Advertisement
E-Paper

দীপিকার অনেক আগে মা হয়েছি, পরিচালকেরা আমার সব শর্ত মেনে কাজ করেন, কখনও তা নিয়ে হেডলাইন হয়নি: শুভশ্রী

২০২৫ সালের প্রথম থেকে শেষ অবধি সবটাই শুভশ্রীময়। একের পর এক নতুন চরিত্রে দেখা যাচ্ছে তাঁকে। কাজ, সংসার, সন্তান—সবটা কী ভাবে সামলাচ্ছেন নায়িকা?

উৎসা হাজরা

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২৫ ০৮:৫৭
বাস্তবে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কে কোন প্রশ্ন না করলেই তিনি খুশি হন?

বাস্তবে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কে কোন প্রশ্ন না করলেই তিনি খুশি হন? ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: এখন শুধুই অনুমিতা সেনের চর্চা, পর্দার ‘ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্ট’। বাস্তবে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়কে কোন প্রশ্ন না করলেই তিনি খুশি হন?

শুভশ্রী: সাংবাদিকদের কাজই প্রশ্ন করা। তাঁরা যে কোনও প্রশ্ন করতে পারেন। নিজেরা প্রস্তুত হয়ে আসেন। সাংবাদিকদের প্রশ্ন করার ইচ্ছা থাকতেই পারে। আমাদের কাজ, সেই প্রশ্নকে আমরা কী ভাবে সামলাব বা এড়িয়ে যাব।

প্রশ্ন: তা হলে শুভশ্রীকে যে কোনও প্রশ্ন করা যায়?

শুভশ্রী: আমি আজ পর্যন্ত কাউকে কিছুতে বারণ করিনি। তবে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি তো মুম্বইয়ের কায়দায় চলে না। এখানে আমাদের পরস্পরের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগ রয়েছে। সবাইকে চিনি। কিন্তু সংবেদনশীল ভাবে যদি কেউ প্রশ্ন করেন, তা হলে কথা বলতে ভাল লাগে। এই আর কী!

প্রশ্ন: কিন্তু বর্তমানে যে ‘এমবার্গো’র ধারা তৈরি হয়েছে, এটা বলা যাবে, ওটা যাবে না—এই বিষয়ের কি খুব প্রয়োজন আছে বলে আপনার মনে হয়?

শুভশ্রী: সর্বক্ষেত্রে একটা সীমারেখা থাকা উচিত। যাঁরা বুদ্ধিমতী বা একটু সংবেদনশীল ভাবে সব কিছু ভাবার ক্ষমতা রাখেন, তাঁরা সেই সীমা লঙ্ঘনও করেন না। আসলে এটা না-বলা আদান-প্রদানের বিষয়। আবার কিছু কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা বুঝতে পারেন না, কতটা কথা বলা উচিত, কতটা নয়। তখন তাঁদের বোঝানোও দরকার।

প্রশ্ন: অনেক সাক্ষাৎকারেই আপনি বলেছেন, শুটিং সেটের শুভশ্রী কখনওই ব্যক্তিগত জীবনে তার সিনেমার ‘চরিত্র’ বহন করে না। কখনও নিজের সঙ্গে নিজের দ্বন্দ্ব হয়েছে?

শুভশ্রী: ব্যক্তি শুভশ্রী কখনও সেটে যায় না। যায় শুধু ‘মেহুল’, ‘তিতলি’ বা ‘অনুমিতা’রা। তবে আগে এই ‘সুইচ অন-সুইচ অফ্‌’ বিষয়টায় একটু অসুবিধাই হত। ‘পরিণীতা’র সময় যেমন মেহুল হয়েই বাড়ি ফিরতাম। তার পর...

প্রশ্ন: ইউভান হওয়ার পরেই কি নিজের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণের রাস্তা খুঁজে পেলেন?

শুভশ্রী: সেটাই বলতে যাচ্ছিলাম। ‘ইন্দুবালা ভাতের হোটেল’–এর সময়েও ওই চরিত্রের আবেগ থেকে বেরোতে সময় লেগেছিল আমার। তখন তো ইউভান হয়ে গিয়েছে। এখনও অবশ্য আমি সেই আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাকে প্রতি দিন ঝালিয়ে যাচ্ছি।

ব্যক্তি শুভশ্রী কখনও সেটে যায় না।

ব্যক্তি শুভশ্রী কখনও সেটে যায় না। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: টালিগঞ্জে নাকি দিনে ২০ ঘণ্টা কাজ চলে। সম্প্রতি দীপিকা পাড়ুকোন দিনে ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ না-করার দাবি জানিয়েছিলেন। সেই বিতর্ক জারি। আপনিও দুই সন্তানের মা। এ রকম অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে?

শুভশ্রী: হ্যাঁ, এই বিষয়টা নিয়ে অনেকেই নিজেদের মতামত দিচ্ছেন। এখানে অনেক বিষয় আছে, যা সবাইকে বুঝতে হবে। প্রথমত, মুম্বইয়ের ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে টালিগঞ্জের স্টুডিয়োপাড়ার অনেক পার্থক্য আছে। একটা ছবি তৈরি করতে ওঁরা যা সুবিধা পান, এখানে আমরা কেউ তা পাই না। প্রযোজক, পরিচালক, নায়ক-নায়িকা — কেউ পান না।

প্রশ্ন: তা হলে আপনার ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কেমন ছিল?

শুভশ্রী: যদি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা জানতে চাওয়া হয়, তা হলে বলব, কোনও দিন কোনও সমস্যায় পড়িনি। দীপিকার অনেক আগে আমি মা হয়েছি। সবাই জানেন, আমরা কতটা সীমিত বাজেট এবং সময়ের মধ্যে কাজ করি। কিন্তু যখন থেকে আমি মা হয়েছি, তার পর আমার শর্তাবলি অনুযায়ী কাজ করতে রাজি হয়েছেন পরিচালক, প্রযোজকেরা। আমি কিন্তু দিনে একটা নির্দিষ্ট সময় অবধিই কাজ করি। তা নিয়ে কেউ কখনও প্রশ্ন তোলেননি। কেউ শিরোনামও লেখেননি। কোনও কাজ থেকে বাদ পড়েছি, এমনও নয়। সবাই সম্মান দিয়েছেন।

প্রশ্ন: প্রযোজক বা পরিচালকের কাছের মানুষ হলে সহজে কাজ পাওয়া যায়। আপনার স্বামী রাজ চক্রবর্তী প্রযোজক এবং পরিচালকও। কিন্তু রাজের ছবি, সিরিজ়ে আপনার এত কম উপস্থিতি কেন?

শুভশ্রী: তাই! ভাল লাগল এটা বললেন। আসলে বেশির ভাগ সময় তো উল্টোটাই শুনি।

প্রশ্ন: রাজের প্রথম ওয়েব সিরিজ়ে আপনাকে দেখা যায়নি। আপনার ছবি বা সিরিজ়ের প্রচারেও যে রাজকে খুব দেখা যায়, তা নয়। এটা কি আপনাদের পরিকল্পিত কৌশল?

শুভশ্রী: কৌশল? অসম্ভব। এত ভাবিই না আমরা। দু’জনেই পরস্পরকে নিজেদের প্রাপ্য জায়গা দিতে পছন্দ করি। নিজেদের মধ্যে আলোচনা করি। যেমন, ‘সন্তান’ ছবিতে আমার যে অনেক বড় অংশ ছিল তা নয়। (হাসতে হাসতে বললেন) কাউকে পাওয়া যায়নি, তাই আমায় শ্রীকান্তদা (মোহতা, প্রযোজক) বলেছিলেন, যদি আমি করে দিই। রাজও বলেনি। ও ভেবেছিল, আমি করব না। শেষে শ্রীকান্তদার সঙ্গে আলোচনা হয়। এটা আমাদের আলাদা সমীকরণ। অনেক সময় আমিই রাজকে বলি, একটা ভাল প্রেমের ছবিতে অভিনয় করতে চাই। তখন ও বলে, পরে হবে, এখন সময় নেই। (উত্তর দিতে দিতে আবার সেই চেনা হাসি)।

শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় হিসাবে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেই কোনও প্রশ্ন করতে চাই না।

শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় হিসাবে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেই কোনও প্রশ্ন করতে চাই না। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: রাজনীতিক রাজ ,পরিচালক রাজ, স্বামী রাজ—এই তিন সত্তাকে আলাদা করতে পারেন?

শুভশ্রী: ভীষণ ভাবে পারি। ব্যারাকপুরে গেলে রাজ তখন পরিচালক নয়। ও তখন একেবারেই জননেতা। আবার শুটিং সেটে আদ্যোপান্ত পরিচালক। ওর সঙ্গী হিসাবে রাজের সব সত্তাকেই সম্মান করি আমি।

প্রশ্ন: ‘অনুসন্ধান’-এর প্রচার-ঝলক দেখে মনে হচ্ছে, পরোক্ষভাবে রাজনীতির ছায়া দেখা যাবে। আপনার বাড়িতেই এক জন রাজনীতিক আছেন। সুযোগ পেলে...

শুভশ্রী: আপনার প্রশ্ন শেষ হওয়ার আগেই একটা কথা বলতে চাই।

প্রশ্ন: হ্যাঁ, বলুন।

শুভশ্রী: শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায় হিসাবে কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকেই কোনও প্রশ্ন করতে চাই না। আপনি এরকমই কিছু হয়তো জানতে চাইছিলেন।

প্রশ্ন: খানিকটা। কিন্তু কেন চান না?

শুভশ্রী: প্রথমত, রাজনীতিটা একটা আলাদা জগৎ, যেটা নিয়ে আমার সে ভাবে চর্চা নেই। হয়তো আমার নিজস্ব মতামত থাকতে পারে। কিন্তু সেটা নিয়ে চর্চা নেই। তাই রাজনীতিককে প্রশ্ন করার মতো জায়গায় আমি নেই। আর অনুমিতা তো সিরিজে যা করার করেই দিয়েছে। কিন্তু ব্যক্তি শুভশ্রীর কোনও প্রশ্ন নেই কোনও রাজনীতিকের কাছে। মতাদর্শ আছে। বাড়িতে চায়ের আড্ডায় রাজনীতি নিয়ে হয়তো আলোচনা করি। সব বাঙালিই সেটা করে থাকে। কিন্তু তা বলে কাউকে কোনও প্রশ্ন করতে চাই না।

আমাদের ইন্ডাস্ট্রি মুম্বইয়ের কায়দায় চলে না।

আমাদের ইন্ডাস্ট্রি মুম্বইয়ের কায়দায় চলে না। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: এক বার আপনিই বলেছিলেন, এখন জীবনের যে পর্যায়ে রয়েছেন আপনি, সবটাই সুপরিকল্পিত। আগামী পাঁচ বছরে কি তা হলে নিজেকে রাজনীতিক হিসাবে দেখতে পাচ্ছেন?

শুভশ্রী: না, আমি নিজেকে দেখতে পাই না। কিন্তু এটাও বিশ্বাস করি, কোনও কিছুতে সটান ‘না’ বলে দিতে নেই। কারণ, যেটা বলা হয়, তার উল্টোটাই ঘটে যায় অনেক সময়। কিন্তু আমাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, রাজনীতিক হওয়ার ইচ্ছা আছে কি না, তা হলে বলব রাজনীতি নিয়ে সেই পড়াশোনা বা ইচ্ছা কোনওটাই নেই। আপাতত নিজের কাজ এবং পরিবার নিয়ে খুব খুশি আমি।

প্রশ্ন: ২০২৫-এর পুরোটা জুড়েই তো শুধু আপনি। তা সমাজমাধ্যম হোক কিংবা প্রেক্ষাগৃহ। সমাজমাধ্যমে সারা ক্ষণ নিজের অস্তিত্ব রাখার প্রয়োজনীয়তা কতটা বলে আপনার মনে হয়?

শুভশ্রী: এটা না প্রতিটা মানুষের একেবারেই নিজস্ব ব্যাপার। যেমন রণবীর কপূর, রানি মুখোপাধ্যায় এখনও সমাজমাধ্যমে নেই। অন্য দিকে অমিতাভ বচ্চন ভীষণ সক্রিয়। উনি উপভোগ করেন। আমি যেমন উপভোগ করি। মনে হয় দর্শকের সঙ্গে যোগাযোগে থাকতে পারছি সারা ক্ষণ।

প্রশ্ন: এই সমাজমাধ্যমে আপনাকে তো সমালোচিতও হতে হয়। এমনকি, কেন আপনি ছেলেমেয়ের সঙ্গে ইংরেজিতে কথা বলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন সবার মনে। ইয়ালিনি, ইউভান বড় হলে ওরাও প্রশ্ন করতে পারে। আপনি কি প্রস্তুত?

শুভশ্রী: ওরা যে ভাবে বড় হচ্ছে, যাঁদের সঙ্গে বড় হচ্ছে, তাঁরা খুব ইতিবাচক। নেতিবাচকতা ধারেকাছেও আসতে পারে না। সুতরাং, ওরাও এ রকমই তৈরি হবে। কে কী বাজে কথা বলল, সেগুলোয় আমার বাচ্চারা কান দেবে বলে মনে হয় না। তাই কোনও প্রশ্ন আসবে বলেও মনে হয় না।

রাজনীতিটা একটা আলাদা জগৎ, যেটা নিয়ে আমার সে ভাবে চর্চা নেই।

রাজনীতিটা একটা আলাদা জগৎ, যেটা নিয়ে আমার সে ভাবে চর্চা নেই। ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: এই মুহূর্তে সমাজমাধ্যমে আপনাকে ‘লেডি সুপারস্টার’ বলে সম্বোধন করা হয়। নিজেকে কি সত্যিই ‘সুপারস্টার’ বলে মনে করেন?

শুভশ্রী: অনুরাগীরা ভালবেসে আমাকে এই তকমা দিয়েছে। আমি আপ্লুত। কিন্তু এমন কোনও তকমায় আমি বিশ্বাসী নই। এই সব কিছুই অস্থায়ী। বরং কাজে মন দিতে চাই। কারণ, আমার কাজ এবং অভিজ্ঞতা কেউ কেড়ে নিতে পারবে না আমার থেকে।

প্রশ্ন: শুভশ্রী, মিমি চক্রবর্তী, শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়—আপনাদের পর আর কেন নায়িকা তৈরি হচ্ছে না?

শুভশ্রী: নতুন প্রজন্মের কৌশানী আছে। ওর পর আর কেউ সে ভাবে উঠে আসছে না। আর আমরা তো চাইবই সব সময় ‘ব্যাট’ করতে। কারণ, আমাদের অনুপ্রেরণা ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, অপর্ণা সেন। নতুন প্রজন্মের কেউ যে সুযোগ পাচ্ছে না, তা নয়। আমার মনে হয়, এ ক্ষেত্রে সঠিক উত্তর দিতে পারবেন প্রযোজক, পরিচালকেরা।

Subhashree Ganguly Celebrity Interview New Bengali web series
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy