Advertisement
E-Paper

অশান্ত বাংলাদেশে দুর্গা সেজে শুট করছি, এসে জড়িয়ে ধরলেন বোরখা পরিহিত এক মহিলা : নওসাবা

কলকাতার দুর্গাপুজো তাঁর পছন্দের। প্রথম ছবি আবীর চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ছবির প্রচারে নেই নায়ক। সেই আক্ষেপ থাকলেও ছবি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী কাজ়ী নওসাবা।

সম্পিতা দাস

শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৯:০৪
কাজী নওসাবা আহমেদ।

কাজী নওসাবা আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত।

বাংলাদেশের থিয়েটার কর্মী। বিশেষ ভাবে সক্ষম ছেলেমেয়েদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে থিয়েটার করছেন। এই মুহূর্তে কলকাতার রাস্তায় চারদিকে পোস্টার সেই কাজী নওসাবা আহমেদ ওরফে সাবার। সৌজন্যে অনীক দত্তের ছবি ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’। এ পার বাংলায় প্রথম ছবি, তাও আবার আবীর চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে! আনন্দবাজার ডট কম-এর সঙ্গে আড্ডায় উজাড় করলেন মনের কথা।

প্রশ্ন: কলকাতায় রাস্তায় তো আবীর চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আপনার পোস্টারে ছয়লাপ। কেমন লাগছে?

সাবা: আসলে যেটা আমি স্বপ্ন দেখেছিলাম, সেটা এখন সত্যি হচ্ছে। যদিও আমি শারীরিক ভাবে সেখানে উপস্থিত নেই। কিন্তু মনে হচ্ছে, কলকাতার অলিতে-গলিতে আমার আত্মা ঘুরে বেড়াচ্ছে।

প্রশ্ন: অনীক দত্ত রাগী মানুষ বলে শোনা যায়, অভিভাবকসুলভ বকাঝকাও দিয়ে থাকেন। আপনার অভিজ্ঞতা কেমন?

সাবা: আমি কিন্তু এক বারও বকা খাইনি। সেই অর্থে ভাগ্যবান আমি। স্ক্রিপ্ট পড়ার সময় অল্পবিস্তর বকা খেলেও শুটিংয়ে খুব যত্ন পেয়েছি।

প্রশ্ন: কলকাতায় শুটিং করার অভিজ্ঞতা কেমন?

সাবা: কলকাতাকে একবারে কলকাতাবাসীর মতো করে দেখেছি। লুক টেস্টের সময় যখন কলকাতায় এসেছিলাম তখন চিত্রনাট্যে যে জায়গাগুলোর কথা ছিল, সেগুলো নিজের মতো করে ঘুরে দেখে গিয়েছিলাম। বাকিটা শুটিংয়ের সময় এসে রাত জেগে শহরটা দেখছি। এ ছাড়াও আমার বোনের কলকাতায় বিয়ে হয়েছে। তাই শহরটার সঙ্গে যোগাযোগ ছিলই।

প্রশ্ন: কলকাতার নিউ মার্কেট চত্বরে ও পার বাংলার প্রচুর মানুষ কেনাকাটা করতে আসেন, আপনি ঘুরে দেখেছেন?

সাবা: আমি অতিরিক্ত জামাকাপড় কিনতে মোটেও ভালবাসি না। সেই অর্থে আমি বোরিং। আমার সঙ্গে কেউ যেতে চায় না। আসলে আমি বরাবরই কলকাতা দেখেছি আমার বাবার চোখ দিয়ে। আমি কলকাতার নন্দন হলে গিয়েছি, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল ঘুরেছি, অ্যাকাডেমিতে নাটক দেখেছি। এ ছাড়া বেলুড় মঠে গিয়েছে, লেকের ধারের নিজের মতো সময় কাটিয়েছি। আর কলকাতার রাস্তার দোকানের রকমারি খাবার আমার খুব পছন্দের। তবে ‘যত কাণ্ড কলকাতাতেই’ করতে গিয়ে অনীকদার চোখ দিয়ে শহরটা দেখলাম।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

প্রশ্ন: কলকাতায় কোনও বন্ধু হল?

সাবা: আমি শুটিং করতে এসে রাস্তা নিজের ব্যাকপ্যাকটা নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে পড়তাম। আপনাদের শহরের পথকুকুরেরা সব আমার বন্ধু হয়ে উঠেছিল। আমি যখন কলকাতায় গিয়েছিলাম তখন দুর্গাপুজোর সবে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। আসলে ফাইন আর্টসের ছাত্রী। তাই এই ধরনের সাংস্কৃতিক বিষয়ে বিশেষ আগ্রহ আছে।

প্রশ্ন: দুর্গাপুজো উপভোগ করেন?

সাবা: আমি পর পর তিন বার পুজোয় কলকাতায় ছিলাম। এখানকার পুজোমণ্ডপগুলো ভীষণ সৃজনশীল। আমাদের বাংলাদেশেও কিন্তু দুর্গাপুজোর সময় উৎসব শুরু হয়ে যায়। ঢাকঢোল নিয়ে নেমে যাই আমরা।

প্রশ্ন: পুজোয় নতুন জামা পরেন?

সাবা: হ্যাঁ, পরব না তাই হয়? প্রতিবছর পুজোয় আমি দুর্গাকে নিয়ে একটা করে থিম শুট করি। গত পাঁচ বছর ধরে করছি। দুর্গা মানে শক্তি। আর এটাই তো প্রকৃতি রূপ। আর আমরা যে ভাবে প্রকৃতিকে নষ্ট করছি দুর্গাপুজোর একেবারে সঠিক সময় নারী অধিকার, প্রকৃতির অধিকার নিয়ে কথা বলার। দুর্গাপুজো আমরা বাংলাদেশিদের জন্য বিশেষ ব্যাপার।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতেও দুর্গা সেজে রাস্তায় ঘুরতে পারেন?

সাবা: হ্যাঁ, একেবারেই পারি। এই জুলাই আন্দোলনের পর পরও দুর্গাকে নিয়ে একটা শুট করেছি। আসলে আমাদের বিক্ষিপ্ত ঘটনাকে বড় করে দেখানো হচ্ছে। আমি দুর্গা সেজে শুট করছি, কোনও বাউন্সার ছাড়াই। বোরখা-পরা মহিলা এসে জড়িয়ে ধরছেন। এটা খুব স্বাভাবিক বিষয়। আমরা এ ভাবেই থাকি। ছোটবেলায় তো সর্দি-কাশি হলে তুলসী পাতা খেতাম। দাদুর বাড়িতে তুলসী গাছ ছিল। এখন দেখি এত কথা। পুরাতন ঢাকায় কিন্তু দুর্গাপুজো আসছে মানে, ২৩ তারিখ থেকে সব বন্ধ।

প্রশ্ন: আবীর চট্টোপাধ্যায় মতো তারকার সঙ্গে প্রথম ছবি কী ভাবে ‘আইস ব্রেক’ হল?

সাবা: আমি নিজে খুব চুপচাপ। আর আবীরদা শুধু ও পার বাংলায় নয়, আমাদের এখানেও বড় তারকা। আমি আসলে শেখার মন নিয়ে সেখানে গিয়েছিলাম। আগে থেকে কোনও ধারণা নিয়ে যাইনি। বরং নিজেকে সঁপে দিয়েছিলাম। আবীরদা প্রথমে ভেবেছিল, নায়িকা তো কথাই বলে না! প্রথম দিকে আমি কথা বলতেই পারছিলাম না সত্যি। লজ্জা বা ভয় নয়, আমি মানুষটা এমনই, মিশতে সময় লাগে। কিন্তু আবীরদা এমন চমৎকার মানুষ যে খুব সহজ করে নিয়েছিল। ওঁর টিমের সকলে এত ভাল। আমি আসার আগে আবীরদার দুই বাউন্সারকে রাখি পরিয়ে এসেছিলাম। আর সোহাগ সেন, বেণীদি, অনীকদা এঁরা অত্যন্ত যত্নে-আদরে রেখেছিলেন আমাকে।

প্রশ্ন: আবীর নাকি তাঁর সহ অভিনেত্রীর মুড বুঝতে পারেন?

সাবা: আসলে আবীরদার সঙ্গে সব থেকে বেশি কথা হত ওঁর মেয়েকে নিয়ে। আমরা দু’জন একে অপরের মেয়েকে নিয়ে গল্প করতাম। আবীরদা মাঝেমধ্যে আমাকে বলতেন, তুই তো একদম ‘তারে জ়ামিন পর’-এর মতো বলছিস!

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

প্রশ্ন: কেন এমন নাম?

সাবা: আসলে আমি ঢাকায় বিশেষ ভাবে সক্ষম বাচ্চাদের নিয়ে থিয়েটার করি। তাই আবীরদা সঙ্গে বেশিরভাগ সময়ে তাঁর মেয়ের বিষয় নিয়েই আলোচনা করতেন। তাঁর মেয়ে শাহরুখ খানের কোন গান শুনে উত্তেজিত হয়ে যায়, এমন নানা কথা আলোচনা হত আমাদের। আমার আগ্রহের বিষয়টা বুঝতে পেরেছিলেন। তেমন ভাবেই কথা বলতেন।

প্রশ্ন: আবীর তো ছবির প্রচারে থাকছেন না। আপনার একার কাঁধে দায়িত্ব পড়ে গেল?

সাবা: আমার ভাগ্যটাই উদ্ভট। ঢাকায় সবাই আপ্লুত যে, আবীরদার সঙ্গে কাজ করছি! আর প্রচারেই উনি নেই। যদিও এটা ওঁর বিষয়, সেটা নিয়ে মন্তব্য করতে পারি না আমি। আবীরদা একটা বড় ফ্যাক্টর, উনি থাকলে ছবিটার জন্য ভাল হত। তবে একটা কথা বলব, আবীরদা যেমন ভাল অভিনেতা, তেমন অনীকদা নিজেই একটা ব্র্যান্ড। ওঁর জ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত। উনি তো যে কাউকে নিতে পারতেন। কিন্তু উনি তাঁর বিচক্ষণতা দিয়ে বেছে নিয়েছেন আমাকে। আসলে সাবার (সিনেমার চরিত্র) চরিত্রটা আমার মতো। এটা বলব, আবীরদা থাকলে বাড়তি বোনাস হত। উনি নেই, কিন্তু ছবির মানের দিকে ফারাক পড়বে না। একজন সহযোদ্ধা নাই থাকতে পারেন তাঁর কাজের কারণে। তা বলে ছবির প্রচার তো আটকে থাকতে পারে না।

প্রশ্ন: সিনেমায় গোয়েন্দাদের সহকারী সবসময় পুরুষ, সেই জায়গায় অনীক দত্ত কি ধারা ভাঙলেন?

সাবা: উনি যে আমাকে এমন একটা চরিত্র দিয়েছেন তার জন্য খুবই খুশি। আমি তো বলেছিলাম, দাদাকে ফেলুদা বানাও আর তোপসেকে তাপসী বানিয়ে দাও। বর্তমান সময়ে পৃথিবীর যে দিকে এগোচ্ছে, আমরা যদি একটা লিঙ্গসাম্যের জায়গায় না আসি তা হলে দর্শক হারাব। ছেলেরাই সব করবে আর মেয়েরা শুধু মিষ্টি হাসি হাসবে, বর্তমান প্রজন্ম আর ওই জিনিসটা নেবে না।

প্রশ্ন: এই নতুন বাংলাদেশে নারী-পুরুষের সমতা রয়েছে?

সাবা: বাংলাদেশ এই মুহূর্তে হামাগুড়ি দিচ্ছে। এই সময়টা সবার মধ্যে একটা তাড়াহুড়ো কাজ করছে। তাই সবাইকে একটু ধীর-স্থির হওয়ার সময় দিতে হবে। আমাদের সামগ্রিক ভাবে এগোতে হবে। আর সেটা পড়শি দেশ কিংবা দূরের দেশকে বাদ দিয়ে হবে না। আমার পাশের দেশ নেপাল ভাল নেই, আমরা কিন্তু কষ্টে আছি। যে দেশে হিমালয় রয়েছে, এত মন্দির এত রকম ঐতিহ্যের খেলা, সেখানে এই ধরনের অস্থিরতা, রক্তপাত দেখতে কি ভাল লাগে! আমাদের পুরাতন ঢাকায় কিন্তু এখন প্রতিবেশী বিপদে পড়লে লোকে এগিয়ে আসে। নতুন ঢাকায় হয় না। নতুন কলকাতাতেও দেখছি এই অভাবটা। হ্যাঁ, এটা সত্যি যে, বাংলাদেশ খুব স্পর্শকাতর অবস্থায় রয়েছে এখন। তাই খুব সংবেদনশীলতার সঙ্গে সবটা সামাল দিতে হবে।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

প্রশ্ন: অনীক দত্ত আপনাকে খুঁজে পেলেন কী ভাবে?

সাবা: বাবার মৃত্যুর পর তাঁকে মিস্ করতাম। বাবার উদ্দেশে বেশ কিছু চিঠি লিখতাম ফেসবুকে। সেখানে অনীকদা মন্তব্য করতেন। আমি দেখতাম। কিন্তু বুঝিনি ইনি পরিচালক অনীক দত্ত। ফেসবুকে উনি একদিন লম্বা টেক্সট করেন, তখনও বিশ্বাস করিনি। পরে বন্ধুরা বলে, ইনি কলকাতার পরিচালক অনীক দত্ত।

প্রশ্ন: কলকাতায় ছবি করার ক্ষেত্রে জয়া আহসান, পরীমণিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা হবে কি?

সাবা: জয়াদি, পরীমণি এঁরা তো তারকা। আমি খুব সাধারণ। নিজের থিয়েটার নিয়ে ব্যস্ত থাকি। তবে সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকা ভাল। আমি তো জয়া আপার প্রেমে পাগল। ওঁর ছবি নির্বাচন থেকে সৌন্দর্যের কোনও তুলনা হয় না। আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে ফারিদা আখতার ববিতা সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গে কাজ করেছেন। ওঁর পর পথপ্রদর্শক হলেন জয়া আহসান। এঁরা আমাদের নতুনদের দিশা দেখিয়েছেন। আমার সকলের প্রতি শ্রদ্ধা থাকবে। আমাকে তাঁদের থেকেও ভাল করতে হবে।

Celebrity Interview Anik Dutta Joto Kando Kolkatatei
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy