Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Haranath Chakraborty

Lata Mangeshkar death: দু’টি গান গেয়েও একটি গানের পারিশ্রমিক নিয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর!

পঞ্চমদা জানিয়েছিলেন, লতাজির মেজাজ ভাল থাকলে, গলা ঠিক থাকলে, তবেই তিনি স্টুডিয়োতে আসবেন। ভয়ে ভয়ে মুম্বই গিয়েছিলাম তাঁকে দিয়ে গান গাওয়াতে।

লতার সঙ্গে কাজ করার কথা মনে পড়ছে হরনাথের

লতার সঙ্গে কাজ করার কথা মনে পড়ছে হরনাথের

হরনাথ চক্রবর্তী
হরনাথ চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৬:৪৫
Share: Save:

লতাজির মেজাজ ভাল থাকলে, গলা ঠিক থাকলে, তবেই তিনি স্টুডিয়োতে আসবেন। এই ভয় সঙ্গে নিয়েই মুম্বই গিয়েছিলাম। নতুন ছবি বানিয়েছি। লতা মঙ্গেশকরের গলায় গান থাকলে ছবি হিট! মানও বাড়বে। ছবির নাম ‘নবাব’। ছবিতে সুর দিয়েছেন রাহুল দেব বর্মণ। তাঁরই ভরসায় আমার মুম্বই পাড়ি।


যে স্টুডিয়োয় লতাজি তাঁর বেশির ভাগ গান গেয়েছেন, সেখানেই সবাই জড়ো হয়েছি। আমার ছবির একটি গান। সঙ্গে প্রযোজক ভবেশ কুণ্ডুও একটি গানের বায়না নিয়ে এসেছিলেন। প্রথম দিন বসেই আছি। লতাজির ম্যানেজারকে ফোন করা হল। তিনি বললেন, ‘‘দিদি আজ গাইবেন না।’’ পঞ্চমদা (রাহুল দেব বর্মণের ডাকনাম) আগেই আমাদের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, এমনটা ঘটতে পারে। তা-ই হল। জানানো হল, তার পরের পরের দিন দিদি সময় দিয়েছেন৷

তিন নম্বর দিন। আমরা স্টুডিয়োয় ঢুকলাম। বুক দুরু দুরু। দিদি আসবেন তো? এই এক প্রশ্ন মাথায় ঘুরছে। ওঁকে দিয়েই গান গাওয়াব বলে পণ করেছিলাম আমি। তারই অপেক্ষায় বসে আছি। হঠাৎ খবর এল, দিদি আসছেন। একের থেকে অন্য জন- এমনি করেই খবর চলে আসত সকলের কাছে।

লতাজি ঘরে ঢুকলেন। মনে হল, আমি এত ভাগ্যবান, লতাজিকে গান গাওয়াব নিজের ছবিতে! সেই প্রথম বার চাক্ষুষ করলাম কোকিলকণ্ঠীকে। প্রথমে ভবেশ কুণ্ডুর গানটি গাইলেন লতাজি। তার পরে আমার গান।

মুম্বইয়ে গান রেকর্ডিংয়ে প্রযোজক ভবেশ কুণ্ডু, রাহুল দেব বর্মন, লতা মঙ্গেশকর, হরনাথ চক্রবর্তী, স্বপন চক্রবর্তী

মুম্বইয়ে গান রেকর্ডিংয়ে প্রযোজক ভবেশ কুণ্ডু, রাহুল দেব বর্মন, লতা মঙ্গেশকর, হরনাথ চক্রবর্তী, স্বপন চক্রবর্তী

‘ঘুম পাড়ানির গান’ গাইলেন লতাজি। আহা! কী যে ভাল! অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়ের গলায় গানটি বসানো হয়েছিল। কিন্তু খেতে পেলে শুতে চাই যে! তাই চার লাইনের আরও একটি ছোট্ট গানের আবদার করে বসলাম পঞ্চমদার কাছে। ছবিতে দৃশ্য ছিল, সন্ধ্যা রায় ছুটতে ছুটতে আশ্রমে আসছেন। একটি ছোট বাচ্চাকে নিজের কোলে তুলছেন। কোলেই মৃত্যু হচ্ছে বাচ্চাটির। সেখানেই চার লাইন গেয়ে উঠবেন লতাজি। এ রকমই ভাবনা ছিল। পঞ্চমদা শুনে বললেন, ‘‘এক দিনে দুটো গান গাইয়েছি। এ বার আমায় মারবেন দিদি! তুই সবার ছোট। আবদার কর নিজে।’’ লতাজির কাছে গিয়ে তাঁকে প্রণাম করে অনুরোধ জানাতেই তিনি রাজি। চার লাইন গেয়েও দিলেন।

এক একটি গানের জন্য তখন ২৫ হাজার টাকা করে পারিশ্রমিক নিতেন লতাজি। সেই মতো দু'টি গানের জন্য ৫০ হাজার টাকা নিয়ে দিদির কাছে গিয়েছি। দিদি জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘কত টাকা আছে?’’ বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি বললেন, ‘‘চার লাইনের জন্য আরও একটা ২৫ হাজার টাকা নেব না। বাবার নামে হাসপাতাল তৈরি করছি। এমনিতেই এই টাকা ওখানে দেব। ৫০ হাজার দিও না। ২৫ নেব।’’

এ ভাবেই তাঁকে চিনেছিলাম। আমার দেখা লতাজি কিংবদন্তি শিল্পী হয়েও দু'টি গান গেয়ে একটি গানের পারিশ্রমিক নেওয়া গায়িকা। সে দিনটা আজ পাকাপাকি ভাবে স্মৃতি হয়ে গেল। সে দিনের অভিজ্ঞতা মনে পড়ছে খুব৷ সৌভাগ্যবান আমি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Haranath Chakraborty lata mangeshkar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE