আমি তো সিপিএম জমানায় বড় হয়েছি। সবার দৌরাত্ম্য দেখেছি। এখনও দেখছি। ভবিষ্যতেও দেখব। আমরা সাধারণ মানুষ। বিপদে পড়লে কোনও দলের সমর্থন পাব না। আমি তো কোনও দলেরই নই।

প্রশ্ন: আপনি অরূপ বিশ্বাসকে ভাইফোঁটা দিলেন না?

সোহিনী: আমাকে তো নিমন্ত্রণ করা হয়নি। নিমন্ত্রণ না করলে কেউ কারও বাড়ি যায়? দেখুন, বেঁচে থাকার জন্য, কাজের জায়গায় থাকার জন্য, যে যার মতো করে পথ বার করে নিচ্ছে। আমরা সবাই দিশাহীন। আমার দুটো পরিচিতি আছে। তো? আমার ওই পরিচয় নিয়ে ঘণ্টা! এখন যদি আমায় বলা হয়, সরকারি হাসপাতালে বেড জোগাড় করে দিতে, আমি পারব না। তা হলে? কী হবে ওই পরিচিতি থেকে? কী যোগাযোগ আমার!

প্রশ্ন: সফল অভিনেত্রীরা কিন্তু নিজেদের সাধারণ নাগরিক বলেন না…

সোহিনী: কী অসাধারণত্ব আছে? ইএমআই ঠিক সময় না দিতে পারলে আমার বাড়িতে ব্যাঙ্ক থেকে লোক চলে আসবে। আমার বাড়ির কর্মীদের প্রতিও আমার দায়িত্ব আছে। মায়ের ওষুধের খরচ আছে। সাধারণ মানুষ ছাড়া আমি কী? আমার না আছে কোটি কোটি টাকা, না কোটি টাকার বাংলো, না কোটি টাকার গাড়ি। আছে বলতে চারটে ফিতে কাটার ‘ইভেন্ট’। আর ইন্ডাস্ট্রিতে কে কত টাকা পায়, সে ধারণাও সকলের হয়ে গিয়েছে। আমি অবশ্য এতেই খুশি। সৎ পথে টাকা রোজগার করতে চাই।

প্রশ্ন: আপনি সফল অভিনেত্রী নন?

সোহিনী: অমিতাভ বচ্চন সফল হয়েও দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন। সাফল্য নিয়ে বাড়াবাড়ি করে লাভ নেই। আজ উঠলে কাল পড়তে হবে। গীতায় বলাই আছে, সুখ-দুঃখ চক্রের মতো ঘোরে। জীবন, সংসার তেমনই।

প্রশ্ন: আপনার সংসারের খবর কী?

সোহিনী: আমি তো খুব সংসারী। গোছানো।

প্রশ্ন: আর শোভন?

সোহিনী: শোভন নিজের মতো করে খুব চেষ্টা করে।

প্রশ্ন: এই যে চারিদিকে শোভন-সোহিনীর সম্পর্ক নিয়ে নানা কুকথা!

সোহিনী: তাই না? দেখুন, আমরা দু’জনেই মানুষের মনে আছি। এটা কিন্তু ভাল। মানুষ আমাদের মনে করছেন, চর্চা করছেন। লোকজনের মাথার মধ্যে আমরা আছি। আসলে সমাজমাধ্যম বিষয়টা একেবারেই পাশ্চাত্য ভাবনায় তৈরি। আমার মনে হয়, এ দেশের মানুষের আয়ত্তে এখনও সেটা আসেনি, আরও কিছু দিন সময় লাগবে।

প্রশ্ন: আপনারা নাকি বিয়ে সংক্রান্ত সমস্যার সমাধানের জন্য পরামর্শদাতার কাছে যাচ্ছেন?

সোহিনী: হ্যাঁ। আমি যাই তো। দেখুন, মনের সমস্যা হলে মনের চিকিৎসার প্রয়োজন। এটা কি খুব নতুন কিছু বললাম? আমার বন্ধুবান্ধব কোনও সমস্যা নিয়ে আমার কাছে এলে, আমি ওদেরও পরামর্শদাতার নম্বর দিয়ে দিই। এটাই তো স্বাভাবিক। আমার যে সবচেয়ে ভাল বন্ধু, তারও জীবনে সমস্যা আছে। তা হলে আমার সমস্যার কথা কী করে তাকে বলব? তা হলে সমস্যার কথা কোথায় বলব? সে ক্ষেত্রে পরামর্শদাতার কাছে তো যেতেই হবে।

প্রশ্ন: আপনার একটা বিষয় খোলা চোখে স্বাভাবিক মনে হয়নি।

সোহিনী: কী বলুন?

প্রশ্ন: আপনি বিয়ের পরিকল্পনা করে আর মুম্বইয়ের ছবিতে কাজ করেননি…

সোহিনী: হ্যাঁ। এটা আমার জীবনের একটা অধ্যায়। একজনকে বিয়ে করব ভেবেছিলাম। দিনক্ষণ ঠিক। প্রস্তুতি নিচ্ছি। এমন এক সময় মুম্বই থেকে এক বিশিষ্ট পরিচালকের ফোন এল। চরিত্রটা খুব ভাল ছিল। কিন্তু আমার তো বিয়ে। আমি কাউকে কথা দিয়েছি। যার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল, সেও বলেছিল, ‘তুই একবার ভেবে দেখ ভাল করে’। আমার মনে হয়েছিল এই কাজটা আগে ঠিক হয়ে আছে। এটাই আমি আগে করব। আমার কথা শুনে সেই পরিচালক আর পরিচালকের স্ত্রী বলেছিলেন, ‘কাকে বিয়ে করছিস? দেখি তো! ছবি পাঠা।’ ওঁরাও অবাক হয়েছিলেন। ওঁরা আমার অডিশন পর্যন্ত নেননি। কিন্তু কথার খেলাপ আমার স্বভাববিরুদ্ধ। আমি সিনেমার উপরে বিয়েকেই বেছে নিয়েছিলাম। যদিও সেই বিয়েটা আমার হয়নি।

প্রশ্ন: আফসোস?

সোহিনী: না, আমি কোনও বিষয়ে আফসোস করি না। ভাবি, আমার আরও ভাল কিছু হবে। তাই এখন এমন হল। তবে আমি কোনও প্ল্যানিংও করি না। এই তো বিয়ের পরিকল্পনা করেছিলাম, সিনেমা পর্যন্ত ছেড়ে দিলাম। সেটাই ভেস্তে গেল। শুধু তিন বেলা কী খাব, সেটাই প্ল্যান করি।

প্রশ্ন: আপনার নতুন ছবি ‘রান্না বাটি’-তে আপনি রাঁধুনি?

সোহিনী: হ্যাঁ, আমি রাঁধতে খুব ভালবাসি। এই রাঁধুনি, যে-সে রাঁধুনি নয়। প্রচণ্ড কায়দা আছে। রান্না সাজানো, সেটা সঙ্গে সঙ্গে ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করা— নিজেকে উপস্থাপনা করার অন্য রকম তাগিদ আছে।

প্রশ্ন: প্রতীমের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?

সোহিনী: প্রতীমের সঙ্গে আলোচনা করে ‘শট’ দেওয়া যায়। ও কিছু চাপিয়ে দেয় না, বরং জিজ্ঞাসা করে, ‘কী ভাবে সংলাপ বলতে চাও?’ কাজটা করতে সুবিধা হয়।

Sohini Sarkar
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy