বারান্দা
পরিচালনা: রেশমি মিত্র
অভিনয়: ব্রাত্য বসু, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
৫/১০
বাড়িটা কলকাতার এক গলিতে। সেই বাড়ির লোহার জাফরি কাটা, কাঠের রেলিং দেওয়া বারান্দায় সারা দিন বসে থাকে গিরি— গিরিজাপতি বিশ্বাস। পাশে রাখা দুটো ক্রাচ। জাফরির ফাঁক দিয়ে গিরি চোখ রাখে রাস্তায়। রুনু তার বউ নয়, সঙ্গে আছে বহু দিন। সিঁদুরও পরে। কিন্তু রুনু কি ইদানীং একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলছে তার পেয়িং গেস্ট ‘দেওর’ অম্বরকে নিয়ে? অফিস থেকে বেরিয়ে কোথায় যায় রুনু? আর গিরির প্রাক্তন সহকর্মী মোহন? বছর পনেরো আগে কারখানায় মোহন একটু সতর্ক হলে কি গিরির অ্যাক্সিডেন্টটা হতো? সে দিন হয়তো বেঁচে যেত পা-টা।
গিরি ভালবাসে রুনুকে। কলেজপড়ুয়া রুনুও একদিন ভালবেসেছিল গিরিকে। কিন্তু পা-টা অকেজো হওয়ার পর থেকে খিটখিটে এক মানুষে বদলে যাচ্ছে সে। দিনভর গিরির চিন্তাস্রোত বয়ে চলে বারান্দায়। কখনও সন্দেহে, কখনও কুৎসিত অতীতে। সুখের খোঁজে হন্যে মন একাকী জগতে গড়ে তোলে একের পর এক দুঃস্বপ্ন। ‘বারান্দা’ উপন্যাসে মতি নন্দী ওই মনের গতিপথটাকে এঁকেছিলেন। সেই উপন্যাস অবলম্বনে রেশমি মিত্রের ছবি দেখতে গিয়ে তাই কৌতূহল থাকে সাদা-কালো-ধূসর মনটাকে নিয়েই। সিনেমা কোন ভাষায় ধরবে গিরির চিন্তাস্রোতকে? দেখা গেল, এ ছবিতে গিরি (ব্রাত্য বসু) যা-ই ভাবছে, নেপথ্যে চলছে তারই ভাষ্য— ‘‘আমি অমুক। তবে কি তমুকটা হয়েছে?’’ অন্তত তিরিশ শতাংশ সংলাপই নেপথ্যভাষণ।
আরও পড়ুন: দক্ষিণী সুপারস্টার
মূল গল্পের পথ ধরেই মোটামুটি এগিয়েছে ছবি। কিন্তু যেখানে গল্প থেকে সরেছে, সেখানেই কেমন তাল কেটেছে। রুনু (ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত) অম্বরকে (সাহেব ভট্টাচার্য) জাপটে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলে, ‘‘একটা ঝকঝকে সুস্থ মানুষকে কত দিন পরে দেখলাম।” চড়া দাগের লাগে দৃশ্যটাকে। একটা সময়ে মোহনের ফেলে যাওয়া রাম অবলীলায় গলায় ঢেলে দেয় দীর্ঘদিন মদ না-ছোঁয়া গিরি। ছবিতে কিন্তু তখন নচিকেতার গান বেজে ওঠে— ‘কোথায় গেলে যাবে পাওয়া, একটু খোলা হাওয়া।’ কী উদ্ধত নির্লিপ্তিতে শেষ হয় উপন্যাস। অথচ এ ছবির শেষে ‘জীবনের পথে এগিয়ে যাওয়ার’ উপদেশ শুনিয়ে যায় গিরি। কৃত্রিম ঝড়ে উড়তে থাকে রাশি রাশি শুকনো পাতা।
মোহনের গোপন সঙ্গিনী বুলির (মানালি দে) একটা চোখ অন্ধ। গিরি আর বুলি, দুটো ‘ভাঙা’ মানুষ শেষে জোড়া লেগে ‘আস্ত’ হতে চায়। সেই বুলিরই ‘অন্ধ’ চোখের কন্ট্যাক্ট লেন্স ক্লোজ আপে প্রকট। ক্রমাগত ফ্ল্যাশব্যাক, তখন গিরির মাথায় বেখাপ্পা পরচুলো। রাস্তায় মোবাইল কোম্পানির আউটলেট, অথচ বাড়িতে পুরনো এক রেডিয়ো। ডিটেলিং নিয়ে একটু আশা ছিল।
ব্রাত্য এই ছবির সম্পদ। ‘মোহন’ সুমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়, রুনুর মায়ের ছোট্ট চরিত্রে শ্রীলা মজুমদারকে ভাল লাগে। মানালি-সাহেব যথাযথ। এক সন্ধের বারান্দায় গিরি-রুনুর কথোপকথনের গভীর দৃশ্যটার মতো যেখানে যেখানে ঋতুপর্ণা সুযোগ পেয়েছেন, সেখানেই তিনি উজ্জ্বল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy