Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

নতুন রবি পরীক্ষা

বেশ উদ্বিগ্ন তিনি। রবীন্দ্রনাথের না-পাওয়া সুরের কিছু গানে সুর দিলেন যে স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত। কথা বললেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায়৭ অগস্ট বাইশে শ্রাবণ। রবীন্দ্রনাথের চলে যাওয়ার পঁচাত্তর বছর। সেই পঁচাত্তরকে মনে করে রবীন্দ্রনাথের না-পাওয়া সুরের কিছু গানে, সুর করলেন স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত। ‘গীতবিতান’-এর না-পাওয়া সুরের গানের সংখ্যা নিয়ে আজও বিতর্ক আছে।

স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত। —ফাইল চিত্র।

স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত। —ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৬ ০০:৩৮
Share: Save:

৭ অগস্ট বাইশে শ্রাবণ। রবীন্দ্রনাথের চলে যাওয়ার পঁচাত্তর বছর। সেই পঁচাত্তরকে মনে করে রবীন্দ্রনাথের না-পাওয়া সুরের কিছু গানে, সুর করলেন স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত।

‘গীতবিতান’-এর না-পাওয়া সুরের গানের সংখ্যা নিয়ে আজও বিতর্ক আছে। কেউ বলেন সংখ্যাটা সাড়ে পাঁচশোর আশেপাশে। তবে স্বাগতালক্ষ্মী বলছেন, ‘‘সংখ্যাটা একশো সাতাশির কিছু বেশি।’’

এমন একশো গানে সুর দিলেন শিল্পী নিজে। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে বেঁচে আছেন তিনি। কখনও রবীন্দ্রনাথের গানের ইংরেজি অনুবাদ করছেন, কখনও বা আঁকছেন সে গানের ছবি। কখনও গীতার সঙ্গে মিলিয়ে দিচ্ছেন রবীন্দ্রনাথের পূজার গান। দশ বছর আগে গেয়ে ফেলেছেন ‘গীতবিতান’-এর সব ক’টি গান।

‘গীতবিতান’ই তাঁর একলা পথের বন্ধু। রাতে ঘুমোনোর আগে প্রতিদিন তিনি গান পড়েন। তাঁর প্রত্যেক ঘরে রাখা একটা করে ‘গীতবিতান’। এ কী ধরনের পাগলামি! ‘‘পাগলামি ছাড়া কোনও কাজ করতে পারি না। রবীন্দ্রনাথের কিছু গান যার সুর পাওয়া যায় না, সেই সব গানে সুর করার নেশা, হঠাৎ পেয়ে বসল আমায়।’’ বলেই গেয়ে উঠলেন নতুন সুরের রবীন্দ্রনাথের গান।

গায়িকা হতে চাননি। চেয়েছিলেন কম্পোজার হতে। মনে হয়েছিল লতা, আশা (ভোঁসলে), মহম্মদ রফি, কিশোর কুমার, হেমন্ত (মুখোপাধ্যায়) যা গেয়ে দিয়েছেন তার পর আর কী গান হবে! কিন্তু ছোটবেলা থেকে গানে সুর দেওয়ার ইচ্ছেটা থেকে গিয়েছিল। অনেক দিনের সেই ইচ্ছে এ বার সুর পেল।

ইতিমধ্যে নতুন সুর দেওয়া পঁচাত্তরটি গান রেকর্ডও করে ফেলেছেন স্বাগতালক্ষ্মী। ‘‘সুর দিলেও রবীন্দ্রনাথের গানে কিন্তু স্টিম রোলার চালাইনি। হঠাৎ করে জ্যাজ বা ড্রাম বেজে উঠল, এমন চমক নেই।’’

বাউলাঙ্গ, টপাঙ্গের গান যেমন রয়েছে তেমন ললিত-পূরবী, বেহাগ রাগের সুর এসেছে সৃষ্টিতে। বিয়ের গান, ব্রহ্মসঙ্গীত, ‘ভানুসিংহের পদাবলী’র নানা পর্যায় নিয়ে কাজ করা হয়েছে।

তিনি যদিও এ কাজে প্রথম নন। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশাতেই সুর দিয়েছেন পঙ্কজকুমার মল্লিক। দেবব্রত বিশ্বাস, শান্তিদেব ঘোষও রবীন্দ্রনাথের কথায় সুর দিয়েছেন। ‘‘নেট ঘাঁটতে ঘাঁটতেই খুঁজে পাই দেবব্রত বিশ্বাসের সুর দেওয়া ‘আমার হারিয়ে যাওয়া দিন’ গানটা। ইস...এই সময় যদি সুচিত্রাদিকে (মিত্র) পেতাম, মোহরদি (কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়) থাকতেন...’’ আফশোস স্বাগতালক্ষ্মীর গলায়। ৮ অগস্ট কলামন্দিরে তাঁর সিডি প্রকাশ অনুষ্ঠান।

নিজেকে এমন একটা পরীক্ষার সামনে দাঁড় করালেন, ভয় করছে না? ‘‘বেশ ভয় করছে। মানুষ হয়তো ভাববে, আমি কোথাকার কে, যে রবীন্দ্রনাথের গানে সুর দিয়ে বসলাম। যারা এই গান শুনে রেগে যাবেন তাদের যুক্তি আমি মাথা পেতে নেব।’’ বললেন স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত।

হঠাৎ একটি সিডি কোম্পানি থেকে দু’টি স্বদেশ পর্যায়ের গানে সুর করার অনুরোধ আসে তাঁর কাছে। সেখান থেকে শুরু। সুর করার সময় শিল্পী আরেকটি বিষয় মাথায় রেখেছিলেন। জানালেন, “রবীন্দ্রনাথের বেশির ভাগ গান পিওর রাগে চলাচল করেনি। ‘গভীর রাতে ভক্তি ভরে কে জাগে’-গানে যেমন লেখা ছিল কানাড়া রাগ। কথার দিকে খেয়াল রেখে এই গানে কানাড়ার সঙ্গে আড়ানা মিলিয়ে দিলাম।” নতুন প্রজন্ম কি এই সুর শুনবে? ‘‘নতুন প্রজন্মের জন্যেই এ কাজ করা। কোনও দিন ভাবিনি এ যুগের ছেলে-মেয়েরা ইউটিউবে আমার গান শুনবে। আমেরিকা, সুইডেনে ‘একলা গীতবিতান’ নিয়ে গান শিখবে। সবটাই পড়ে পাওয়া ষোলো আনা,’’ বলেই পিয়ানোয় নতুন সুর তুললেন— ‘আমার হারিয়ে যাওয়া দিন আর কি খুঁজে পাব তারে/ বাদল দিনের আকাশ পারে ছায়ায় হল লীন’

বর্ষার মেঘলা দুপুর সেই ভৈরবীর গানে যেন আরও বিষণ্ণ হল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

swagatalakshmi dasgupta Rabindranath Tagore
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE