Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
KIFF2022

‘নবমী’র সন্ধ্যায় চলচ্চিত্র উৎসবের মেজাজ ধরে রাখল সৃজিত-মিথিলার প্রশ্নোত্তর

চলচ্চিত্র উৎসবের আলোচনাসভায় সৃজিত এবং মিথিলা। দু’জনের প্রশ্নোত্তর পর্ব চুটিয়ে উপভোগ করলেন শ্রোতারা।

চলচ্চিত্র উৎসবে আলোচনা সভায় মানস মুকুল পাল, অরিন্দম শীল, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, প্রসূন চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবং রাজ চক্রবর্তী।

চলচ্চিত্র উৎসবে আলোচনা সভায় মানস মুকুল পাল, অরিন্দম শীল, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, প্রসূন চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য এবং রাজ চক্রবর্তী। ছবি: সংগৃহীত।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ডিসেম্বর ২০২২ ১৯:৪৭
Share: Save:

চলচ্চিত্র উৎসবের আলোচনা সভায় সঞ্চালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়। দর্শকাসনের প্রথম সারি থেকে এমন প্রশ্ন উড়ে এল, যা শুনে সৃজিত বোধ হয় একটু লজ্জাই পেলেন। কারণ প্রশ্নকর্তা আর কেউ নন, স্বয়ং পরিচালকের ঘরনি মিথিলা। সৃজিত বললেন, ‘‘বুঝতে পারছি প্রশ্নটা আমার উদ্দেশে।’’ তাঁকে থামিয়ে দিয়ে অরিন্দম শীল বললেন, ‘‘সৃজিত সব শেষে উত্তর দেবে। কারণ ও শেষ কথা বলে।’’ যা শুনে বুধবার বিকেলে নন্দন চত্বরের বাংলা অ্যাকাডেমির সভাকক্ষে শ্রোতাদের মধ্যে হাসির ফোয়ারা ছুটল। মিথিলার প্রশ্ন ছিল, কম সময়ের মধ্যে বছরে দু-তিনটি ছবি বা ওয়েব সিরিজ় তৈরির বাধ্যবাধকতায় শিল্পের মান কি সব সময় ঠিক রাখা সম্ভব? সৃজিতের উত্তর, ‘‘অবশ্যই সম্ভব। বাজারের চাহিদা মাথায় রেখে যেমন ভাল কাজ করা সম্ভব, তেমনই বিপরীতটাও সত্য।’’

এই মুহূর্তে বাংলার প্রেক্ষাগৃহে দু’টি ছবি সফল ভাবে চলছে। একটি ‘দোস্তজী’। অন্যটি ‘বল্লভপুরের রূপকথা’। প্রথমটি তৈরি করে সবে ইন্ডাস্ট্রিতে পা রেখেছেন পরিচালক প্রসূন চট্টোপাধ্যায়। আর দ্বিতীয়টির পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্য ইন্ডাস্ট্রির ভিতরে থেকেই তৈরি করেছেন তাঁর প্রথম ছবি। উভয়ের মধ্যে কি কোনও সূক্ষ্ম বিভেদরেখা রয়েছে? বাংলা চলচ্চিত্রের নতুন ভাষা তা হলে কী ভাবে নির্ণয় করা যাবে?

বুধবার কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে টলিপাড়ার সদস্যরা এ রকমই এক মনোজ্ঞ আলোচনায় মাতলেন। বিষয় ছিল, ‘নতুন যুগের চলচ্চিত্র ভাষা’। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের সঞ্চালনায় অনির্বাণ ও প্রসূন ছাড়াও শ্রোতাদের সামনে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরলেন অরিন্দম শীল, রাজ চক্রবর্তী, মানস মুকুল পাল। প্রসূনের কথায়, ‘‘সিনেমার নতুন ভাষা আমার জানা নেই। কাহিনি এবং চিত্রনাট্যের উপরেই নির্ভর করে ছবির ভাষা।’’ ছবির প্রয়োজনেই বছরের বিভিন্ন সময়ে শুটিং করেছিলেন প্রসূন। সৃজিত বললেন, ‘‘বাজারের চাহিদার বাইরে থেকে ছবি তৈরি করে তার পর প্রসূনের ছবি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে। অর্থাৎ, ও আবার সিস্টেমে ফিরে এসেছে। আমার মতে এটাই সিনেমার নতুনত্ব।’’ এই প্রেক্ষিতেই অরিন্দম বললেন, ‘‘আমার কাছে পাকিস্তানের ‘জয়ল্যান্ড’ চলচ্চিত্রের নতুন ভাষা। কারণ পরিচালক ছবিটা পাকিস্তানে বসে তৈরি করেছেন। ছুড়ে দিয়েছেন নারী ক্ষমতায়নের বার্তা।’’

বুধবার বিকেলে নন্দন চত্বরে উপচে পড়ল সিনেপ্রেমীদের ভিড়।

বুধবার বিকেলে নন্দন চত্বরে উপচে পড়ল সিনেপ্রেমীদের ভিড়। ছবি: সংগৃহীত।

ছবির ক্ষেত্রে আপস না করার চেষ্টাও কখনও কখনও ছবিকে নতুন দিকে নিয়ে যায়। যেমন ‘সহজ পাঠের গপ্পো’-র পর বিগত কয়েক বছর ধরে বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তর ‘বায়োপিক’ তৈরির চেষ্টা করছেন মানস। কিন্তু জানালেন, আপস করবেন না বলে প্রযোজকের প্রস্তাব তিনি ফিরিয়ে দিয়েছেন।

শুটিং থাকার কারণে এই আলোচনায় বেশ কিছুটা দেরি করেই এলেন অনির্বাণ। তথাকথিত শহরকেন্দ্রিক ছবির ভিড়ে একটু ‘গ্রামীণ’ ছবি বাংলার দর্শক দেখতে পছন্দ করেছেন। এর পিছনে অনির্বাণ মানুষের ‘বাজারের চাহিদায় ক্লান্তিকর জীবন’ থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদের কথাই উল্লেখ করেন। বিপরীতে রাজ জোর দিলেন বাজারের চাহিদা এবং সিনেমা অর্থনীতির উপর। তাঁর কথায়, ‘‘শুনতে খারাপ লাগলেও আমার কাছে সিনেমা মানে ব্যবসা। আমার কাছে সেই চিত্রনাট্যই গুরুত্ব পায়, যা দর্শককে প্রেক্ষাগৃহে টেনে আনবে।’’ অরিন্দম যেমন বললেন, ‘‘বাংলা ইন্ডাস্ট্রিতে যে কঠিন পরিস্থিতি এবং বাজেটে ছবি তৈরি হয়, দর্শক সেটা বুঝতে পারলে নিশ্চয়ই প্রেক্ষাগৃহে আসবে।’’ সৃজিত আলোচনায় ইতি টানলেন এই বলেই যে, ভাল ছবি তৈরিই পরিচালকের মূল উদ্দেশ্য। সেটা করতে পারলে সিনেমাতে স্বাভাবিক ভাবেই নতুন ভাষা তৈরি হবে।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার চলচ্চিত্র উৎসবের শেষ দিন বলে বুধবার সন্ধ্যায় নন্দন চত্বরে সিনেপ্রেমীরা ভিড় উপচে পড়ে। সন্ধ্যায় ভিক্টর মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ‘লকড়বগ্গা’ দেখতে দর্শকদের উৎসাহ ছিল নজরকাড়া।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

KIFF2022
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE