Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Anik Dutta

Anik Dutta: আবীরের বদলে ‘সত্যজিৎ রায়’ জিতু, মনে হল শাপে বরই হয়েছে: অনীক দত্ত

শ্যুট শেষ করে তৃপ্ত অনীক? যে ভাবে ভেবেছিলেন, সে ভাবেই ছবি বানাতে পেরেছেন?

'সত্যজিৎ' জিতু কমলের কাজে তৃপ্ত পরিচালক অনীক দত্ত

'সত্যজিৎ' জিতু কমলের কাজে তৃপ্ত পরিচালক অনীক দত্ত

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ১৮:৫৮
Share: Save:

বুধবার শেষ শ্যুটিং অনীক দত্তের ‘অপরাজিত’ ছবির। এই ছবিতে সত্যজিৎ রায়ের ‘পথের পাঁচালী’ তৈরির দামি মুহূর্ত বন্দি। কিংবদন্তি পরিচালক তার কেন্দ্রে। কাঠামো গড়ে দিয়েছেন অনীক। নিজের অভিনয় গুণে তাতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন জিতু কমল। স্বাভাবিক ভাবেই যত্নে তৈরি কাঠামোকে ছেড়ে যাওয়ার দুঃখ ঘিরে ফেলেছে জিতুকে। একই অনুভূতি কি পরিচালকেরও?
সকাল সাড়ে ৯টায় আনন্দবাজার অনলাইন ফোনে ধরেছিল তাঁকে। অনীক তখন সেটে যাওয়ার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। তারই ফাঁকে বললেন, ‘‘ছবিটি অবশ্যই বিশেষ আমার কাছে। তবে ছবি শেষ হলে আমার খুব আনন্দ হয়। কারণ, ভোরে ওঠা, শ্যুটে যাওয়ার ঝঞ্ঝাট থেকে মুক্তি পাই।’’ সঙ্গে ঈষৎ ব্যঙ্গোক্তি— “কলকাতায় কাজ করাই মস্ত ঝামেলা। প্রতি দিন লড়াইয়ে নামতে হয়। যত দিন যাচ্ছে সেই লড়াই, সেই ঝামেলা বাড়ছে বই কমছে না। সে সব থেকেও অব্যাহতি মিলবে।”

'অপরাজিত'-র সেট থেকে

'অপরাজিত'-র সেট থেকে

অনীক তার পরেই জানিয়েছেন, শ্যুটিং শেষ মানে ছবির একটি অংশের কাজ শেষ হওয়া। ডাবিং, প্রোডাকশনের কাজ, প্রচার— অনেক কিছুই এখনও বাকি। ফলে, তাঁর ছুটি হয়নি। পরিচালকের মতে, নির্দিষ্ট সময়ে এবং নির্দিষ্ট খরচে পিরিয়ড ড্রামা বানানো খুবই কঠিন কাজ। সে ক্ষেত্রে অনেক ফন্দি-ফিকির আঁটতে হয়। উদাহরণ হিসেবে অনীক জানালেন, ছবিতে লন্ডনের অনেক অংশের শ্যুট কলকাতাতেই হয়েছে। কিন্তু দেখাতে হয়েছে অবিকল লন্ডনের মতোই। তবে একটা বিষয়ে অনীক সন্তুষ্ট— যাঁকে নিয়ে ছবি, তিনিও এ ভাবেই কম বাজেটে, কম সময়ে সেরা ছবি উপহার দিতেন দর্শকদের। এই শহরের মেজাজ, মগজ, বুদ্ধিমত্তাকে হাতের তালুর মতো চিনতেন সত্যজিৎ রায়। তাই সারা শহরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে, ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োয় সেট ফেলে চিত্রনাট্যের যাবতীয় চাহিদা পূরণ করতেন।
এ ভাবে ছবির শ্যুটিং জীবন যাপনে কতটা বদল আনে?
জবাবে ‘অপরাজিত’র পরিচালক ভাগ করে নিয়েছেন তাঁর পূর্ব অভিজ্ঞতা। বলেছেন, ‘‘খুব বড় বদল না এলেও কিছু তো ছাপ পরেই জীবনচর্চায়। যেমন, আমার প্রথম ছবি ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর সময়ে প্রতি দিন শ্রীরামপুরে পৌঁছতে ভোর তিনটেয় উঠতে হত। স্থানীয় কোনও হোটেল ভাড়া করে সকলে মিলে থাকব, সেই অর্থ আমাদের ছিল না। এ দিকে সূর্যের আলোয় শ্যুট সারতে হবে। তাই রোজ আমরা ভোর তিনটেয় উঠে চারটেয় বেরিয়ে পড়তাম। ছবি শেষ হওয়ার পরেও বেশ কিছু দিন সেই ভোরে ওঠার অভ্যেস রয়ে গিয়েছিল।’’

জিতু কমল

জিতু কমল

শ্যুট শেষ করে তৃপ্ত অনীক? যে ভাবে ভেবেছিলেন, সে ভাবেই ছবি বানাতে পেরেছেন?
পরিচালকের সাফ জবাব, কোনও শিল্পী বা পরিচালক কখনও নিজের কাজে তৃপ্ত হন না। তিনিও তৃপ্তি পাননি। অনীকের দাবি, খোদ সত্যজিৎ রায় পরে আবার ‘পথের পাঁচালী’ দেখেছিলেন। এবং আফশোসেও ভুগেছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল, ছবিতে অনেক ভুল রয়ে গিয়েছে। আবার সুযোগ পেলে সেগুলো শুধরে নিতেন। প্রথম ছবির থেকে দ্বিতীয় ছবি ‘অপরাজিত’ তুলনায় তাঁর চোখে মন্দের ভাল। কারণ, তত দিনে তিনি এবং তাঁর দল বিষয়টির সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন। অনীকের দাবি, ছবির মেজাজ বা উদ্দীপনার জোরে তিনি কিংবদন্তি পরিচালকের সেই উদ্যমকেই এ ছবিতে ধরার চেষ্টা করেছেন। নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে গিয়ে পরিচালকের দাবি, ‘অপরাজিত’ করতে গিয়ে বুঝেছেন, সত্যজিতের আমলে চার-পাঁচ জন নতুন ছেলে ভারী ক্যামেরা কাঁধে কত অসুবিধের মধ্যে দিয়ে ‘পথের পাঁচালী’ তৈরি করেছিলেন। ও ভাবে কেউ কোনও দিন কাজ করেননি। দিনের বেলা বাইরে শ্যুট করতেন সত্যজিৎ এবং তাঁর দল। রাতের সেট পড়ত স্টুডিয়োয়। সেই ভাবেই তিনিও কাজ করেছেন।
কেমন কাজ করলেন জিতু? পরিচালক অকপট— “কাজের চাপে আবীর চট্টোপাধ্যায় সময় দিতে পারলেন না। বদলে জিতু কমল এলেন। প্রথমে বিষয়টি নিয়ে আমিও দ্বিধায় ভুগেছি। পরে দেখলাম, আবীরের জায়গায় জিতুর উপস্থিতি আদতে আমার ক্ষেত্রে শাপে বর হয়েছে।” অনীকের কথায়, ‘‘আমি একা নই, সেটের প্রত্যেক অভিনেতা থেকে কলাকুশলী ওঁর কাজের প্রশংসা করেছেন। জিতু চরিত্রের জন্য প্রচণ্ড খেটেছে। সোমনাথ কুণ্ডু ওঁর বাহ্যিক রূপ বদল ঘটিয়েছেন। আর ভিতরে বদল এনেছেন অভিনেতা নিজে। সারাক্ষণ চরিত্র হয়ে থেকেছেন। সত্যজিতের চাউনি, চলাফেরা, কথা বলার ভঙ্গি রপ্ত করেছেন। এই খাটনি, এই অধ্যবসায় এক কথায় অনবদ্য।’’
আর সত্যজিতের বিজয়া? পরিচালকের বক্তব্য, তিনি জানতেন সায়নী ঘোষ বিজয়া রায় হয়ে উঠতে পারবেন। তাই ২০ জনের লুক টেস্টের পরে সায়নীকেই বেছেছিলেন এই চরিত্রে।
শেষ পাতে হাসতে হাসতে সংযোজন অনীকের— দর্শকদের ছবি ভাল লাগলে বুঝবেন, তিনি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। নইলে জনতার একটি মারও বাইরে পড়বে না!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Anik Dutta Jeetu Kamal Tollywood
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE