মধুসূদন থেকে বঙ্কিমচন্দ্র এমনকী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম সংস্করণ এক নিমেষে হাতের কাছে। পাশেই উঁকি মারছে শেক্সপিয়রের ১৮২১ সালের সংস্করণ। ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বটতলার আদি সংস্করণ, নিধুবাবুর গীতরত্ন আর সেকালের যাত্রার দুষ্প্রাপ্য পাণ্ডুলিপি।
আদ্যিকালের প্রকাশনা সব। দিগদর্শন, বিবিধার্থ সংগ্রহ, রহস্য সন্দর্ভ, মধ্যস্থ, বান্ধব, তত্ত্ববোধিনীর মতো পত্রিকা যেমন আছে, তেমনই আছে বীণাবাদিনী, সঙ্গীত প্রকাশিকা, দীপালি, চিত্রালি, রূপমঞ্চ, সচিত্র শিশির। এমনকী রয়েছে
ক্যালকাটা গেজেট, ন্যাশনাল ম্যাগাজিনও।
শুধুমাত্র ব্যক্তিগত উদ্যোগে মধ্য হাওড়ার নেতাজি সুভাষ রোডে গড়ে উঠেছে এমনই একটি সংগ্রহশালা। যেখানে পাওয়া যাবে রবীন্দ্রনাথ থেকে রবিশঙ্কর, জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে জিনা লোলোব্রিজিডার সই করা বইও। জীর্ণ হয়ে এসেছে মলাট। কিন্তু হলদে ছোপ ধরা পাতায় সইগুলি এখনও জ্বলজ্বল করছে।
সংগ্রহশালার কর্ণধার দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে ‘‘এখানকার সবচেয়ে বড় চমক ব্রেশটের নিজের গাওয়া গান। রয়েছে ওস্তাদ সাগিরউদ্দিন খানের ব্যবহৃত সারেঙ্গি, সরোদিয়া কেরামতুল্লা খানের সরোদ।’’ সংগ্রহশালায় রয়েছে এ দেশে প্রকাশিত গ্রামোফোন কোম্পানির প্রথম রেকর্ড। সংগৃহীত রেকর্ডের সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। পাওয়া যাবে বিনোদিনীর সঙ্গী বনবিহারিণীর গাওয়া পিসবোর্ডের রেকর্ড। অর্ধেন্দুশেখর মুস্তাফি থেকে শিশির ভাদুড়ির অভিনয়। রয়েছে সাহিত্য থেকে সঙ্গীত, নির্বাক সিনেমা ও নাটকের দুষ্প্রাপ্য নথি।
ইতিমধ্যেই এই সংগ্রহশালা নিয়ে কৌতূহল দেখিয়েছে বাংলাদেশ। কারণ দুই বাংলার বহু নথি এখানে ঠাঁই পেয়েছে। সম্প্রতি সে দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ আনিসুজ্জামান এই সংগ্রহশালা দেখতে এসে বললেন, ‘‘এখানে যে সব ঐতিহাসিক নথি রয়েছে তার গুরুত্ব অপরিসীম।’’ বিশ্বভারতীর প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্যর মনে হয়েছে, ‘‘এক নিমেষে স্বচক্ষে ইতিহাস-দর্শন।’’
দীর্ঘ এক দশকের প্রচেষ্টা। অর্থাভাবে বারবার হোঁচট খাওয়া এই স্বপ্নের সংগ্রহশালাটি বাস্তবায়িত করতে দেবজিৎ ঘুরেছেন সরকারি সাহায্যের আশায়। কিন্তু কেউই হাত বাড়াননি। পারিবারিক সূত্রে পাওয়া ব্যক্তিগত মালিকানার সব অর্থ অগত্যা এই সংগ্রহশালায় ব্যয় করেছেন। ‘‘আর দেরি করলে প্রাচীন নথির অনেক কিছুই নষ্ট হয়ে যেত,’’ অভিমানী দেবজিৎ।
এখানে দেখতে পাওয়া যাবে রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখা কয়েকটি ব্যক্তিগত চিঠি যা এখনও অপ্রকাশিত। রয়েছে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের সই করা আইনি নির্দেশ। রয়েছে আঠেরো শতকের ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বহুmবিচিত্র সরকারিনামা।
সঙ্গে উৎপল দত্ত বা শম্ভু মিত্রের বেশ কিছু ব্যক্তিগত চিঠি। রয়েছেন সত্যজিৎ রায়ও। যা দেখে প্রবীণ চিত্রগ্রাহক সৌমেন্দু রায় বললেন, ‘‘ইতিহাস কথা বলে। অনুভবে শিহরিত হতে হয়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy