বাঙালি ইদানীং নাকি প্রেক্ষাগৃহে ফিরছে, এমনই শোনা যাচ্ছে। যেমন, এ বছর স্বাধীনতা দিবস, জন্মাষ্টমী মিলিয়ে পর পর তিন দিন ছুটি। বড় পর্দায় বড় বাজেটের তিনটি ছবি। তার মধ্যে দুটো হিন্দি, একটি বাংলা। হৃতিক রোশনের ‘ওয়ার ২’, রজনীকান্তের ‘কুলি’, দেব-শুভশ্রীর ‘ধূমকেতু’। কলকাতা এবং শহরতলিতে তিন দিনের বাণিজ্যে কোনটা কী ফলাফল করল? জানতে আনন্দবাজার ডট কম যোগাযোগ করেছিল তিনটি ছবির পরিবেশক এবং উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার কয়েকজন হলমালিকের সঙ্গে।
দক্ষিণ কলকাতার প্রেক্ষাগৃহ নবীনায় রমরমিয়ে চলছে ‘ধূমকেতু’ আর ‘কুলি’। তিন দিনে কেমন ব্যবসা হল? হলমালিক নবীন চৌখানি শুরুতেই জানালেন, তাঁর হলে সাধারণত চারটি শো চলে। ‘ধূমকেতু’র সাফল্যের কারণে একটি শো বাড়াতে হয়েছে। এখন নবীনায় পাঁচটি শো। তার মধ্যে তিনটি শো পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের দখলে। নবীন বলছেন, “বৃহস্পতিবার দেব-শুভশ্রীর ছবি মুক্তি পেয়েছে। ওই দিন থেকে রবিবার পর্যন্ত তিনটি শো হাউসফুল। ছবিটি তিন দিনে আয় করেছে ৮ লক্ষ টাকা।” আর রজনীকান্তের ছবি? ওটিও ভাল ফল করছে বলে জানালেন নবীন। রাতের শো-তেও প্রচুর দর্শক দেখতে আসছেন। এর আয় ৪ লক্ষ টাকা। ‘কুলি’ কি তিনটি শো পাবে? “এই ফলাফলের পরে কোনও প্রশ্নই নেই”, বক্তব্য দক্ষিণ কলকাতার হলমালিকের। অর্থাৎ, ‘ধূমকেতু’ যেমন চলছিল তেমনই চলবে নবীনায়।
কমবেশি প্রায় একই ছবি উত্তর কলকাতার দুটো প্রেক্ষাগৃহে। বিনোদিনী থিয়েটার এবং প্রাচী। বিনোদিনীতে চারটি শো-তেই ‘ধূমকেতু’। “চারটি শো-ই পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহ। যতটা আশা করেছিলাম তার থেকেও বেশি আয় করেছে ছবি। আমি খুশি”, দাবি হলমালিক জয়দীপ মুখোপাধ্যায়ের। তবে আয়ের অঙ্ক জানাতে রাজি নন তিনি। তাঁর মতে, এই দায়িত্ব প্রযোজকের। ‘ধূমকেতু’কে চারটে শো দিয়ে কোনও আফশোস নেই তাঁর। এও জানিয়েছেন, এই ফলাফলের নেপথ্যে অনেকটা জুড়ে রয়েছে সরকারি সিদ্ধান্ত। সরকার যদি রোজ প্রাইম টাইম শো-তে বাংলা ছবি চালানোর নির্দেশ না দিত তা হলে হয়তো এই সাফল্য ধরা দিত না।
প্রাচী সিনেমাহলে ‘ওয়ার ২’ তিনটি শো পেয়েছে। প্রাইম টাইম শো-তে ‘ধূমকেতু’। তিনটি শো পেয়ে কি এগিয়ে রয়েছেন হৃতিক? নাকি, বাণিজ্যে সমানে সমানে টক্কর? প্রেক্ষাগৃহের কর্ণধার বিদিশা বসুর কথায়, “‘ধূমকেতু’ই রাজত্ব চালাচ্ছে। এই প্রজন্মের দর্শকেরা হৃতিকের ছবি দেখতে আসছেন। দেবের ছবির দর্শক কিন্তু সব বয়সি। এবং মেয়েদের সংখ্যা তুলনায় বেশি।” তিনিও ‘শো প্যাটার্ন’ ভাঙবেন না, জানিয়ে দিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
তা হলে শহরে এবং শহরতলিতে তিন দিনে ‘ধূমকেতু’র বাণিজ্য কেমন? প্রশ্ন ছিল ছবির প্রযোজক রানা সরকারের কাছে। তিনি হিসাব দিয়ে বলেন, “বৃহস্পতিবার, ছবিমুক্তির দিন ১৫৩টি প্রেক্ষাগৃহ পেয়েছিলাম আমরা। সারা বাংলায় এ দিন ছবির সমস্ত শো হাউসফুল। স্বাধীনতা দিবস অর্থাৎ শুক্রবার মোট ৪০০টি শো পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহ ছিল। তৃতীয় দিন, শনিবার দর্শকের চাহিদায় হলসংখ্যা বেড়ে ১৫৭টি। তাল মিলিয়ে বেড়েছে শো সংখ্যাও। ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার শো-তেও একটা আসন ফাঁকা নেই।” শনিবার রাতেই রবিবারের সমস্ত টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। সেই অনুযায়ী তিন দিনের মোট আয় সাত কোটির বেশি।
এর মধ্যে কত টিকিট দেব ফ্যান ক্লাব কিনেছে? বিষয়টি অস্বীকার করেননি প্রযোজক। জানিয়েছেন, ছবিমুক্তির দিন শহরের তিন-চারটি প্রেক্ষাগৃহের টিকিট দেবের অনুরাগীরা কিনেছিলেন। বাকি সমস্তটাই স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে দর্শকেরা কিনছেন।