Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Bappi Lahiri

Bappi Lahiri Death: ‘তানজ়ানিয়াতে গিয়ে আলুপোস্ত খাইয়েছিলেন’

ভীষণ স্পোর্টিং একজন মানুষ ছিলেন। ২০১১-১২ সালে ফিল্মসিটিতে এক রিয়্যালিটি শোয়ের শুটিংয়ে আমি আর বাপ্পিদা দু’জনেই ছিলাম। পাশের এক ফ্লোরে ছিল সলমন খান।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

বাবুল সুপ্রিয়
শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৯:২৫
Share: Save:

গীতিকার আনন্দ বকশি প্রথম বার আমাকে বাপ্পি লাহিড়ীর বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিলেন। তখন আমার ১৯-২০ বছর বয়স। বাপ্পিদাকে ‘চলতে চলতে মেরে ইয়ে গীত’ শুনিয়েছিলাম। সেখানে তখন বাপ্পিদার বাবা- মা অপরেশ ও বাঁশরী লাহিড়ীকে প্রণাম করে বলি, আমি নির্মল চন্দ্র বড়ালের নাতি। ওঁরা খুব খুশি হন। সে বার অবশ্য মুম্বই থেকে ফিরে এসেছিলাম।

তার দু’বছর পরে ’৯২ সালে চাকরিবাকরি ছেড়ে যখন ফাইনালি বম্বেতে চলে আসি, তখন অপরেশ জেঠুর কাছেই আবার যাই। এটা আজ স্বীকার করতে কোনও অসুবিধে নেই, ভিতরে তখনই ঢুকতে পারতাম, যখন জেঠু বলতেন নির্মল চন্দ্র বড়ালের নাতি এসেছে। বাপ্পিদার সঙ্গে তখন দেখাও হত না। অবশ্য আমাকে প্লেব্যাকে প্রথম সুযোগ বাপ্পি লাহিড়ীই দেন। রাম মুখোপাধ্যায়ের ‘রক্ত নদীর ধারা’ ছবিতে। এর পর উনি আমাকে ঋষি কপূরের ‘প্রেমযোগ’ ছবিতে সুযোগ দেন। সম্পর্কটা পারিবারিক হয়ে যায় তার পর থেকে। কত বিদেশ সফর করেছি একসঙ্গে। ১৯৯৫ এ আফ্রিকায় শো করতে গিয়েছিলাম। মনে আছে, তানজ়ানিয়াতে এক বাঙালি দম্পতিকে ধরে আলুপোস্ত আনানো হয়েছিল। দারুণ দিলদরিয়া ছিলেন মানুষটা। মিউজ়িক ছাড়া আর কিছু ভাবতেন না দাদা।

সব জায়গায় দেখছি ওঁকে ডিস্কো কিং বলা হচ্ছে, এতে কিন্তু ওঁর গানের পরিধিকেই ছোট করা হচ্ছে। উনি ডিস্কো কিং তো আশির দশকের মধ্যভাগে বা শেষ দিকে। কিন্তু ‘জ্বলতা হ্যায় জিয়া মেরা’, ‘চলতে চলতে’, ‘পেয়ার মাঙ্গা হ্যায় তুমহি সে’, ‘ইয়ে নয়না ইয়ে কাজল’ এ সব গান তো ওঁর আগে তৈরি করা। ইডিএম অর্থাৎ ইলেকট্রনিক ডান্স মিউজ়িকের সঙ্গে আমাদের পরিচয় করিয়েছিলেন বাপ্পিদা। ‘ডিস্কো ডান্সার’ দিয়ে যার শুরু। ‘তম্মা তম্মা’য় ইডিএম-এর উচ্চতাটা দেখিয়েছিলেন। বাপ্পি লাহিড়ীর একটা ইউনিক গায়ন ভঙ্গি ছিল, যেমন ছিল আর ডি বর্মণের। ওঁরা কিন্তু খুব বেছে, সে সব ছবিতেই গেয়েছেন যেটা ওঁদের গাওয়ার মতো বলে মনে করতেন।

ভীষণ স্পোর্টিং একজন মানুষ ছিলেন। ২০১১-১২ সালে ফিল্মসিটিতে এক রিয়্যালিটি শোয়ের শুটিংয়ে আমি আর বাপ্পিদা দু’জনেই ছিলাম। পাশের এক ফ্লোরে ছিল সলমন খান। ও দেখা করতে এলে আমি, সাজিদ-ওয়াজিদ ওকে ঘিরে দাঁড়িয়েছিলাম। বাপ্পিদা ভ্যানিটি ভ্যান থেকে যেই নামলেন সলমন দৌড়ে গিয়ে বাপ্পিদাকে জড়িয়ে ধরে হাঁটু মুড়ে বসে বলল, ‘বাপ্পিদা মুঝে সোনা চাহিয়ে’। বাপ্পিদা হাসতে হাসতে বললেন, ‘জো চাহিয়ে লে লো’।

মিঠুনদা (চক্রবর্তী) আর বাপ্পিদার অসাধারণ বোঝাপড়ারও সাক্ষী থেকেছি। ১৯৯৯ এর ৩১ ডিসেম্বরে ফ্লরিডাতে ডিজ়নিল্যান্ডের ভিতরে বিখ্যাত এক হোটেলে বাপ্পিদা আর মিঠুনদার সঙ্গে আমিও ছিলাম। বাপ্পিদা তো খেতে ভালবাসতেনই, আমিও ওজন বাড়িয়ে ফিরেছিলাম ওখান থেকে। সাত দিন ছিলাম ওখানে, রোজ পিকনিক হত। হোটেলের লবিতে বাপ্পিদা পিয়ানো বাজাচ্ছেন, আমি গাইছি, মিঠুনদাও গাইছেন। এ রকম দুরন্ত আন্ডারস্ট্যান্ডিং না থাকলে বোধহয় এত কালজয়ী হিটের সৃষ্টি হয় না।

বাপ্পিদা মাইকেল জ্যাকসনের সঙ্গে বহুবার দেখা করেছেন, তাই জ্যাকসনের গানের ভাষাতে বলব, গন টু সুন...

অনুলিখন: পারমিতা সাহা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bappi Lahiri Bappi Lahiri Death Babul Supriyo
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE