Advertisement
E-Paper

‘লোকে পটলকুমার বলে ডাকলে খুব রেগে যেতাম’, এখন কোন পরিবর্তন এসেছে হিয়ার?

জ়েন আলফা প্রজন্মের হয়েও ফোনে পাওয়া যায় না তাকে। ‘পটলকুমার গানওয়ালা’ ধারাবাহিকের হিয়া কি স্বেচ্ছানির্বাসনে, কোন দিকে বাঁক নিয়েছে কিশোরী হিয়ার জীবন?

সম্পিতা দাস

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০২৫ ০৮:৫০
Potol kumar Gaanwala Fame Hiya dey exclusive interview and her where abouts shares her future plan

ছবি: সংগৃহীত।

তখন বয়স ছিল মাত্র ৫। খেলাধুলো করার সময় সেই মেয়ে দিনে ২০ ঘণ্টা করে শুটিং করেছে। ছোট করে কাটা চুল, টিভির পর্দায় আত্মপ্রকাশ করল। সঙ্গে ছিল তার মিষ্টি গান। সে ‘পটলকুমার গানওয়ালা’ ধারাবাহিকের পটল ওরফে হিয়া দে। যদিও সে দিনের সেই বাচ্চা মেয়েটা এখন কিশোরী। সবে পনেরোয় পা দিয়েছে। ধারাবাহিক বন্ধ হয়ে গিয়েছে তা-ও হল ৮ বছর। মাঝে বেশ কিছু ধারাবাহিকে দেখা গেলেও হঠাৎই যেন অন্তরালে চলে গেল বাংলা ধারাবাহিকের জনপ্রিয় চরিত্র ‘পটল’। যদিও তাকে পাওয়া সহজ নয়। কারণ, জ়েন আলফা প্রজন্মের হয়েও ফোনে পাওয়া যায় না তাকে। এখন কী করছে সে? আবারও কি অভিনয়ে দেখা যাবে তাকে? না কি অভিমান করে মুখ ফিরিয়েছে সে? খোঁজ নিল আনন্দবাজার ডট কম।

প্রশ্ন: জ়েন আলফা প্রজন্মের হয়েও হিয়ার কি ফোন নেই?

হিয়া: না, আসলে ফোন ব্যবহার করতে তেমন ভাল লাগে না। আর ছোটবেলা থেকেই আমার মায়ের কাছে সবাই ফোন করত। তাই মাকে ফোন করলেই আমাকে পাওয়া যাবে। একটা আলাদা নম্বর আছে। কিন্তু সেটা একেবারে ব্যক্তিগত।

প্রশ্ন: হিয়া কেমন আছে, করছেটাই বা কী?

হিয়া: হিয়া এখন চাপে আছে। সামনের বছর বোর্ডের পরীক্ষা। পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত।

প্রশ্ন: কোন স্কুলের ছাত্রী?

হিয়া: আমি হীরেন্দ্রলীলা পত্রনবিশ স্কুলে পড়ছি।

প্রশ্ন: এত জনপ্রিয় একটা ধারাবাহিকের পর এমন ভাবে লুকিয়ে পড়ল কেন হিয়া?

হিয়া: আসলে হিয়া এখন বিরতি নিয়েছে। এখন শুধুই পড়াশোনা করছি। সামনে যেহেতু বড় একটা পরীক্ষা, সেটার প্রস্তুতি নিচ্ছি। যদিও ভবিষ্যতে অনেকগুলো পরিকল্পনা আছে। ক্রমশ প্রকাশ্য।

প্রশ্ন: খুব ছোট বয়সে জনপ্রিয়তা পেয়েছ। স্কুলে তার জন্য বাড়তি ছাড় পাও?

হিয়া: আগে আমার সিরিয়াল নিয়ে খুব কথা হত। ছোট থেকেই এই স্কুলেই পড়ছি যেহেতু, সবাই চেনে আমাকে। কথাও বলে তাঁরা। যখন আমি ‘আলো ছায়া’, ‘ফেলনা’র মতো সিরিয়ালগুলো করছি, স্কুলে ভীষণ সহযোগিতা করেছে। আমি অবশ্য শুটিংয়ের ফাঁকে ফাঁকে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি।

প্রশ্ন: ছোটবেলা থেকে টিভির পর্দায় হিয়াকে দেখেছে সহপাঠীরা। এখন তাঁদের কি প্রতিক্রিয়া পাও?

হিয়া: আগে আমার সিরিয়াল নিয়ে কথা হত। কিন্তু এখন অবশ্য এ সব নিয়ে আর আলোচনা হয় না।

প্রশ্ন: দর্শক প্রায়ই জানতে চায়, হিয়া কোথায়?

হিয়া: আমি বলতে চাই হিয়া বাড়িতে আছে। পড়াশোনা, লেখালিখি ও বই পড়া নিয়ে আছি। পাশাপাশি সম্পাদনার কাজ করতে খুব ভাল লাগে। সেটা শিখছি। আমি কোথাও নেই এখন। কোনও সমাজমাধ্যমেও নেই। না ইনস্টাগ্রাম, না ফেসবুক। মানে একেবারেই সক্রিয় নই। শুধু এটাই বলতে চাই, হিয়া বেঁচে আছে।

Potol kumar Gaanwala Fame Hiya dey exclusive interview and her where abouts shares her future plan

প্রশ্ন: মাঝেমধ্যে ইনস্টায় রিল বানাতে দেখা যেত হিয়াকে, বেশ কটাক্ষ করত লোকজন। সেই জন্যই কি দূরে সরে যাওয়া?

হিয়া: এটা বললে অনেকেই বিশ্বাস করবেন না। কিন্তু আমি কোনও দিন কমেন্ট পড়ি না। আসলে ভাল ভাবে বাঁচতে গেলে নেতিবাচক দিকে তাকানো যাবে না। আমি এক জন ‘পাবলিক ফিগার’, লোকে আমাকে চেনে। তাই এ ধরনের সমালোচনা করবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে কোনও কটাক্ষ, কোনও খারাপ মন্তব্য আমাকে কখনও আঘাত দিতে পারেনি।

প্রশ্ন: ইনস্টাগ্রাম রিল্‌স বানানো বন্ধের নেপথ্যে তা হলে কারণ কী?

হিয়া: আমার এখন আর রিলস্ বানাতে ভাল লাগে না। অনেক সময় লাগে। আমি বাড়িতে পরিবারের সঙ্গে থাকতে ভালবাসি। আমি খুব বোরিং।

প্রশ্ন: তোমার বয়সি ছেলেমেয়েরা যেমন আজকাল পড়াশোনা করছে, তেমনই সমাজমাধ্যমকে হাতিয়ার করে নেটপ্রভাবী হয়ে উঠছে। তোমার তেমন ইচ্ছে নেই?

হিয়া: হ্যাঁ, অনেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি এগুলো করে। কিন্তু আমার ইচ্ছা করে না। বড্ড সাজগোজ করতে হয়। তার পর আবার গান খুঁজতে হয়, অনেক সময় লাগে। যদিও আগে শুটিং করার সময় এ সব করতাম। কারণ, তখন করাটা সুবিধে ছিল। এখন মনে হয় এই সময়টা অন্য কিছু কাজে লাগালে ভাল হয়। এটা বলে দিতে পারি, আমি সে ভাবে কোনও সমাজমাধ্যমে নেই। কিন্তু আমার নামে অনেক ভুয়ো অ্যাকাউন্ট আছে।

প্রশ্ন: টিভির পর্দা নাকি চুম্বক! এক বার খ্যাতি পেয়ে গেলে ছাড়া সম্ভব হয় না। হিয়া কি সেই অসম্ভব কাজটা করছে?

হিয়া: হ্যাঁ, এক বার খ্যাতি পেয়ে গেলে সেটা ছাড়া খুব সহজ যেমন নয়, আবার কঠিনও নয়। আমি এই অভ্যেসটা করে নিতে পেরেছি। আমি এটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি। নিজের ইচ্ছেয় সব কিছু থেকে দূরে।

Potol kumar Gaanwala Fame Hiya dey exclusive interview and her where abouts shares her future plan

প্রশ্ন: হিয়ার নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও ইচ্ছে আছে?

হিয়া: আমি এখনও দেখছি কী করা যায়। কিন্তু পরিকল্পনা অনেক রয়েছে। তবে যেহেতু আমাদের ব্যবসায়ী পরিবার, তাই সেই দিকেই ইচ্ছে আছে কিছু করার। তাই বাণিজ্য শাখা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করে দিয়েছি।

প্রশ্ন: হিয়া খ্যাতির সঙ্গে একটা মোটা অঙ্ক রোজগার করত। এই এত কিছু থেকে দূরে সরে যাওয়া কি সহজ?

হিয়া: আমার টাকাপয়সা সব কিছু মা দেখত। আমি তখন জানতামও না কী টাকা পাচ্ছি। আমাকে টাকা না দিলেও করতাম। কারণ, অভিনয় করতে ভাল লাগত। আমি এত মানুষের ভালবাসা, এত জনপ্রিয়তা পেয়েছি যে সেটা অর্থের থেকে বড়।

প্রশ্ন: এখন ফের সেই প্রচারের আলোটা পেতে ইচ্ছে করে?

হিয়া: কিছু সময় সেটা পেতে ইচ্ছে করে। আবার কখনও মনে হয় অভিনেতা হওয়ার অনেক অসুবিধেও আছে। যত বড় হচ্ছি মনে হয় অসুবিধেটা বেশি। একই সঙ্গে যেহেতু কাজটা ভালবাসি, তখন কী কী সুবিধে রয়েছে সেগুলোও চোখে পড়ে।

প্রশ্ন: এখন ধারবাহিক শুরু হয়ে দু’মাসে শেষ হয়ে যাচ্ছে, পেশাটা বড্ড বেশি অনিশ্চিত বলে মনে হয়?

হিয়া: আমি যে সময় কাজ শুরু করেছি সেই সময়ের ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে এখনকার ইন্ডাস্ট্রির বিস্তর ফারাক। তখন দর্শক সিরিয়াল দেখত। আগে যেহেতু ওটিটি ছিল না, লোকে ৬টার সময় টিভি খুলে বসত পটলকুমার দেখার জন্য। এখন এত বেশি ওটিটি হয়ে গিয়েছে। এ ছাড়া কারও সময় নেই সন্ধ্যাবেলা টিভি খুলে সিরিয়াল দেখবে। আর টিআরপি-টা নির্ভর করে টিভির দর্শকের উপর। সত্যি বলতে আমার মনে হয়, আমি যখন কাজ করেছি তখন পরিস্থিতি অনেক ভাল ছিল। যদিও প্রতিকূলতাও দেখেছি অনেক। দিনে ২০ ঘণ্টা শুট করেছি, ঘুমোতাম না। সারা দিন কাজ করতাম। তবে আমি যেহেতু খুব দুষ্টু ছিলাম, শুটিংয়ের ফাঁকে ঠিক খেলার সময় বার করে নিতাম।

Potol kumar Gaanwala Fame Hiya dey exclusive interview and her where abouts shares her future plan

প্রশ্ন: এই অনিশ্চিত পেশার কারণেই পড়াশোনার উপর বাড়তি জোর?

হিয়া: (হেসে) পড়াশোনা করতে কারও ভাল লাগে না। কিন্তু, একটা ন্যূনতম পড়াশোনা করা তো প্রয়োজন। অনেকেই খ্যাতি পেয়ে গেলে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়। সেটা বড় ভুল। আমার মনে হয়, লোকে দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বোঝে না। আসলে জীবন মানেই অনিশ্চিত। ইন্ডাস্ট্রিতে যদি কাজ না থাকে তা হলে কিছু একটা করে পেট চালাতে হবে তো! তাই পড়াশোনা দরকার।

প্রশ্ন: পটলকুমারের শুটিংয়ের সময়কার কথা মনে পড়ে?

হিয়া: না, আমি অনেক কিছুই ভুলে গিয়েছি আসলে। সব টেকনিশিয়ান মিলে একটা সাইকেল উপহার দিয়েছিল। সেটা নিয়ে এ মাথা-ও মাথা করতাম, সেটা মনে আছে। সাহেব আঙ্কেল, পরিচালক স্বর্ণ আঙ্কেলকে মনে আছে। অনেকের সঙ্গে কাজ করেছি, এখন সব ভুলে গিয়েছে, মুখ দেখলে চিনতে পারি।

প্রশ্ন: হিয়া টিনএজার, এখন তো প্রেমের প্রস্তাব আসে। তুমি কি কোনও প্রস্তাব পেয়েছ?

হিয়া: হা হা, আমাকে ভয়ের চোটে কেউ বলতে পারে না। এটা ভাল।

প্রশ্ন: দেখলে তো খুব রাগী মনে হয় না হিয়াকে?

হিয়া: না, আমি একটু গম্ভীর থাকি, তাই এ রকম ভাবে। স্কুলে এখনও পর্যন্ত কোনও ছেলে সাহস করে উঠতে পারেনি যে কিছু উপহার দেবে, কিছু বলবে। এক দিকে ভাল, আবার হাসিও পায় আমার।

প্রশ্ন: নিদেনপক্ষে একটা চকোলেটও কেউ দেয়নি?

হিয়া: এটার উত্তর আমার মা দিক।

প্রশ্ন: হিয়া কি সত্যি বলছে?

হিয়ার মা: আসলে হিয়া অন্য রকম। ওর অনেক পরিবর্তন হয়েছে। ছোটবেলার হিয়ার সঙ্গে কোনও মিল নেই। ওর জগৎ বলতে ওর নিজের একটা ঘর। ওর কোনও চাহিদা নেই আসলে। একটা কেক কাটবে না, একটা নতুন জামা নেবে না। বরং জন্মদিনে ও দুঃস্থদের খাওয়াতে চায়। এখনকার ছেলেমেয়ে প্রেম করে, পার্টি করে। আমরা নিশ্চিন্ত ওকে নিয়ে। আমার মাস গেলে কোনও খরচা নেই মেয়ের পিছনে।

প্রশ্ন: মা তো খুব গর্বিত মেয়েকে নিয়ে। এত পরিবর্তন এল কোথা থেকে?

হিয়া: মায়ের কাছে এত ভাল কথা আগে শুনিনি। সত্যি বলতে, সবাই বাইরে গিয়ে পার্টি করে আনন্দ করে। আমি একটু আলাদা হতে চাই সকলের থেকে। আর আমি ভেবে নিয়েছি, জন্মদিনে কোনও পার্টি নয়। বরং যারা গরিব বাচ্চা আছে, তাদের খাওয়াব কিংবা অনাথ আশ্রমের বাচ্চাদের খাওয়াতে চাই। গত বছর থেকে শুরু করেছি এটা। এ বার থেকে প্রতি বছর এই সংখ্যাটা বাড়বে।

প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রির কার কার সঙ্গে যোগাযোগ আছে?

হিয়া: না, কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই। কেউ আমার সঙ্গে যেমন যোগাযোগ রাখেনি। আমিও নিজের থেকে খুব উদ্যোগী হয়ে ফোন করেছি তেমন নয়। ‘ভুতু’ ধারাবাহিকের আর্শিয়ার সঙ্গে মাঝেমধ্যে কথা হয়।

প্রশ্ন: পটলের কাছে ধারাবাহিকের কি প্রস্তাব আসছে?

হিয়া: প্রতি সপ্তাহে প্রস্তাব আসছে। কিন্তু মাকে বলেছি এখন কিছু করব না। আমার জীবনে কী হচ্ছে এখন, কেউ অতটা জানে না। কিছু সময় অবধি এটাই থাক। আবার সময় হলে দর্শকের সামনে আসব।

প্রশ্ন: শুটিং ফ্লোর মিস্ করে হিয়া?

হিয়া: না, আমি এখন করি না। কিন্তু আমার বাবা আমার সিরিয়ালের ছোট ছোট ক্লিপগুলো নিজে দেখে, জোর সাউন্ড দিয়ে আমাকেও শোনায়। তবে আমার খুব হাসি পায় এটা দেখে।

প্রশ্ন: ‘পটলকুমার’ পরিচয় থেকে বেরোতে পেরেছে হিয়া?

হিয়া: না না, আমি এখনও পর্যন্ত যা করেছি, যে ক’টা ধারাবাহিক করেছি ওটা দিয়েই চেনে। যখন ধারাবাহিকটা করতাম লোকে ‘পটলকুমার’ বলে ডাকত, তখন রেগে যেতাম। তখন অনেক ছোট ছিলাম, বুঝতে পারিনি। একটু বয়স বাড়ছে বুঝেছি। এটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছি এখন। ভাল লাগে।

Hiya Dey Celebrity Interview potol kumar gaanwala
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy