Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Mimi Chakraborty

নববর্ষে উত্তরবঙ্গে রাজনৈতিক কর্তব্য সারতে গিয়ে হয়তো বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখাই হবে না: মিমি

জলপাইগুড়িতে আমার বাবার দোকান ছিল। পুজো হত সেখানে। সেটা আমার কাছে এক রকম উৎসবই ছিল। নিয়ম করে নতুন জামা পরতাম।

মিমি চক্রবর্তী।

মিমি চক্রবর্তী।

মিমি চক্রবর্তী
মিমি চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০২১ ১৫:০৯
Share: Save:

নববর্ষ মানে ছোটবেলা। এপ্রিল মাস পড়লেই দিন গুনতে শুরু করতাম। ১৫ এপ্রিল অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ। নতুনের দিন, হালখাতার দিন!

জলপাইগুড়িতে আমার বাবার দোকান ছিল। পুজো হত সেখানে। সেটা আমার কাছে এক রকম উৎসবই ছিল। নিয়ম করে নতুন জামা পরতাম। সেই সাদামাঠা জামার গন্ধ আজও চোখ বুজলেই অনুভব করি। বড়রা বলতেন, এই দিনটায় আমি যা যা করব, সারা বছর সেইটাই থেকে যাবে আমার সঙ্গে। বিশ্বাস করতাম। তাই আমার দিদিকে কিছুক্ষণের জন্য হলেও হারমোনিয়াম নিয়ে বসতে হত। যাতে সারাটা বছর ওর গানের সঙ্গে কাটে। আমার ক্ষেত্রেও ছাড় ছিল না। ইচ্ছা না করলেও নিয়ম মানতে আমাকেও পড়াশোনা করতে হত সে দিন।

তবে মনে মনে তখন দিন গড়িয়ে সন্ধে হওয়ার অপেক্ষা। হালখাতা করতে বেরোনোর জন্য মন আনচান করত। ছোটবেলায় আমাকে আলাদা করে কখনও কিছু দেওয়া হত না। এ তো আজকর সময় নয় যে ছোটরা অনেক কিছু পাবে। আমার জন্য কিন্তু তখন পয়লা বৈশাখ ছিল ব্যতিক্রম। বিভিন্ন দোকান থেকে যখন মিষ্টি আসত, আমার হাতে একটা আলাদা মিষ্টির বাক্স দেওয়া হত। সেই অনুভূতিটা একদম অন্য রকম । আনন্দ আর উত্তেজনা মিলেমিশে একাকার হয়ে যেত। মিষ্টির সঙ্গে ছিল আরও একটা ভাল লাগার জিনিস। ঠান্ডা পানীয়। তখন এ সব নাগালের অনেকটা বাইরে। খেতে চাইলেই যে এনে দেওয়া হত, তেমনটা নয়। তবে আমি জানতাম সেই দিনটায় আমার জন্য ওই রং বেরঙের পানীয়গুলো অপেক্ষা করে থাকবে। কাচের বোতল থেকে স্ট্র দিয়ে ঠান্ডা পানীয় খাওয়ার সেই উত্তেজনা এখনও স্মৃতিতে স্পষ্ট।

শুধু মিষ্টি আর কোল্ড ড্রিঙ্কেই কিন্তু খাওয়াদাওয়া পর্ব মিটত না। বাড়িতে তৈরি হত পোলাও আর মাংস। যখন রান্না হত, সারা বাড়ি ভরে যেত সেই গন্ধে। যেহেতু মিষ্টি খেতে ভালবাসি, শেষ পাতে থাকত আমার পছন্দের ব্যাসনের লাড্ডু।

কাজের জন্য কলকাতায় চলে আসার পরেও এই দিনটা মা-বাবার সঙ্গেই কাটত। ওঁরা চলে আসতেন আমার কাছে। তখনও তাই নিয়ম মেনে নতুন জামা পরতাম, বাড়িতে লোকজন আসত, আনন্দ হত। তবে এ বারের নববর্ষ কিছুটা আলাদা।

জলপাইগুড়িতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বাবাও সদ্য কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন। খুব হইচই করে হয়তো কিছু করা হবে না। এ ছাড়াও ২০১৯ সাল থেকে বদলে গিয়েছে জীবন। আমি আর শুধু ঘরের মেয়ে বা অভিনেত্রী নই। একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংসদও বটে। এ বছর সেই দিনটায় প্রচারে ব্যস্ত থাকব। বাড়ির কাছে থেকেও সারা দিন বাড়িতে যেতে পারব না। বাড়ির সকলের সঙ্গে দেখা হবে কি না সেটাও জানি না। হয়তো হবে। তাই এই নববর্ষ আর পোলাও, মাংস আর কাছের মানুষদের নিয়ে নয়। কর্তব্য এবং এক মারণ ভাইরাসের অশনি সংকেত নিয়ে কাটবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE