দক্ষিণ কলকাতার কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেশা অভিনয়। বড়-ছোটপর্দায় প্রায়ই দেখা যায় তাঁকে। যেমন, এ বারের পুজোর ছবি ‘রক্তবীজ ২’তে আছেন তিনি। পর্দায় এই নিয়ে তৃতীয় বার পুলিশ অফিসারের চরিত্রে! নন্দিতা রায়-শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় অনন্যা গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এজেন্ট! আবীর চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘বস্’। অভিনীত চরিত্রের নাম ‘রিয়া’।
প্রসঙ্গ তুলতেই অনন্যা হেসে ফেলে আনন্দবাজার ডট কমকে বললেন, “আমার মধ্যে পরিচালকেরা পুলিশ অফিসারের ছায়া দেখতে পান। কেন পান? নিজেই বুঝি না!”
অনন্যার অভিনয়ের বয়স বেশি নয়। এ দিকে টলিপাড়ায় গুঞ্জন, তাঁকে অভিনয়ে নিলে নাকি নন্দনে সেই ছবি জায়গা পাবেই। সত্যিই কি এ রকম কিছু ঘটছে? আর একপ্রস্থ হাসি। পাল্টা প্রশ্নও তুললেন, “তা-ই যদি হবে, তা হলে আমার অভিনয়ে আসার আগের ছবিগুলো কী করে নন্দনে দেখানো হয়েছে?” তাঁর মতে, এ রকম কিছুই নয়। নন্দনে ছবি দেখানো হবে কি না, সেটা ছবির মানের উপরে নির্ভর করে।
‘রক্তবীজ ২’-এর শুটিংয়ে অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
অনন্যা বড়পর্দায় প্রথম পা রাখেন দেবের ‘প্রধান’ ছবির মাধ্যমে। সেখানেই প্রথম তিনি পুলিশ আধিকারিক হয়েছিলেন। মাঝে ধারাবাহিক ‘মিত্তির বাড়ি’তেও তাঁকে একই ভূমিকায় দেখা যায়! ‘রক্তবীজ ২’-এ রাজনীতিবিদ-অভিনেতার অভিনয়ের নেপথ্য কারণ যদিও অভিনব। তাঁর কথায়, “সাল ২০১২। তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দিল্লিতে সাক্ষাৎ হয়েছিল। অনেকটা সময় নিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবন দেখেছিলাম সে দিন। ওঁর আপ্তসহায়ক নিজে সবটা ঘুরিয়ে দেখিয়েছিলেন।” তাই ‘রক্তবীজ ২’-এ অভিনয়ের প্রস্তাব আসতেই তিনি সানন্দে রাজি। এ ছাড়া, নন্দিতা-শিবপ্রসাদের ‘বহুরূপী’র প্রচারেও নানা ভাবে ছিলেন তিনি। “ওঁদের সঙ্গে পরিচিতি অনেক দিনের। এ বার কাজের সুযোগ হল”, বক্তব্য অনন্যার।
বাংলার প্রায় সব নায়িকা যাঁকে বিপরীতে পেতে চান, সেই আবীরকে কেমন দেখলেন? ফের জোরে হাসি। অনন্যার কথায়, “আবীরকে ঘিরে আমার ‘ফ্যান্টাসি’ আছে কি না জানতে চাইছেন? রাজনীতি করায় এত কাছ থেকে বাস্তব দেখেছি, যে কাউকে নিয়েই আর ওই বিশেষ অনুভূতি নেই।” দম নিয়ে ফের যোগ করলেন, তার থেকেও তিনি নজর করেছিলেন, ইউনিটের বাকিদের সঙ্গে নায়কের ব্যবহার কেমন। কিংবা তাঁর শট একবারে ‘ওকে’ হয় কি না। এই দুই বিষয়ে তাঁর কী পর্যবেক্ষণ? অনন্যা অকপট, নায়কের কোনও তারকাসুলভ আচরণ নেই। সকলের সঙ্গে সমান ভাবে মেশেন। যে কোনও ব্যাপারে সহযোগিতার চেষ্টাও করেন। হাসতে হাসতে বললেন, “আবীর আমার নির্বাচনী কেন্দ্রের বাসিন্দা। শুটিংয়ের ফাঁকে জানতে চেয়েছি, ভোটটা আমাকেই দেন তো? শুনে জোরে হেসেছেন তিনি।”
অ্যাকশন দৃশ্যে অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: সংগৃহীত।
পর্দায় গোয়েন্দা সংস্থার অফিসার হতে গিয়ে বিস্তর কসরত করতে হয়েছে তাঁকে। অনন্যা বরাবর নিজের শরীর নিয়ে সচেতন। যাতে বাড়তি মেদ না জমে, তার জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করেন। খাওয়াদাওয়াতেও সংযম তাঁর। “‘রিয়া’ হয়ে উঠতে গিয়ে দেখলাম, শুধুই শরীরচর্চা যথেষ্ট নয়। পরিচালকেরা জানিয়েছিলেন, প্রচুর দৌড়ঝাঁপ করতে হবে। অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করতে হবে। তার জন্য ফিটনেস দরকার। সেটা ট্রেডমিলে দৌড়ে হয় না”, দাবি তাঁর। তার জন্য তিনি অন্য ধারার শরীরচর্চা করেছেন। এমনও দৃশ্য ছিল, ধোপাদের কাপড় কাচার জায়গায় দৌড়োতে হবে। লম্বা লাফ দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে সাবানজলে পা পিছলে পড়ে গেলে, সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়াতেও হবে।
অনন্যা কি শট দিতে গিয়ে আছাড় খেয়েছেন? কণ্ঠস্বরে খুশির আমেজ ছড়িয়ে জানালেন, তিনি প্রত্যেকটা পরীক্ষায় পাশ। “নন্দিতাদির থেকে শিবু বেশি খুঁতখুঁতে। আবীর তার থেকেও বেশি। একবারে শট ‘ওকে’ হলেও হয়তো নিখুঁত শটের কারণে একাধিক বার শট দিতে হয়েছে। আমি প্রত্যেক বার সেগুলো করতে পেরেছি।” শুটিং করতে করতে তিনি দেখেছেন নন্দিতাদির দাপট। “ইন্ডাস্ট্রিতে মহিলা পরিচালকের সংখ্যা তুলনায় কম। সেখানে নন্দিতাদি নিজের মতো করে কাজ করে চলেছেন। দেখে শেখার মতো”, বললেন অনন্যা।