Advertisement
১১ মে ২০২৪
kaushik gangopadhyay

Kaushik Ganguly: লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশন... সংলাপের বদলে কবিতা আউড়ে ম্যাগি খাচ্ছেন কৌশিক!

কখনও ম্যাগি খাওয়ার দৃশ্য তো কখনও মাটিতে টান টান হয়ে শুয়ে পড়ছেন কৌশিক!

 কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:১৩
Share: Save:

আধো অন্ধকার ঘর। ভিতরটা ধোঁয়ায় ঢাকা। কিছু মানুষের অস্ফুট কণ্ঠস্বর। ভাল করে দেখা যাচ্ছে না কিছুই। তার মধ্যেই আবছা ভাবে নজরে দু’জনের চেহারা। সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি, কালো শাল গায়ে বিশাল বপুর এক প্রৌঢ়। মুখে একরাশ চাপদাড়ি, ঘন গোঁফ। চোখে চশমা। সামনে বসে হট প্যান্ট, গেঞ্জি পরা এক তরুণী। প্রৌঢ় ফিসফিসে গলায় তাঁকে বলছেন, ‘‘আমি ম্যাগি খাব। তুমি একটু পরেই চিৎকার করে উঠবে। কেমন?’’ মেয়েটিও বাধ্য মেয়ের মতোই ঘাড় নেড়ে সায় দিল। তার হাত সোফার সঙ্গে পিছমোড়া বাঁধা!

কিছু ক্ষণের মধ্যে গুঞ্জন শান্ত। প্রৌঢ়ের সামনে টিফিন বক্সে ম্যাগি! হঠাৎই অন্ধকার, ধোঁয়াশা ভেদ করে ভেসে এল লাইট-ক্যামেরা-অ্যাকশন। কোথায় সংলাপ, কোথায় কী? প্রৌঢ় তারিয়ে তারিয়ে ম্যাগি খেতে আরম্ভ করলেন! আজ্ঞে হ্যাঁ। এটাই সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্র্যাঙ্কেনস্টাইন’ সিরিজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্য! যার প্রধান আকর্ষণ ওই প্রৌঢ়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। দৃশ্যের খাতিরে যিনি নৈশভোজ সারার সময় পাননি। ফলে, বন্দিনীর সামনেই ম্যাগি খাচ্ছেন। তার আগে যদিও ‘বন্দিনী’ ওরফে ঈপ্সিতা কুণ্ডুকে ম্যাগি খাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু ‘প্র্যাঙ্কেনস্টাইন’-এর সামনে বসে এক সঙ্গে খানা খাওয়ার বুকের পাটা কি তার আছে? ‘প্র্যাঙ্কেনস্টাইন’ তত ক্ষণে ফিসফিসে গলায় সুকুমার রায়ের কবিতা আওড়াতে শুরু করেছেন, ‘শুনেছ, কী বলে গেল সীতানাথ বন্দ্যো, আকাশের গায়ে নাকি টক টক গন্ধ!’ তরুণী ঠকঠকিয়ে কাঁপছেন।

সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্র্যাঙ্কেনস্টাইন’ সিরিজের একটি  দৃশ্যে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এবং ঈপ্সিতা কুণ্ডু।

সাগ্নিক চট্টোপাধ্যায়ের ‘প্র্যাঙ্কেনস্টাইন’ সিরিজের একটি দৃশ্যে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় এবং ঈপ্সিতা কুণ্ডু।

মঙ্গলবার সকাল থেকে এ ভাবেই বারুইপুর রাজবাড়ি সরগরম। মিল্কি ওয়ে প্রযোজিত সিরিজটি দেখানো হবে ক্লিক ওয়েব প্ল্যাটফর্মে। আনন্দবাজার অনলাইনকে পরিচালক বলেছিলেন, ‘‘অনিকেত চট্টোপাধ্যায়ের সাদামাঠা ‘শঙ্কর মুদি’র হাতে পিস্তল দেখলে সাধারণ মানুষ যে ভাবে ঘাবড়ে যাবে, এই সিরিজে কৌশিকদাকে দেখে ঠিক তেমনই অনুভূতি হবে দর্শকদের।’’ টিকের ধুনোর ধোঁয়ায় অন্ধকার পুরনো আমলের বড় বড় ঘর। কৌশিকের নিভু নিভু গলার আওয়াজ শ্যুটের সময়েই গা ছমছমে পরিবেশ তৈরি করে দিয়েছে। কেন এই চরিত্রে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়? শ্যুট দেখতে দেখতে আনন্দবাজার অনলাইন প্রশ্ন রেখেছিল পরিচালকের কাছে। সাগ্নিকের জবাব, ‘‘কৌশিকদা অভিনীত প্রতিটি ছবি দেখতে দেখতে মনে হয়েছে, তিনি ছাড়া এই চরিত্র আর কেউ ফোটাতে পারবেন না। তাই সাহস করে সরাসরি যোগাযোগ করেছিলাম ওঁর সঙ্গে। চরিত্রটি শোনার পরেই জাতীয় পুরস্কার পাওয়া পরিচালক বলেছিলেন, এই চরিত্র আমিই করব। তুমি নিশ্চিন্তে থাক।’’

এবং প্রথম দিন থেকেই নাকি চরিত্রে বুঁদ হয়ে গিয়েছেন কৌশিক! কখনও ম্যাগি খাওয়ার দৃশ্য তো কখনও মাটিতে টান টান হয়ে শুয়ে পড়ছেন ! কখনও জ্বলন্ত দেশলাই ধরে হাড়হিম সংলাপ বলছেন ঈপ্সিতার সামনে। কখনও বা দৃশ্যগ্রহণের আগে সহ-অভিনেতার সঙ্গে আলোচনা সেরে নিচ্ছেন। তারই ফাঁকে হাসিমুখে আপ্যায়নও করছেন আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের। একপ্রস্ত শ্যুট শেষ হতেই আনন্দবাজার অনলাইনের মুখোমুখি জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত পরিচালক। বললেন, ‘‘পরিচালনার পাশাপাশি অভিনয় পেশা জীবনে এক ঝলক টাটকা বাতাস। তার উপরে একেবারে ভিন্ন ধরনের চরিত্র। ফলে, না বলতে পারিনি।’’ নতুন পরিচালক, নতুন মুখ। তাঁকেই কি শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হচ্ছে? কৌশিকের কথায়, ‘‘আমি ও পথে হাঁটছিই না। নিজের ছবিতে সব কিছুর দায়িত্ব পালন করি। তার থেকে মুক্তি পাব বলেই তো ফাঁকে ফাঁকে অভিনয় করা! যেখানে আমি শুধুই অভিনয় করব।’’ আরও সংযোজন, নতুনদের উত্তেজনা, আনন্দ, ভাল দৃশ্যগ্রহণের পরে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠা তিনি উপভোগ করছেন। ফেলে আসা দিনগুলোই যেন ফিরে ফিরে আসছে আবার। কৌশিক কখনও কাউকে প্র্যাঙ্ক করেছেন? অভিনেতার দাবি, তিনি একেবারেই এ সব পছন্দ করেন না। কাউকে ভয় দেখানো, কটাক্ষ করা থেকে সব সময় দূরে তিনি।

এই প্রজন্ম কৌশিকের কাছে টাটকা বাতাস। আর তাঁকে নিয়ে কী মত চার ‘প্র্যাঙ্কার’ ঈপ্সিতা, দীপ দে, শ্রীতা দে, রেমো-র? প্রশ্ন করতেই চোখমুখে বিস্ময়, শ্রদ্ধা, ভালবাসার মাখামাখি। চার জনেই সমস্বরে বললেন, ‘‘কৌশিকদা আমাদের কাছে যেন স্যালাইন। যে তরল পান করলেই নিমেষে চাঙ্গা হয় যে কেউ। দাদা সেটে পা রাখছেন। আমরা বাড়তি উৎসাহ পাচ্ছি। ভুলেও মনে করাচ্ছেন না, তিনি জাতীয় পুরস্কার পাওয়া পরিচালক। এক গুচ্ছ সফল ছবির অভিনেতা। আমাদের সঙ্গে দৃশ্য আলোচনা করে নিচ্ছেন। এর থেকে বড় পাওনা আর কী হতে পারে?’’ স্বপ্নও রয়েছে তাঁদের চোখে। যদি আগামী দিনে কৌশিকের কোনও ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পান তাঁরা!

কথার ফাঁকেই মধ্যাহ্নভোজের ছুটি। যে যার মতো করে বসে গেলেন রাজবাড়ির ছাদে পাতা চেয়ার-টেবিলে। সেখানে ধোঁয়া ওঠা ভাতের সঙ্গে মুরগির মাংস, ডিম। সবার জন্যই। অভিনেতা, কলাকুশলী এই একটি জায়গায় এক। সকলে মিলে পংক্তি ভোজনে ব্যস্ত। এখানেও অবশ্য ব্যতিক্রম কৌশিক। জড়ো হওয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে মগ্ন! একাধিক বার দৃশ্যের খাতিরে ম্যাগি খেতে হয়েছে। পেট ভরা? সঙ্গে সঙ্গে সামনে হাজির ‘বিসর্জন’ ছবির ‘গণেশ মণ্ডল’! তাঁর মতোই অমায়িক গলায় বললেন, ‘‘অতিথি নারায়ণ। আগে তাঁদের চাহিদা মেটাই। আপনারা লিখলে তবেই না নতুন কাজ দেখবেন দর্শক!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kaushik gangopadhyay Director Web Series
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE