রবীন্দ্রনাথের ছবি বাঁধাই হয়ে এসেছে তাঁর বাড়িতে। দেওয়ালে সাজছে ‘সহজ পাঠ’।
প্রশ্ন: আপনার চিরসখা কে?
লীনা: রবীন্দ্রনাথ।
প্রশ্ন: আপনার সাম্প্রতিক ধারাবাহিক ‘চিরসখা’ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দর্শকমনে জায়গা করে নিয়েছে। কোন বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিয়েছিলেন?
লীনা: সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের গল্প আমার কাজের মাধ্যমে উঠে এসেছে। সে ভাবেই মনে হয়েছিল, আমাদের অনেকের জীবনে এমন অনেক সম্পর্ক রয়েছে যেগুলো নিয়ে সোচ্চারে কথা বলা যায় না। খুব আধুনিক বাড়িতেও তো দেখেছি, বাড়ির বিধবা বৌয়ের উপর নানা বাধানিষেধ থাকে। এমনিতেই বিধবা মেয়েদের যেন ‘আলাদা’ করে দেওয়া হয়। প্রান্তিক করে দেওয়া হয়। সেখান থেকেই এই গল্পের সূত্রপাত।
আরও পড়ুন:
প্রশ্ন: এই প্রবণতার বদল কি আদৌ সম্ভব?
লীনা: হ্যাঁ। সে ক্ষেত্রে মেয়েটিকে খুবই শক্ত হতে হবে। জীবন তো কারও জন্য থেমে থাকে না, এটা তাকে আগে বুঝতে হবে। সমাজেও প্রকাশ করতে হবে।
প্রশ্ন: ধারাবাহিকের কমলিনী চরিত্রর মধ্যে দিয়ে বহু নারীর কথা উঠে এসেছে। ছোট পর্দার পর, বাস্তবে মহিলা কমিশনের শীর্ষে থেকে কোনও ফারাক চোখে পড়েছে?
লীনা: সে রকম নয়। আসলে কমিশনে এই ধরনের কোনও সমস্যা নিয়ে তো কেউ আসেন না। বরং আমি বাস্তবে যা যা দেখেছি, তারই একটা ছায়া গল্পের মধ্যে রয়েছে।
প্রশ্ন: ধারাবাহিকে ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে বিধবা কমলিনীর যোগ দেওয়া নিয়ে খুব বাস্তব কিছু সমস্যা তুলে ধরেছেন। এটা কি একজন মহিলা কাহিনিকার বলে সহজ হল?
লীনা: অবশ্যই। এর আগে ছোট পর্দার জন্য কোনও পুরুষকে তো এই বিষয় নিয়ে লিখতে দেখিনি। আসলে পুরুষ এবং নারীর দৃষ্টিভঙ্গি তো আলাদা। কিন্তু এই ধারাবাহিক দর্শক একটানা কী ভাবে গ্রহণ করবে? তা নিয়ে আমার সংশয় রয়েছে!
প্রশ্ন: কেন?
লীনা: আমার সংলাপ লেখার ধরন আলাদা। এখন যে ভাবে বাংলা শুনি, দেখি— তার পর আমার এটাই মনে হয়েছে। বাংলা বলাটাই বদলে যাচ্ছে।কিন্তু আমি এত দিন যে ঘরানায় কাজ করেছি, সেখান থেকে সরে আসতে পারব না। তাতে আমার ধারাবাহিক যদি চার জন কম দেখেন, তাতে কোনও ক্ষতি নেই। ‘শ্রীময়ী’র সময় শুরুতে টিআরপি ছিল ২.৭। সেখান থেকে শেষে শীর্ষস্থান দখল করে। ভাল কাজ দেখানোরও একটা দায়িত্ব থাকা উচিত। আমি সেটাই করতে চাই।

‘চিরসখা’ ধারাবাহিকের একটি দৃশ্যে (বাঁ দিকে) অপরাজিতা এবং সুদীপ। ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: কমলিনীর চরিত্রে অপরাজিতা ঘোষ দাস এবং স্বতন্ত্রের চরিত্রে সুদীপ মুখোপাধ্যায় কেন?
লীনা: অপরাজিতা ভাল অভিনেত্রী। আর বয়সের দিক থেকে এই চরিত্রে সুদীপকেই যোগ্য মনে হয়েছে।
প্রশ্ন: এই দুই চরিত্রের মুখে একে অপরের প্রতি ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ। আপনি যখন লেখেন, সেই অনুভূতি কি অনায়াসে লেখনীর মধ্যে চলে আসে না কি কোথাও তার মধ্যে লীনা নিজেই প্রবেশ করেন?
লীনা: সম্পর্ক নিয়ে কাজ করতে ভাল লাগে। আর এই ঘটনাগুলো এত দেখেছি, যে লিখতে গিয়ে অসুবিধা হয় না। ছোটবেলায় এ রকম অনেক সম্পর্ক দেখেছি, যার গুরুত্ব এখন বুঝতে পারি। আমার ছোটবেলার এক বন্ধুকে দেখেছি, বিয়ের প্রথম দিনেই স্বামী বলে দিলেন, ‘‘আমি তোমাকে বাড়ির চাপে বিয়ে করেছি।’’ তার পর তারা বহু বছর এক বাড়িতে থাকলেও একসঙ্গে থাকেনি। ওই ভদ্রলোক কিন্তু সে ভাবেই সম্পর্কটিকে চালিয়ে নিয়ে যান। ভদ্রলোক অন্য এক আত্মীয়কেই ভালবাসতেন। পরে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গেই সংসার করেন।এই ধরনের ঘটনাগুলো আমি নিজে দেখেছি। তাই হয়তো লেখার মধ্যেও তার প্রতিফলন ঘটে।
প্রশ্ন: ২০২৫ সালে দাঁড়িয়ে দেখা যায় চারপাশে অনেক ধরনের সম্পর্কের সংজ্ঞা রয়েছে। কখনও পরকীয়া...
লীনা: মানুষের বেঁচে থাকার জন্য কিছু সম্পর্কের প্রয়োজন। সেখানে ‘পরকীয়া’ কে ব্র্যান্ড করতে চাই না! চিরসখা ধারাবাহিকের ক্ষেত্রে লোকে যদি ভাবে আমি পরকীয়াকে তুলে ধরছি, তা হলে ভুল হবে। এমন সম্পর্ক তো দেখেছি, যেখানে সব ঠিক আছে, কিন্তু দেখা গেল প্রাণটা নেই। এই প্রাণটা যে দিতে পারবে, তার সঙ্গে আমার শারীরিক সম্পর্ক না-ও থাকতে পারে। কিন্তু সে বুঝতে পারছে, এক জন আছে বলেই অন্য জন বেঁচে রয়েছে।
প্রশ্ন: এ রকম একটা সম্পর্ক নিয়ে ধারাবাহিক। এখনও পর্যন্ত কোনও ট্রোলিংয়ের খবর চোখে পড়েছে?
লীনা: আমি তো সমাজমাধ্যমে খুব একটা সক্রিয় নই। হয়তো ট্রোলিং হয়। তবে আমার কাছে ভাল প্রতিক্রিয়াই বেশি এসেছে। বহু মানুষের মেসেজ পেয়েছি। তার মধ্যে এমন অনেক শিল্পীও রয়েছেন, যাঁরা এখন আর অভিনয় করেন না। কিন্তু ধারাবাহিকটা নিয়মিত দেখছেন। এমন অধ্যাপক রয়েছেন, যাঁরা হয়তো ধারাবাহিক দেখেন না। কিন্তু এই গল্পটা তাঁরা দেখছেন।
প্রশ্ন: এই সময়ে দাঁড়িয়ে সমাজে সম্পর্কের অবস্থান কি কিছুটা হলেও বদলেছে বলে মনে হয়?
লীনা: সামাজিক ভাবে যে খুব বদল এসেছে, তা বলতে পারব না। তবে এটা হয়েছে যে মেয়েরা এখন মুখ ফুটে তাদের সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে পারছে। তাতে সে হয়তো ‘খারাপ মেয়ে’র তকমা পেল। কিন্তু সেটাকে ওই মহিলা আর পাত্তা দিচ্ছে না। কারণ মহিলারা অর্থনৈতিক দিক থেকেও এখন অনেকটা স্বাধীন। এগুলো দেখতে ভাল লাগছে। কিন্তু আমার নিজের পরিবারে এ রকম কোনও ঘটনা ঘটলে আমি সমর্থন করতে পারব কি না, সেটা এখনও জানি না। সমর্থন থাকলেও সেটা সকলের সামনে প্রকাশ করতে পারব কি না, সেটা জানি না। তবে বাঁচার অধিকার যে প্রত্যেকের রয়েছে, সেটাও তো এই ধারাবাহিক দেখে মানুষ বুঝতে পারছে।

ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: অনেক সময় দেখা যায়, কোনও মহিলা গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হওয়ার পরেও সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন না। কারণ কী?
লীনা: বিষয়টা তাঁর ব্যক্তিত্বের উপর নির্ভর করে। তিনি কত দিন অপমান সহ্য করবেন, তার উপর নির্ভর করে। কেউ গার্হস্থ্য হিংসা সহ্য করে সম্পর্কে টিকে রয়েছেন মানে, বুঝতে হবে তাঁর মধ্যে আত্মসম্মানবোধ কম। এর মধ্যে তো কোনও দ্বিমত থাকতে পারে না। আর যদি বলেন যে তিনি ভালবেসে সম্পর্কে রয়েছেন, সেটাও তা হলে তাঁর একান্তই ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।
প্রশ্ন: ধারাবাহিকে অনসূয়া মজুমদারের সংলাপ বলার ধরন একটু আলাদা কেন?
লীনা: চরিত্রটা খুব বেশি শিক্ষিত নয়। একটা আঞ্চলিকতা রয়েছে। সেই জায়গা থেকে একটু আলাদা করতে চেয়েছিলাম। চরিত্রটা এখনও পুরোপুরি নাগরিক হয়ে উঠতে পারেনি। এখনও মনে করে, বৌমাকে ধর্মসভায় নিয়ে গেলে তার মতিগতি ঠিক থাকবে। আবার ছেলে প্রয়াত বলেই কিন্তু বৌমাকে সে ভালবেসে রক্ষা করতে চাইছে। এটাও বুঝতে হবে।
প্রশ্ন: ‘চিরসখা’ থেকে আপনার প্রত্যাশা কী রকম?
লীনা: ধারাবাহিক যখন তৈরি করছি, সেখানে একটাই প্রত্যাশা— সাফল্য। রেটিং ভাল হলে শো থাকবে। অনেক শিল্পীর উপার্জন হবে।
প্রশ্ন: রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি এই ধারাবাহিকটি দেখেন?
লীনা: (হেসে) যত দূর শুনেছি, তিনি ‘চিরসখা’ দেখেন। ধারাবাহিকটি ভাল হচ্ছে বলেই তিনি জানিয়েছেন।
প্রশ্ন: একটি জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক পত্রিকার চলতি বছরের বিনোদন জগতের সেরা মহিলাদের ‘পাওয়ার লিস্ট’-এ আপনার নাম...
লীনা: (হাসি)।
প্রশ্ন: এটা কী ভাবে সম্ভব হল?
লীনা: প্রথমে মাস ছয়েক আগে ওদের তরফে ফোন আসে। তার পর এই দিন পনেরো আগে ওরা ছবি চেয়ে পাঠায়। আমি ফেসবুকের কিছু ছবি পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু বলল যে অন্য ছবি দিতে হবে। সেই মতো ছবি তুলিয়ে আবার পাঠিয়েছিলাম। ২১ মার্চ মূল অনুষ্ঠান। যদি শরীর ভাল থাকে তা হলে যাব।
প্রশ্ন: আলিয়া ভট্ট, ঐশ্বর্য রাই বচ্চন। দীপিকা পাড়ুকোন থেকে শুরু করে কিরণ রাও— দেশের চর্চিত তারকাদের মধ্যে এই তালিকায় আপনি একমাত্র বাঙালি। এত নির্লিপ্ত কেন?
লীনা: সত্যি বলতে, আমি প্রথমে একটু অবাকই হয়েছিলাম। তালিকায় যে যে নাম রয়েছে, আমি তো তাদের থেকে বহু দূরে থাকি। তার পর বুঝলাম, ওরা আমার কাজ নিয়ে খোঁজখবর করেছে। আর শুধু হিন্দি নয়, আমাকে কিন্তু আমার বাংলা কাজের জন্যও ডাকা হয়েছে। ওদের ওয়েবসাইটে আমার সম্পর্কে সেটাই লেখা হয়েছে। আসলে এই বয়সে এসে বুঝতে পেরেছি কাজটা করতে পারলে এ রকম অনেক ডাকই আসবে।
প্রশ্ন: বাংলায় ছবির সংখ্যা কমেছে। ওটিটিও কোণঠাসা। সেখানে ধারাবাহিক এখনও সুরক্ষিত। কী বলবেন?
লীনা: কাজ তো কমেছে। সারা দেশেই ওটিটি এখনও কোনও সফল মডেল তুলে ধরতে পারেনি। ওটিটিতে হিন্দি কাজের ক্ষেত্রে যে বিপুল বিনিয়োগ, মুনাফা কিন্তু সেই ভাবে আসেনি। বাংলায় রিল এবং ইউটিউব কিছুটা হলেও ছোট পর্দার ক্ষতি করেছে। কিন্তু তার মোকাবিলার করার জন্যও বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষা করা হচ্ছে।
প্রশ্ন: দর্শক যদি রিলে ধারাবাহিক দেখে নেন...
লীনা: আমার মনে হয়, কাজটা যদি আকর্ষণীয় হয়, তা হলে সেটা দর্শক পুরোটাই মন দিয়ে দেখতে চাইবে। তাই আমাদের ভাল কাজের প্রতি আরও জোর দিতে হবে। তা না হলে অসম লড়াই তো লড়তে পারব না। লঘুত্বের প্রতি মানুষের টান থাকবেই।
প্রশ্ন: কিন্তু সেটা কি দীর্ঘস্থায়ী?
লীনা: সেটা বলা মুশকিল। কারণ একটা সময় তাদের একঘেয়ে লাগবেই। ইউটিউবের সব কনটেন্ট খারাপ নয়। সেটা মাথায় রেখেই বলছি রিল বা ইউটিউবের কনটেন্ট কিন্তু ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়ার মতো বিষয়। দেখা হয়ে গেল। সময় কাটল। কিন্তু তার আর আলাদা কোনও গুরুত্ব রইল না জীবনে। অন্য দিকে, ভাল ধারাবাহিক কিন্তু মানুষের মনে রয়ে যায়।
প্রশ্ন: একটা উদাহরণ দেবেন?
লীনা: ‘ইষ্টিকুটুম’ বা ‘জল নূপুর’ আমার কেরিয়ারের গোড়ার দিকের ধারাবাহিক। সেটা নতুন করে সম্প্রচারের পর দেখা গেল দর্শক কিন্তু দেখেছেন।
প্রশ্ন: নতুন কনটেন্ট নেই বলেই কি পুরনো ধারাবাহিকের পুনঃসম্প্রচার শুরু হয়েছে?
লীনা: আমার মনে হয় কনটেন্টের ধরন এখন বদলে গিয়েছে। ভাল কাজ তৈরি হচ্ছে না। ‘খড়কুটো’র পর কোনও ধারাবাহিক তো সে ভাবে চর্চার কেন্দ্রে উঠে আসেনি। তার পর অতিমারির সময় ইউটিউব এবং রিল চলে এল। ফলে লড়াই চালিয়েই যেতে হবে। যেমন হিন্দিতে পরীক্ষামূলক ভাবে ধারাবাহিকে এক ঘণ্টার পর্ব করেছি। সেখানে দেখেছি, আধ ঘণ্টার তুলনায় এক ঘণ্টার পর্বের রেটিং ভাল এসেছে। তার মানে তো দর্শক দেখছে। টিভির চিন্তাভাবনা অন্য রকম। সেখানে দর্শক ১২ মিনিটের ভিডিয়ো দেখবে না!
প্রশ্ন: বাংলা ধারাবাহিকের কাঠামোগত অনেক পরিবর্তনও তো এসেছে?
লীনা: অবশ্যই। শিরোনামের ধরন বদলেছে। দর্শক বদলেছে। ‘লুক অ্যান্ড ফিল’ বদলেছে। সবটাই তো দর্শকের চাহিদার কথা মাথায় রেখে। তার মানে কি ভাল ধারাবাহিক তৈরি হচ্ছে না? অনেকেই তো তৈরি করছেন। এটা তো টিকে থাকার লড়াই।
প্রশ্ন: ‘ঝনক’, ‘রব রাখা’, ‘অনুপমা’, ‘ইয়ে রিশতা ক্যায়া কেহলতা’— হিন্দিতেও আপনার ধারাবাহিক সফল। বাংলা এবং হিন্দির ক্ষেত্রে কোনও রকম পার্থক্য চোখে পড়েছে?
লীনা: মূল অনুভূতি সব ক্ষেত্রেই এক। কিন্তু বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। খুব কঠিন। মুম্বইয়ের ধারাবাহিকের শুটিং দেখলে সেটা যে সিনেমা নয়, তা বোঝা কঠিন। শুটিং, সম্পাদনা, অভিনয়— কোথাও ওরা আপস করতে রাজি নয়। সব সময়েই মনিটরিং করা হয়। গল্প নিয়ে প্রতি সপ্তাহে বৈঠক করতে হয়। সামনে আইপিএল আসছে। তার মোকাবিলায় গল্পে কী কী হাই পয়েন্টস থাকবে, আগেই বলে দিতে হবে। এত পরিকল্পনা আমি আগে কখনও করিনি। এখন করতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রচুর চাপ।
প্রশ্ন: অসংখ্য চরিত্র নিয়ে প্রতি দিন লিখে চলেছেন। কোনও মানসিক চাপ?
লীনা: এখনও পর্যন্ত কাজটা উপভোগ করি। আর চরিত্রের প্রতি আমার শুরু থেকেই ঝোঁক। এখন আবার লেখালিখির কাজও পুরোদমে শুরু করেছি। তাই অনেক চরিত্র নতুন করে মনের মধ্যে ভিড় করে। আমার পরিচিতি, খ্যাতি, অর্থনৈতিক সুরক্ষা— সবই তো এই চরিত্রগুলোর জন্যই। তাই এটাকে অবহেলা করতে পারি না। হয়তো জানলে অবাক হবেন, হিন্দি ধারাবাহিকে আজ পর্যন্ত কোনও দিন ছুটি নিইনি। গত দেড় বছর ধরে রবিবারেও লিখেছি। অল্প সময়ে মুম্বই আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। সেখানে সিনেমা জগতের অনেকেই আমাদের খোঁজ করেন। ভাল লাগে। আসলে নতুন শুরু তো। মন দিয়ে কাজ করেছি। হেরে আসতে চাইনি।
আরও পড়ুন:
প্রশ্ন: ভবিষ্যতে কি আপনি মুম্বইয়েই পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করবেন? কারণ এখন বাংলার অনেককেই দেখি মুম্বইয়ে বেশি কাজ করছেন।
লীনা: আমরা তো কোনও দিন চেষ্টা করিনি। ঘটনাচক্রে মুম্বই গিয়েছিলাম। লেখা দিয়ে শুরু। তার পর প্রোডাকশনও পেয়ে গেলাম। শৈবালদা (লীনার সহ-প্রযোজক শৈবাল বন্দ্যোপাধ্যায়) তো এখন মুম্বইয়েই থাকেন। মাসে হয়তো একবার কলকাতায় আসেন। কমিশনের কাজ এবং বাংলার কাজ রয়েছে বলে কলকাতায় বেশি থাকতে হয় আমাকে। তবে আগামী দিনে আমি হয়তো আরও ঘন ঘন মুম্বই যাব।

ছবি: সংগৃহীত।
প্রশ্ন: আপনি কি এখনও দিনে তিন ঘণ্টা ঘুমোন?
লীনা: (হেসে) না না, এখন আমর শরীর বিশেষ ভাল নেই। তাই অনেকটাই বেশি ঘুমোই। রাত তিনটেয় ঘুমোতে যাই। সকাল ন’টায় ঘুম থেকে উঠি।
প্রশ্ন: শুনলাম, আপনি নাকি যিশু সেনগুপ্ত এবং শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে নতুন বাংলা ছবি পরিচালনা করতে চলেছেন?
লীনা: আমিও শুনেছি (হাসি)। আসলে এপ্রিলে ভেবেছিলাম শুটিং করব। কিন্তু আপাতত পুজোর পর শুটিং শুরুর ইচ্ছে রয়েছে।
প্রশ্ন: বাঙালি কি একটু অলস?
লীনা: আমি নিজেই তো অলস (হাসি)।
প্রশ্ন: সে কী! এই কাজের পরও নিজেকে অলস বলছেন!
লীনা: মনে মনে আমি বেশ কুঁড়ে। আগে ওই প্রতি সপ্তাহে নিয়ম করে মুম্বই যেতে হবে ভেবেই গায়ে জ্বর আসত। ভাল লাগত না। কিন্তু এখন মানিয়ে নিয়েছি। কাজ তো ফেলে রাখতে পারব না (হাসি)।