Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

স্মৃতির কোলাজে নায়িকা শ্রীদেবী

প্রয়াত অভিনেত্রীর স্মৃতিচারণায় মুখ খুললেন তাঁকে কাছ থেকে দেখা অভিনেতা, পরিচালক, সুরকার, গায়িকাও আসলে দারুন প্রাণোচ্ছ্বল একটা মেয়ে। সকলের সঙ্গে মিশে যেতে পারে অনায়াসে। বছর কয়েক আগে একটা অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল শ্রীদেবীর সঙ্গে।  দেখলাম, একটুও পাল্টায়নি।

আর্যভট্ট খান, ঊর্মি নাথ, শ্রাবন্তী চক্রবর্তী, স্বর্ণাভ দেব
শেষ আপডেট: ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০১:৩৫
Share: Save:

• অমল পালেকর

শ্রীদেবীর মৃত্যুর খবর শুনে কিছুক্ষণের জন্য বোবা হয়ে গিয়েছিলাম। নায়িকা হিসেবে শ্রীদেবীর হিন্দি ডেবিউ ছবি ‘সোলওয়া সাওন’। আমিই ছিলাম ওঁর প্রথম নায়ক। তখন ওঁর বয়স ১৬। ওই বয়সে কাজের প্রতি আগ্রহ ও অভিনয় দক্ষতা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। কমল হাসন একদিন ফোন করে বলেছিলেন, ‘‘তামিল হিট ছবি ‘পাথিনারু ভায়াথিলিনি’ হিন্দিতে হবে। তুমি প্রোডিউসারের সঙ্গে কথা বলো।’’ ঠিক হল হিন্দিতেও নায়িকা শ্রীদেবীই থাকবেন। আর নায়ক হব আমি। হিন্দিতে নাম দেওয়া হল ‘সোলওয়া সাওন’। ওই ছবির সূত্র ধরেই আমার সঙ্গে শ্রীদেবীর পরিচয়। প্রথম দিকে ও খুব কম কথা বলত। লাজুক, শান্ত ছিল। পরে বুঝতে পারি, ভাল হিন্দি ও ইংরেজি বলতে পারত না বলে ও বেশি কথা বলত না। ধীরে ধীরে শ্রীদেবীর সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব হয়ে গেল আমার। তখন বুঝতে পেরেছিলাম, ও আসলে দারুন প্রাণোচ্ছ্বল একটা মেয়ে। সকলের সঙ্গে মিশে যেতে পারে অনায়াসে। বছর কয়েক আগে একটা অনুষ্ঠানে দেখা হয়েছিল শ্রীদেবীর সঙ্গে। দেখলাম, একটুও পাল্টায়নি।

• বাপি লাহিড়ী

ছেলেমেয়ের কাছ থেকে যখন শ্রীদেবীর মৃত্যুসংবাদটা জানলাম, রাতে আর ঘুমোতে পারিনি। ‘হিম্মতওয়ালা’ থেকেই শ্রীর সঙ্গে আমার পরিচয়। ওই ছবিতে আমিই সুরকার ছিলাম। কুড়িটা ছবি একসঙ্গে করেছি। শ্রী আর আমার সম্পর্কটা ছিল ছোটবোন ও দাদার মতো। ওর বাবা-মায়ের সঙ্গেও লাহিড়ী পরিবারের খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। ‘ওয়াক্ত কী আওয়াজ’ ছবিতে কিশোরকুমার প্লেব্যাক করেছিলেন। মনে আছে, কিশোরদার রেকর্ডিংয়ের পর শ্রী আমাকে ফোন করে জানতে চেয়েছিল, কিশোরদা কেমন গেয়েছেন। শুধু অভিনয়ই নয়, ছবির খুঁটিনাটি জানার আগ্রহ ছিল শ্রীর মধ্যে। যেমন ‘নাকা বন্দি’ ছবিতে ঊষা উত্থুপকে দিয়ে ওর লিপে প্লেব্যাক করাই। ঊষার নাম শুনে আমাকে বলেছিল, ‘দাদা ঊষাকে দিয়ে গাওয়াচ্ছেন। আমার গলার সঙ্গে যাবে তো?’ বলেছিলাম, ‘উষাই তোমার গলা বদলে দেবে।’ সুপারহিট হয়েছিল গানটা। শ্রীর স্বভাবটাই ছিল বাচ্চাদের মতো।

১৯৮৪-তে শ্রী যখন লন্ডনে গিয়ে আমাকে বলেছিল, ‘‘দাদা, আমি ঠান্ডা মোটেও পছন্দ করি না। এমন একটা গাড়ির ব্যবস্থা করে দিন যাতে হিটারের ব্যবস্থা ভাল থাকবে।’’ তবে যেখানেই যাক, ওর দক্ষিণ ভারতীয় খাবার চাই-ই। আমাদের বাড়িতে নেমন্তন্ন খেতে এলে প্রতিটা খাবার মুখে দেওয়ার আগে আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞেস করত, ‘‘এটায় পেঁয়াজ নেই তো? রসুন নেই তো?’’

শ্রী বরাবরই খাওয়াদাওয়া নিয়ে যথেষ্ট সচেতন ছিল। কলকাতায় এলেই ফোন করে বলত, ‘‘রসগোল্লা খাব।’’ তবে ইদানীং বড্ড বেশি ডায়েটিং করত, প্রায় কিছুই খেত না।

ওর সঙ্গে একবার ‘কলাকার’ ছবিতে অভিনয়ও করেছিলাম। আমি বেশ নার্ভাস ছিলাম। শ্রী বারবার আশ্বস্ত করে বলেছিল, ‘‘দাদা চিন্তা করবেন না। একদম ঠিক আছে।’’

সম্প্রতি আমার নাতি হয়েছে। খবরটা শুনে শ্রীর সে কী আনন্দ! বলেছিল, ‘‘বাপ্পাকেই তো আমি কত ছোট থেকে দেখেছি। তার আবার ছেলে! আমাকে তো যেতেই হবে।’’ নামকরণের অনুষ্ঠানের প্রথম কার্ডে শ্রীর নামই লেখা হয়েছিল।

মিডিয়া বারবার জানতে চাইছে, ওর সঙ্গে মিঠুন, জিতেন্দ্রর সম্পর্কের কথা। এগুলো ভীষণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। মিঠুন ওর স্ত্রী যোগিতার সঙ্গে খুব ভাল রয়েছে। শ্রীদেবীও বনির সঙ্গে খুব ভাল ছিলেন। ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’র সময় থেকেই বনি-শ্রীর প্রেম। আশা পারেখ থেকে আলিয়া ভট্ট— সকলের সঙ্গে কাজ করেছি। যদি কোনও নায়িকাকে ‘সুপারস্টার’ উপাধি দেওয়া হয়, তা হলে সেটা শ্রীদেবীরই প্রাপ্য। ও ‘মম’ করার সময় আমাকে ফোন করে জানিয়েছিল। উৎসাহ দিয়ে বলেছিলাম, ‘‘ভাল তো, অন্য রকম ছবি করো।’’ ওর ছবিগুলোর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ‘সদমা’। মনে হচ্ছে, ওর চলে যাওয়া গোটা ইন্ডাস্ট্রিতে সদমা তৈরি করে দিল।

আরও পড়ুন: প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখে রানির খেতা

• সুভাষ ঘাই

১৯৮৫-তে ‘কর্মা’য় শ্রীদেবী সঙ্গে প্রথম কাজ। তবে আমার কাছে শ্রীদেবী নায়িকার চেয়ে বন্ধু বনি কপূরের স্ত্রী হিসেবে বেশি পরিচিত। বাড়িতে শ্রীদেবী ছিলেন আর পাঁচটা মায়ের মতোই। মেয়ে জাহ্নবী আর খুশির জন্য ইন্ডাস্ট্রি ছেড়েছিলেন। ওঁদের বাড়িতে গেলে বোঝা যেত শ্রীদেবী কত ভাল হোস্ট! লাজুক প্রকৃতির মানুষ ছিলেন, কিন্তু সেটে ওঁর অভিনয় দেখে হাঁ হয়ে যেতাম।

• অরুণা ইরানি

শ্রীদেবীর সঙ্গে ১২টা ছবিতে কাজ করেছি। মুম্বইয়ে আমরা একই বিল্ডিংয়ে থাকি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমরা কোনও দিন ভাল বন্ধু হতে পারিনি, কারণ উনি ভীষণ রিজার্ভড ছিলেন। সকলের সঙ্গে সহজে বন্ধুত্ব করতেন না। কিন্তু খুব ভাল মানুষ ছিলেন। মর্নিংওয়াকে দেখা হতো। শেষ দেখা ‘মম’ রিলিজের পর।

• কবিতা কৃষ্ণমূর্তি

শ্রীদেবী নেই। এত কম বয়সে উনি চলে গেলেন। এখনও ওঁর মেয়েরা এত ছোট!

ওর জন্য প্রথম প্লেব্যাক ‘আগ অউর শোলা’য়। ‘নাগিনা’, ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’, ‘চালবাজ’, ‘খুদা গাওয়া’... অনেক ছবিতে শ্রীদেবীর লিপে প্লেব্যাক করেছি। ওঁর আর আমার যুগলবন্দিতে যেটা সবচেয়ে বেশি হিট করেছিল তা হল ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’র ‘হাওয়া হাওয়াই...’ আমি যতটুকু দেখেছি উনি খুব শান্ত, ধীরস্থির। মিশে যেতেন সহজে। দেখা হলেই যেচে জিজ্ঞেস করতেন, ‘‘কেমন আছেন?’’ যখন ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ দেখলাম, তখন বুঝলাম, আমার দেখা শ্রীদেবীর সঙ্গে পরদার শ্রীদেবীর কোনও মিল নেই। নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে শ্রীদেবী গানটা কোন লেভেলে নিয়ে গিয়েছেন। ‘মিস্টার ইন্ডিয়া’ রিলিজের পর শ্রীদেবী, অনিল কপূর প্রমুখ পুরো টিমের সঙ্গে শিলিগুড়ি গিয়েছিলাম শো করতে। আমাদের জন্য ছিল একটা বাস, শ্রীদেবীর জন্য ছিল গাড়ি। বিমানবন্দর থেকে শ্রীদেবী যখন গাড়িতে উঠতে যাবেন, তখন ভক্তরা তাঁকে ঘিরে ফেলেন। উনি ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। এর পর থেকে উনি আমাদের সঙ্গেই যাতায়াত করতেন। কথা হলে মেয়েদের কথা বলতেন। মেয়েদের কেরিয়ার নিয়ে বেশ সিরিয়াস ছিলেন। কষ্ট হচ্ছে, জাহ্নবীর ডেবিউ ফিল্মটা দেখে যেতে পারলেন না শ্রীদেবী।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sridevi Bollywood শ্রীদেবী
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE