২০২৩ থেকে ‘পুজো’ শব্দটাই অর্থহীন। ওই বছর থেকে আমার জীবনে একের পর মৃত্যুমিছিল। ২০২৩-এ বাবা আর শ্বশুরমশাই একসঙ্গে বিদায় নিলেন। ২০২৪-এ ফিরোজ় চলে গেল। ৩০ সেপ্টেম্বর ওর প্রয়াণের এক বছর।
শেষ পুজোয় আমায় ৪৭টা কুর্তি, ১৩টা শাড়ি দিয়েছিল ফিরোজ়। কেন? যাতে এক পোশাক পরতে না হয়! ফিরোজ় এ রকমই ছিল। আমার জন্য রকমারি রঙিন পোশাক। ওর জন্য সারা ক্ষণ সেজেগুজে থাকতে হত। গালে একটা ব্রণ হলেও মুখ ভার। কালো দাগ হয়ে যাবে তো! চোখে হারাত আমায়। ও গেল, আমার জীবনের সমস্ত রং যেন সঙ্গে নিয়ে চলে গেল। ফিরোজ়ের মতো করে আমার কে আর সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখবে? তাই সাদা পোশাক বেছে নিয়েছি। আমার সাদা পোশাক আমার মতোই রংহীন।
আমার বাবা খুব শৌখিন ছিলেন। পুজো-আর্চায় মন। আর রকমারি পাঞ্জাবির প্রতি ঝোঁক। বাবার নানা রকমের সাদা পাঞ্জাবি ছিল। সেগুলো কেটে এখন সাদা জামা বানাই।
ছোট থেকে বাবার দৌলতেই আমার পুজো জাঁকজমকের। রাঁধতে ভালবাসি। বাবা বেলতলা সংঘের পুজোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ওখানকার অষ্টমীর ভোগ আমাদের বাড়ি থেকেই যায়। সেই রান্না আমিই করেছি। ওই দিন রকমারি নিরামিষ রান্না রাঁধি। খেতে খুব ভালবাসত ফিরোজ়। আমার রাঁধা প্রত্যেকটা রান্না পাত পরিষ্কার করে খেত। অন্যান্য দিন ঢালাও আমিষের আয়োজন। মাছ, মাংসের এলাহি পদ।
অনেকেই অবাক হন, ফিরোজ় কী করে আমাদের পুজো এত উপভোগ করত?
ও যেন সর্বধর্মসমন্বয়ের মূর্ত প্রতীক। দুর্গাপুজো, বড়দিন ওর সবচেয়ে প্রিয় উৎসব। প্রত্যেক শীতে মেয়েকে নিয়ে বড়দিনের দিন পার্ক স্ট্রিটে হাঁটতে যাবেই। আমি যেতে পারতাম না। লোকে ঘিরে ধরত বলে। একই ভাবে পুজোয় ও কলকাতায়। ওই সময় আর কোথাও, কিছুতেই থাকবে না!
আরও পড়ুন:
আমি ভেবে কূল পাচ্ছি না, এত আলো ছেড়ে গত বছর থেকে ফিরোজ় আছে কী ভাবে?
আমাদের রাজারহাটের অনেকটা ভিতরে একটি সাঁওতাল পল্লি আছে। এ বছর মহালয়ায় ফিরোজ়কে মনে করে ওই পল্লির বাসিন্দাদের পোশাক দিয়েছি। ৩০ সেপ্টেম্বর ফিরোজের পছন্দের জায়গা যেমন, হায়দরাবাদ, বর্ধমান, কলকাতা, মুম্বইয়ে কিছু দরিদ্র মানুষ, অনাথ শিশুদের যত্ন করে খাওয়ানোর ইচ্ছে আছে। যদিও সব জায়গায় একদিনে আমার যাওয়া তো সম্ভব নয়। তাই কলকাতা ছাড়া বর্ধমানে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। গত বছর পাড়ার পুজোর অনুষ্ঠানে ছিলাম। উদ্যোক্তারা বলেছিলেন, ‘দাদা চলে গেলেন, এ বছরের অনুষ্ঠান না হয় থাক দিদি।’ রাজি হইনি। ফিরোজ়ের এ সব একদম পছন্দ নয়।
কোথায় আছে জানি না। কোনও ভাবে যদি এ সব দেখে ফেলে! বড্ড কষ্ট পাবে। ওর জন্য এটুকু করতে পারব না?