Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বছর এগারো পর

রবীন্দ্রসঙ্গীতের একক অ্যালবাম। ‘অনেক দিনের গান’। শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য। লিখছেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৪ ১৮:০৩
Share: Save:

গান ফিরে আসে। ‘অনেক দিনের গান’। শিল্পী শ্রীকান্ত আচার্য। তাঁর মনের মধ্যে জমে থাকা না-গাওয়া প্রিয় গান করেছেন শ্রীকান্ত। তা-ই এ বার ‘অনেক দিনের গান’ অ্যালবাম নামে রবীন্দ্রনাথের শব্দ আর ছন্দ ঘিরে শ্রোতাদের মনে সুর জাগাবে।

এগারো বছর পরে রবীন্দ্রসঙ্গীতের একক অ্যালবাম করছেন শ্রীকান্ত আচার্য। কেন? এর মধ্যেও তো শ্রীকান্তর অ্যালবাম শুনেছেন শ্রোতারা! শ্রীকান্ত বলছেন, “এ যাবৎকাল শ্রোতারা যা শুনেছেন, তার প্রত্যেকটাই হয় অন্য কোনও শিল্পীর সঙ্গে আমার গান বা আমার মাদার সিডির নানা গানের কম্পাইলেশন। বিভিন্ন সিডি থেকে আমার গান সংগ্রহ করে ‘বাঁশি’, ‘সকালের রবি’ নাম দিয়ে বাজারে ছাড়া হয়েছে। লোকে ভেবেছে আমার নতুন গানের অ্যালবাম।

শুনে দেখেছে সব পুরনো গান!

এটা এক ধরনের লোকঠকানো। আর এই কম্বিনেশনের অ্যালবামের জন্য আমি কোনও রয়্যালটিও পাইনি। সারেগামা ছাড়া কেউ কোনও দিন বলতে আসেনি তোমার গান তো অনেক দিন চলল, তার জন্য এই পারিশ্রমিকটা নাও। খুব ক্লান্ত লাগছিল....”

সিডির পড়তি বাজারে পিকাসো এন্টারটেনমেন্টের কর্ণধার শ্রাবণী সেন এ বিষয়ে অত্যন্ত আশাবাদী। গান নির্বাচন থেকে ভাবনায়, খোলা মনে শ্রীকান্তকে ইচ্ছেসুরে ভাসতে দিয়েছেন শ্রাবণী। “এখন গানের অ্যালবামকে যতই ডিজিটাল স্পেসে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হোক না কেন, সিডি আমার সন্তানের মতো,” বলছেন শ্রাবণী।

কী এমন আছে এই ‘অনেক দিনের গান’য়ে? এই অ্যালবাম শিল্পীর ছোটবেলার গানের গন্ধ, গানের স্কুল ‘দক্ষিণী’র মন ভেজানো সুর, অন্ধকারের বিরহিণীর কথা জানাবে। শ্রীকান্ত এ বার যদিও কোনও কথন বা কোনও নির্দিষ্ট ভাবনার মধ্যে দিয়ে যেতে চাননি। যত ভাল ভাবনাই হোক না কেন, থিম কেউ বুঝতে চায় না। কথার চেয়ে গানই বেশি লোকে শুনতে চাইছে বলে তাঁর বিশ্বাস। রবীন্দ্রনাথের গানের শব্দ আর সুরই বলবে শ্রীকান্তর একলা মনের কথা।

রবীন্দ্রনাথের গান নিয়ে নানা এক্সপেরিমেন্টের যুগে দাঁড়িয়ে অ্যালবামের মিউজিক নিয়ে সাংঘাতিক কোনও বিপ্লব ঘটাতে কিন্তু চাননি শ্রীকান্ত। তবে যন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে গতানুগতিক পথ থেকে সরে এসেছেন তিনি। “আমি সময়ের সঙ্গে চলতে চাই, সুর বা কথা বদলে নয়। আমার প্রথাগত শিক্ষাকে সঙ্গে নিয়ে,” বলেন শিল্পী।

কারণ শ্রীকান্ত মনে করেন রবীন্দ্রনাথ কেবলমাত্র সমকালীন নয়। রবীন্দ্রসঙ্গীত একটা পিরিয়ডের গান। এই গানের মোড়কে একটা সনাতনী কাঠামো আছে। শিল্পীর এই বিশ্বাস থেকেই তৈরি হয়েছে ‘অনেক দিনের গান’-এর সাউন্ড স্কেপ। সরোদ যেমন আছে, তেমনই বেজেছে অ্যাকর্ডিয়ান। আবার খোল, হারমোনিয়ামের সঙ্গে ঝঙ্কার তুলেছে হেভি ওয়েস্টার্ন স্ট্রিংস। মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্টকে প্রাধান্য না দিয়ে গানের কথাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। পার্থ পালের সঙ্গীত আয়োজনে অ্যালবামের আটটা গান পেয়েছে নতুন মাত্রা। শ্রীকান্তর খুঁতখুঁতানি তবু একটুকুও কমেনি। গানগুলো সব ডাব করার পরে, মিক্সিং-এর পরেও বহু বার ডাবিং করেছেন তাঁর ভাললাগা অনেক দিনের গান।

‘রজনীর শেষ তারা’, ‘তব প্রেমসুধা রসে’, ‘পুষ্পবনে পুষ্প নাহি’.... এ বার একটু গভীর অতল গানে ডুব দিতে চাইছেন শ্রীকান্ত। গান প্রচলিত? না কি অপ্রচলিত? বাজারে চলবে? লোকে শুনবে? এ সব নিয়ে আর ভাবছেন না তিনি।

মণিময় ধূলিরাশি, খ্যাতি, যশ এ সব কিছুর বাইরে এসে শ্রীকান্ত গেয়েছেন তাঁর আত্মার গান। অ্যালবামে ‘বাল্মীকি প্রতিভা’-র বাল্মীকির ‘কোথায় সে উষাময়ী প্রতিমা’ গাইতে গাইতে রবীন্দ্রনাথের কথা কখন যেন তাঁর নিজের স্বর হয়ে গেছে। তাঁর বিশ্বাসের সুরে ধ্বনিত হচ্ছে, ‘যাও লক্ষ্মী অলকায়, যাও লক্ষ্মী অমরায়, এ বনে এস না, এস না, এস না এ দীনজনকুটীরে! যে বীণা শুনেছি কানে, মনপ্রাণ আছে ভোর- আর কিছু চাহি না চাহি না।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE