ছবির দৃশ্যে অঞ্জন এবং সৌরসেনী।
সরস্বতী পুজোর দু’দিন আগে আর ভ্যালেন্টাইনস ডে-র ছ’দিন আগে অঞ্জন দত্তর প্রেমের নতুন ছবি। আর কী বলার থাকতে পারে এর পর? লাল পলাশ তো ফুটবেই। আর সে নিস্তব্ধতাই টুকে দেওয়া ‘ফাইনালি ভালোবাসা’-তে। ডিজিটাল বিশ্বায়িত প্রজন্ম, যাদের কাছে ভালবাসা শব্দটারই তেমন অর্থ নেই, তারা ঠিকই চিনে নিতে পারবে রং ও গন্ধ। গোলপার্কের রাস্তায় মেঘ করে আসবে তার পর। লেকের ধারে মুখ ফস্কে ইতস্তত কখন বেরিয়ে পড়বে, ‘তোকে ভালবাসি...’।
আমাদের সময়ের এই যে এত ভাঙন, রোগ, ডিপ্রেশন, সেপারেশন, ভায়োলেন্স, তবু সবাই একসঙ্গে বাঁচার কি তাড়না, শহরে একটু কষ্ট করে থেকে যাওয়ার কি চেষ্টা, এ সব কিছুর পিছনে অঞ্জনের একটা বড় অবদান রয়েছে বরাবর। বার বারই তাই অঞ্জনের কলকাতা স্বাগত জানায় ভালবাসা। তা বেগবাগান, পার্ক স্ট্রিটের গলি। কখনও সদর স্ট্রিটের কানাগলি। শিয়ালদহ। বেনেপুকুর। বা, গড়িয়াহাট-গোলপার্ক-ভবানীপুর।
এই সব এলাকাতেই ঘুরে বেড়ায় অঞ্জনের চরিত্রেরা। অঞ্জন নিজেও। যেমন এ ছবিতেও আহিরিটোলার বয়স্ক অবসরপ্রাপ্ত অফিসারের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় পার্ক স্ট্রিটের উঠতি যুবতী আহিরির। তার বয়ফ্রেন্ড দার্জিলিংয়ে চাকরি নিয়ে চলে গেছে। সেখানে বসের স্ত্রীর সঙ্গে তার ভালবাসা বসের দুর্নীতি ভাঙতে চেষ্টা করে। অন্য দিকে, অবসরপ্রাপ্ত অফিসারের সঙ্গে তরুণী পাহাড়ে যায় ও সেখানে আর এক সমকামের প্রেমের সঙ্গে তাদের দেখা হয়।
এমনিতে এই ত্রিশঙ্কু আখ্যান নতুন কিছু নয়। কিন্তু অঞ্জনের প্রেমের গল্প বড় মায়াবী লাগে। যেমন তার আগের কাজ, ম্যাডলি বাঙালি বা প্রিয় বন্ধু। মনকেমন করে দেয়। কান্না পায়। হল থেকে বেরিয়ে জীবনটা আবার সুন্দর লাগে। ভালবাসতে ইচ্ছে করে।
আরও পড়ুন, রূপান্তরকামী জানার পর গুন্ডা দিয়ে মেরেছিল বাড়ির লোক!
গত বছর ‘আমি আসব ফিরে’ ছবিতে অঞ্জন বলেছিলেন ডিপ্রেশন জয়ের গল্প। বলেছিলেন, ভায়োলেন্সের বদলে সাইলেন্ট হতে। নিজেকে আরও হিল করতে। ঠান্ডা হতে। কারণ সময় বড় ঘাঁটা। কালো। এ ছবিতে বললেন, সেই সুন্দর রাস্তাতেই মানুষের সঙ্গে দেখা হবে ভালবাসার। হতেই হবে। শুধু, একটু সময় দিতে হবে। তবেই ভালবাসা খুঁজে নেবে তোমায়।
ছবির দৃশ্যে রাইমা সেন।
নানা দিক থেকে এ ছবিতে প্রেমকে দেখেছেন অঞ্জন। কখনও তা অবদমন, কখনও তা পজেসিভনেস তো কখনও সমকাম। রয়েছে আরও স্তর। এমন নয় যে এ ভাবেই প্রেম করে এ প্রজন্ম। অনেক অনেক জটিল স্তর এখন। অনেক টেকনোলজিও। কিন্তু এ ছবির প্রেম তবু কেন যে বিশ্বাস করায়, হ্যাঁ, এ ভাবেও।
যে ভাবে আপনমনে ভোর কুয়াশায় লিটল রাসেল স্ট্রিটে ঘুরে বেড়ান অঞ্জনবাবু, এ ছবিও তেমন। সব চরিত্রকেই আগে কোথাও না কোথাও দেখা গেছে। সমকামিতার গল্পটি ছাড়া। অঞ্জন বরাবরই তাঁর ব্যক্তি আখ্যান দিয়ে চলে গেছেন কালেক্টিভে। সময়কে ডকুমেন্ট করছেন। তাঁর মতো করে। তাঁর গল্প হয়েছে সবার। এ ছবিও তাই। বড় চেনা লাগে প্রত্যেককে। ‘আমার বাবা’ আর ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’ যেমন সিকুয়েল। ঘুরেফিরে সেই একই কথা অঞ্জন বলে চলেছেন। একঘেয়ে তার সুর। এক রকম তাঁর দার্জিলিংয়ের গল্পের মতোই। সবই যেন দাশ কেবিনে বসে লিখছেন তিনি প্রতি বিকেলে। তবু নতুন লাগে।
আরও পড়ুন, আয়ুষ্মান খুরানাকে নিয়ে হিন্দি ডেবিউ করবেন পাভেল?
এ মরসুমে এ ছবি দেখবেন না তো কোন ছবি দেখবেন? এমন গানও অঞ্জন-নীল জুটি ছাড়া সম্ভব না। অঞ্জন, রাইমা, অরিন্দম শীল, অনির্বাণের অভিনয় যথারীতি ভাল লাগে। ফাইনালি ভালবাসায় যেতে প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য এমন ছবি বানালেন অঞ্জন। তাকে জানাব ভালবাসা!
(মুভি ট্রেলার থেকে টাটকা মুভি রিভিউ - রুপোলি পর্দার সব খবর জানতে পড়ুন আমাদের বিনোদন বিভাগ।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy