দর্শনা-অঙ্কিতা-শতরূপা-বিদিতা
প্রথম দিকে হঠাৎ পাওয়া ছুটির মেজাজ থাকলেও টানা ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা হওয়ার পরেই চিন্তান্বিত অভিনেত্রী দর্শনা বণিক। মার্চের মাঝামাঝি নতুন ছবির কাজে মুম্বই যান তিনি। কাজ শেষ হলেই ফিরে আসবেন, এমনই পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ডাকা লকডাউনের সিদ্ধান্তে আটকে পড়েন মুম্বইয়ে। এই ঘটনায় প্রাথমিক ভাবে দিশেহারা হলেও পরমুহূর্তেই পরিস্থিতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিয়েছেন অভিনেত্রী। ‘‘এত দিন আমাকে আগলে রেখেছিল পরিবার। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাবলম্বী হতে শেখাল। রান্না থেকে ঘর পরিষ্কার নিজেই করতে শিখলাম,’’ বললেন দর্শনা। তবে লকডাউনের মেয়াদ বাড়লে একা একা মুম্বইয়ে থাকা কষ্টকর হবে বলেই তাঁর মত।
লকডাউনের সিদ্ধান্ত সমস্যায় ফেলে দিয়েছে টেলি দুনিয়ার আর এক অভিনেত্রী প্রিয়া পালকে। ‘‘মুম্বই এসেছিলাম ওয়েব সিরিজ়ে কাজ করতে। এখানে এক বন্ধুর সঙ্গে শেয়ারে বাড়ি ভাড়া নিয়েছি। লকডাউনের জন্য কলকাতায় ফিরে গেলে ভাড়া নেওয়ার আগাম টাকা থেকে আরও কয়েক মাসের টাকা কেটে নিত বাড়িওয়ালা। কারণ, উনিও এই পরিস্থিতিতে নতুন কোনও ভাড়া পাবেন না। আমরা এখানে যারা থাকি, শুটিং করেই বাড়ি ভাড়া দিই। কিন্তু শুটিং বন্ধ হওয়ায় ভীষণ ভাবে অর্থনৈতিক চাপের মুখে পড়ে গিয়েছি। পরের মাসে বাড়ি ভাড়া কী করে মেটাব, জানি না,’’ বললেন বাংলা বিগ বস সিজ়ন টুয়ের প্রথম রানার আপ।
মানসিক চাপের মুখে পড়েছেন অভিনেত্রী চিত্রাঙ্গদা শতরূপাও। অনেক বছর ধরেই তিনি মুম্বইয়ে রয়েছেন। ওয়েব সিরিজ় ‘কর্কট রোগ’ এবং ওয়েব ছবিতেও কাজ করেছেন তিনি। মার্চেই কলকাতায় আসার কথা ছিল, একটি ইভেন্টের বিচারক হয়ে। কলকাতায় আসতে পারলে এখন তিনি মা-বোনের সঙ্গেই হয়তো থাকতেন। কিন্তু ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় তিনি রয়ে গেলেন মুম্বইয়ে। আগামী দু’মাসের আগে কাজের কোনও চিহ্নও দেখতে পাচ্ছেন না চিত্রাঙ্গদা। তাঁর কথায়, ‘‘মুম্বইয়ে ছিলাম কাজের জন্য। এখন ফিরে আসতে চাই। কাজ না থাকলে পরিবারের সঙ্গে নিজের শহরে থাকাই নিরাপদ।’’
অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন গুনছেন ‘ইষ্টিকুটুম’ ধারাবাহিকের কমলিকা অর্থাৎ অভিনেত্রী অঙ্কিতা চক্রবর্তীও। ‘‘প্রথমে বুঝতে পারিনি পরিস্থিতি এতটা জটিল আকার নেবে। ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে। এখন লকডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। জটিল পরিস্থিতিতে নিজের বাড়িতে থাকলে অন্তত কিছুটা স্বস্তি পেতাম,’’ অঙ্কিতার কণ্ঠে উদ্বেগ স্পষ্ট। বিগত কয়েক বছর ধরে কাজের প্রয়োজনে তিনি কলকাতা-মুম্বই, দু’টি শহরকেই বেছে নিয়েছিলেন থাকার জায়গা হিসেবে। এ ভাবেই ‘ফাগুন বউ’, ‘ঠাকুমার ঝুলি’ ও আরও কয়েকটি ধারাবাহিকে কাজ করেছেন অঙ্কিতা। মার্চেই তাঁর কলকাতায় আসার কথা ছিল। কিন্তু শুটিং বাতিল হওয়ায় শহরে ফেরা এখন অনিশ্চিত।
বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ও রয়েছেন মুম্বইয়ে। তবে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি। অভিনেত্রী বিদিতা বাগের কথায়, ‘‘আগাম নোটিস পেলে নিজের শহরে থাকতে পারতাম। এখন ভিডিয়ো কলেই মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি।’’
কিন্তু ফিরতে চাইলেই কি ফেরা যায়? মডেল-অভিনেত্রী শতরূপা পাইনের প্রশ্ন, লকডাউনের মেয়াদ শেষ হলে কলকাতা ফিরলেও আমরা কি ঘরে ফিরতে পারব? তখনও কি নিয়ম বলবৎ থাকবে, বাইরে থেকে এলেই ১৪ দিনের কোয়রান্টিনে থাকতে হবে? ওয়েব সিরিজ়ের শুটিংয়ে তাঁর কলকাতায় আসার কথা ছিল। এখন সব শুটিং, অডিশন বন্ধ। ‘‘আগের কাজের অনেক পেমেন্ট আটকে রয়েছে। যারা কোনও দিন পেমেন্ট নিয়ে সমস্যা করেননি, জোড়হাত করে অপেক্ষা করতে বলছেন। এই সব টাকাই আমাদের রোজগার। দিন দিন মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছি।’’ মানসিক চাপ মুক্তির জন্য তিনি যোগব্যায়াম করছেন, কখনও লাউড মিউজ়িক চালিয়ে নাচছেন। ‘‘যতই নিজেকে আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করি, রাতে বিছানায় ঘুমোতে গিয়ে লড়াই চলে নিজের সঙ্গে। মন খারাপ হয় বাড়ির জন্যও। তখন বড় একা লাগে,’’ আক্ষেপ ক্যালেন্ডার গার্লের।
কেউ স্বেচ্ছায়, কেউ দোলাচলে বা পরিস্থিতির চাপে নিজের শহরে ফিরতে পারেননি। তাঁরা সকলেই অপেক্ষায়। ফিরতে যে হবেই, তা নিজের জন্য হোক বা কাজে...
অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy