Advertisement
E-Paper

এই তো ছিলেন আমাদের সঙ্গে, গেলেন কোথায় ঋতুপর্ণ?

এই ডকুমেন্টারির কথক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং মীর। ঋতুপর্ণর লেখা ‘ফার্স্ট পার্সন’-এর অংশ পড়েছেন তাঁরা। সেই কথনের আধারে কখনও ইন্দ্রাণী পার্কের বাড়ি ‘তাসের ঘর’। কখনও প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের টিপু সুলতান মসজিদ। কখনও বা সাউথ পয়েন্ট।

স্বরলিপি ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ১৫:১৭
ঋতুদা বলেছিল, মেয়েটা আমাকে ছেড়ে চলে গেল...।

ঋতুদা বলেছিল, মেয়েটা আমাকে ছেড়ে চলে গেল...।

‘মেয়েদের সাইকোলজি খুব ভাল বুঝত ও।’

‘ও আমাকে আইডল ভাবত। বহু বার বলেওছে সে কথা।’

‘ও যখন সিনেমা করতে এল, ওর জন্যই বহুকাল পরে আবার যেন বাংলা সিনেমার দিকে লোকে তাকাল।’

‘বছরের তিন-চার মাস ওর সঙ্গে হয়তো কথাই বলতাম না।’

আরও পড়ুন, ‘সবাই দেখা হলে বলেন, খুব ভাল অভিনয় কর, কিন্তু কেউ ডাকেন না’

বক্তা? যথাক্রমে শর্মিলা ঠাকুর, অপর্ণা সেন, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়। আর শর্মিলা, অপর্ণা, সৌমিত্র, প্রসেনজিতের ‘ও’ হলেন প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষ। সৌজন্যে সঙ্গীতা দত্তর তৈরি তথ্যচিত্র ‘বার্ড অব ডাস্ক’।


অপর্ণাকে সিন বুঝিয়ে দিচ্ছেন ঋতুপর্ণ।

শুক্রবার সন্ধে। নন্দন ২-এর প্রেক্ষাগৃহের সব আসন পূর্ণ। অনেকে সিঁড়িতে বসেছেন, অনেকে আবার দাঁড়িয়ে। বড় স্ক্রিনে একের পর এক তখন শর্মিলা, অপর্ণা, প্রসেনজিত্ বলে চলেছেন তাঁদের কথা। ঋতুর কথা। আর ঋতুর ম্যাজিক বোধহয় এখানেই। টানা ৯৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতেও আপত্তি নেই কারও।

সঙ্গীতা ছিলেন ঋতুপর্ণর বন্ধু। না, ছিলেন নয়। আছেন। সঙ্গীতা এখনও ঋতুপর্ণর বন্ধু। ‘‘ঋতুর মতো বন্ধু আমার আর কেউ নেই। হবেও না। আসলে এই শহর মানে কলকাতার সঙ্গে ওর ভালবাসার সম্পর্কটাই দেখাতে চেয়েছি,’’ বলতে বলতে চোখের কোণে জল এল পরিচালকের।

আরও পড়ুন, ‘বাংলা সিনেমা দেখি না,বাঙালি হিসেবে বলাটা খুব লজ্জার’

এই ডকুমেন্টারির কথক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় এবং মীর। ঋতুপর্ণর লেখা ‘ফার্স্ট পার্সন’-এর অংশ পড়েছেন তাঁরা। সেই কথনের আধারে কখনও ইন্দ্রাণী পার্কের বাড়ি ‘তাসের ঘর’। কখনও প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডের টিপু সুলতান মসজিদ। কখনও বা সাউথ পয়েন্ট। ঋতুকে ছুঁয়ে থাকা ঘর, ডায়েরি, সিনেমার ফ্রেম মনকেমনের গন্ধ ছড়ায়। ঋতুকে চিনতেন, তাঁকে কাজের সূত্রে বা কাছ থেকে জানতেন এমন বহু মানুষের সাক্ষাত্কারের টুকরো কোলাজে ভরে আছে এই তথ্যচিত্র।


বাবা-মায়ের সঙ্গে ঋতুপর্ণ।

‘চোখের বালি’র বিনোদিনী তিনিই করছেন। এমনটাই জানতেন নন্দিতা দাশ। কস্টিউম তৈরি। শুটিং শুরু হবে। হঠাত্ জানতে পারেন, তিনি নন। সে চরিত্রে ঐশ্বর্যা রাই বচ্চনকে কাস্ট করেছেন ঋতুপর্ণ। ঐশ্বর্যাকে কাস্ট করলে তাঁর ছবি জাতীয় তথা আন্তর্জাতিক স্তরে পৌঁছবে তা ঋতুপর্ণ জানতেন। তাই হয়তো সেই সিদ্ধান্ত। স্পষ্ট জানালেন নন্দিতা। কঙ্কনা সেনশর্মা ছুঁয়ে গেলেন আড্ডার স্মৃতি। ঋতুদা কোথাও ঢুকলেই সব ক্যামেরার ফোকাসে থাকতেন তিনিই, মনে করিয়ে দিলেন মীর।

আরও পড়ুন, পরকীয়া মানেই গুজগুজ নয়, সম্মানেরও হতে পারে, বললেন কৌশিক

‘আরেকটি প্রেমের গল্প’-এ একটি দৃশ্যে মেয়ের মেকআপ করতে হয়েছিল ঋতুপর্ণকে। ‘‘চার ঘণ্টা লেগেছিল ঋতুদার ওই মেকআপ নিতে। তার পর যখন ফ্লোরে এলেন আমরা চিনতে পারছিলাম না। গায়ে হাত দিয়ে কথা বলতে পারছিলাম না কেউ। কারণ ওই মহিলাকে আমরা চিনি না। শুট শেষ। মেকআপ তুলছে। মাস্কারা মাখামাখি হয়ে আছে মুখে। আমাকে বলল, মেকআপ রুমের দরজাটা বন্ধ করে দে। তখনই বুঝেছি কোনও গণ্ডগোল। দরজা বন্ধ করতেই হাউহাউ করে কান্না। কী কথা হয়েছিল, সেটা ব্যক্তিগতই থাক। কিন্তু মোদ্দা ব্যাপারটা হল, ঋতুদা বলেছিল, মেয়েটা আমাকে ছেড়ে চলে গেল।’’ স্মৃতির পাতায় হাত বোলালেন কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।


প্রিয় বন্ধু প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ঋতুপর্ণ।

ঋতুপর্ণকে নিয়ে ডকুমেন্টারি, আর সেখানে প্রয়াত পরিচালকের যৌন পছন্দের কথা আসবে না, তা তো হয় না। সঙ্গীতা দক্ষ হাতে ছুঁয়ে গিয়েছেন সে সব প্রসঙ্গও। সাদা-কালো ফ্রেমে কখনও স্কুলের ঋতুপর্ণ। কখনও বা মা-বাবা-ভাইয়ের সঙ্গে এই সে দিনের কোঁকড়া চুলের ছেলেটা। দেখতে দেখতে মনে হতে পারে, এই তো ছিলেন আমাদের সঙ্গে। গেলেন কোথায়?

ইতিমধ্যেই বহু চলচ্চিত্র উত্সবে সম্মান পেয়েছে ‘বার্ড অব ডাস্ক’। শুক্রবার থেকে নন্দন ২-এ প্রদর্শন শুরু হয়েছে।

(সিনেমার প্রথম ঝলক থেকে টাটকা ফিল্ম সমালোচনা - রুপোলি পর্দার বাছাই করা বাংলা খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদনের সব খবর বিভাগ।)

Rituparno Ghosh ঋতুপর্ণ ঘোষ Tollywood Celebrities Bengali Movie
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy