জীবিত অবস্থায় যে সমাদর পাওয়ার কথা, তিনি পাননি। শতবর্ষেও শহর কলকাতা ফেরাল তাঁকে! ঋত্বিক ঘটকের জন্মদিন উপলক্ষে সম্প্রতি ঋত্বিক মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সহযোগিতায় নাকতলা হাই স্কুলে ‘কোমল গান্ধার’, ‘আমার লেনিন’ দেখানোর কথা ছিল। সেই অনুযায়ী সংগঠন বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকের অনুমতিও নিয়েছিল। খবর, ছবি প্রদর্শনের কয়েক দিন আগে হঠাৎ বেঁকে বসেন তিনি।
সংগঠনকে তিনি বলেন, “কয়েক জন ব্যক্তি হুমকি দিয়ে গিয়েছেন, ছবি দেখানো হলে বিদ্যালয়ে ভাঙচুর হবে। তাঁদের বিশেষ আপত্তি ‘আমার লেনিন’ নিয়ে।” সংগঠনের পক্ষ থেকে এর পরে প্রধানশিক্ষককে অনুরোধ করা হয়, শুধুমাত্র ‘কোমল গান্ধার’ ছবিটি দেখানো যায় কি না। তিনি দ্বিতীয় ছবি প্রদর্শনেরও অনুমতি দেননি! একই বয়ান স্থানীয় একটি ক্লাবেরও!
এটাই কি শহর কলকাতা? যাকে ‘শিল্প-সংস্কৃতির আঁতুড়ঘর’ বলে দাবি করেন শহরবাসী, দেশ-বিদেশের খ্যাতনামীরাও! আনন্দবাজার অনলাইন এই প্রসঙ্গ তুলে যোগাযোগ করেছিল পরিচালক অনীক দত্তের সঙ্গে। পরিচালক কিন্তু শহরের এ- হেন পরিবর্তনে অবাক হননি। তাঁর কথায়, “এ সব নিয়ে প্রতিবাদ করাটাও যেন নিজেকে ছোট করা!” ঋত্বিকের প্রয়াণের পর আক্ষেপ করে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায় লিখেছিলেন, ‘তুমি গেছো, স্পর্ধা গেছে, বিনয় এসেছে …’। অর্থাৎ, পরিচালকের মতো করে পর্দায় বাস্তব দেখানোর মতো সাহস বুঝি আর রইল না! অনীকের চোখে কিন্তু অন্য রকমের ‘স্পর্ধা’র বাড়বাড়ন্ত। তাঁর কথায়, “কতটা স্পর্ধা বাড়লে লোকে এই ধরনের আচরণ করে!” তিনি এ-ও জানান, এক দিকে প্রয়াত পরিচালকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবির প্রিন্ট পুনরুদ্ধার হচ্ছে, অন্য দিকে, তাঁর ‘কোমল গান্ধার’ দেখানোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
আরও পড়ুন:
এ প্রসঙ্গে নিজের বক্তব্য রেখেছেন অভিনেতা-রাজনীতিবিদ রুদ্রনীল ঘোষও। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন, অনীক দত্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলে মতবাদে বিশ্বাসী হওয়ায় সত্যজিৎ রায়ের জীবন নিয়ে তৈরি ছবি ‘অপরাজিত’ নন্দনে জায়গা পায় না। যার নামকরণ এবং লোগো সত্যজিতের তৈরি। একই ভাবে মিঠুন চক্রবর্তীর ‘প্রজাপতি’ বা ‘শাস্ত্রী’ সরকারি প্রেক্ষাগৃহ নন্দন, রাধা স্টুডিয়োয় মুক্তি পায় না। অভিনেতার অভিযোগ, “অনেক দিন ধরেই বাংলা ছবির দুনিয়ায় রাজনীতির রং লেগেছে। অথচ, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বেরা বোঝেন না, অভিনেতা, পরিচালক বা প্রযোজককে কোনও রাজনৈতিক গণ্ডিতে বাঁধা যায় না।”
শহরে দু-দুটো পরিচালকদের সংগঠন। পুরনো সংগঠন ইআইএমপিডিএ (ইস্ট ইন্ডিয়া মোশন পিকচার্স ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন) এবং ডিএইআই (ডিরেক্টর্স অ্যাসোসিয়েশন অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া)। তারা এ ক্ষেত্রে কোন ভূমিকা পালন করছে? জানতে যোগাযোগ করা হয়েছিল দ্বিতীয় পরিচালক সংগঠনের সভাপতি সুব্রত সেন, সম্পাদক সুদেষ্ণা রায়, কার্যকরী পরিচালক কমিটির সদস্য রাজ চক্রবর্তী, পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ চক্রবর্তীর সঙ্গে। সুদেষ্ণা কলকাতার বাইরে। তাঁকে ফোনে পাওয়া যায়নি। বাকিরাও নীরব।