Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪

বসন্তের নতুন ক্যালেন্ডার

কৃষ্ণচূড়ার রং বদল দেখার সময় কোথায়! জেন Y ব্যস্ত ফেসবুক আপডেটে! তা হলে চিরতরে বিদায় বসন্ত? লিখছেন শ্রীজাত।বয়স দিচ্ছে পিছিয়ে পড়ার ডাক/সময় রাখছে চোখের সামনে স্ক্রিন/ফাল্গুন তবে টানাপোড়েনেই/ যাক—/শাখে শাখে ডাকে ভার্চুয়ালের দিন/আমাকে বরং প্রান্তিক বলে ভেবো/বসন্ত আর সামলাতে পারছি না।/মাঝে মাঝে শুধু আড়চোখে/ দেখে নেব—/আমার স্টেটাস শেয়ার করছ/ কি না।

শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৪ ০৩:২৬
Share: Save:

বয়স দিচ্ছে পিছিয়ে পড়ার ডাক

সময় রাখছে চোখের সামনে স্ক্রিন

ফাল্গুন তবে টানাপোড়েনেই

যাক—

শাখে শাখে ডাকে ভার্চুয়ালের দিন

আমাকে বরং প্রান্তিক বলে ভেবো

বসন্ত আর সামলাতে পারছি না।

মাঝে মাঝে শুধু আড়চোখে

দেখে নেব—

আমার স্টেটাস শেয়ার করছ

কি না।

গন্ধ আমাকে আলাপ করতে

শেখায়

হাওয়া ডেকে বলে ‘আছো

নাকি FB-তে?’

তবু পারিনি পিছল সময়রেখায়

প্রতি মুহূর্ত আপলোড করে দিতে।

...এই অবধি লিখে থেমে যাই। জানালা দিয়ে বাইরে তাকাই আর দুম করে ২০ বছর আগের নিজেকে মনে পড়ে!

কেন?

কেননা বাইরে ভরপুর হাওয়া দিচ্ছে বসন্তের। বিকেল হয়ে এসেছে, সামনের চিলতে মাঠটায় উইকেট পুঁতে হইহল্লা জুড়ে দিয়েছে কচিকাঁচারা। মাঠের ধারের বেঞ্চিতে বুড়ো বয়সের খোশগল্প জুড়েছেন ক’জন প্রবীণ, মাঝে মধ্যে মাঠের পাশ দিয়ে তিরতির করে বয়ে যাচ্ছে সাইকেল-যুবা আর তার মুখচোরা বান্ধবী।

এ সবই বসন্তের অব্যর্থ লক্ষণ।

কয়েক দিন আগেই একপশলা বৃষ্টিতে মনমরা হয়ে গিয়েছিল শহর। তারও আগে শীতের লাগামহীন ওঠাপড়ায় দিশেহারা। কেমন যেন মনে হচ্ছিল, এ বার বসন্ত আদৌ আসবে তো? মনে হওয়ার আর দোষ কী। গত এক দশকে ছয় ঋতুর স্কোর বোর্ডে বসন্তের নামের পাশে গুটিকয় রান ছাড়া কিছু নেই। ও দিকে গ্রীষ্ম ডাবল সেঞ্চুরি ছুঁই ছুঁই। বর্ষাও মন্দ নয়। যে বসন্তের জন্য কৈশোর থেকে যৌবন পর্যন্ত টানটান অপেক্ষায় কেটে যেত সারা বছর, যে বসন্ত একবার চলে এলে নিজেকে নিয়ে কী করব, কোথায় যাব বুঝে উঠতে পারতাম না, যে বসন্তের গন্ধের পিছনে পিছনে টো টো করে বেড়াতাম পাড়া-কে-পাড়া, যে বসন্তে কারও সঙ্গে তেমন ভাব না-থাকলেও প্রেম পেত খুব সেই বসন্ত আর কোথায়? সেই পাগল করা গন্ধ, সেই ফতুয়া-ওড়ানো সন্ধেহাওয়া... সব কিছুই গত এক দশকে ফিকে হয়ে এসেছে। বসন্তের বড় ঘের ছোট হতে হতে দাঁড়িয়েছে কয়েক দিনে। সেই সব ছোট ছোট টিমটিমে পাড়ায় বড় বড় অ্যাপার্টমেন্ট উঠে গিয়েছে। বান্ধবীদের ঠিকানা বদল হয়েছে রাতারাতি। ফতুয়াগুলোও হারিয়ে গিয়েছে কখন। আর খোদ বসন্তরাজও। ভুগোলের ভাষায় যাকে বলে ‘জলবায়ুর পরিবর্তন’-এর চাপে লম্বা ছুটিকে কাটছাঁট করে ঝটিকা সফর বানিয়ে নিয়েছেন। অতএব, এই চল্লিশের চৌকাঠের সামনে দাঁড়িয়ে জানলা দিয়ে দেখতে পাওয়া ওই এক ঝলক বসন্তই এখন অনেকখানি।

বাইরে তাকিয়েই ২০ বছর আগের এক রোগাসোগা উস্কোখুস্কো কলেজপড়ুয়াকে মনে পড়ে। ফাল্গুনের সারাবেলা যে কলেজের সিঁড়িতে কয়েকটা লাল চা’র বিনিময়ে বন্ধুদের শুনিয়ে গিয়েছে খোলা গলার গান। কলেজ থেকে ফিরেই কবিতার খাতা ঝোলায় পুরে যে উঠে পড়েছে বন্ধুগামী কোনও একটা অটোতে। রাতে বাড়ি ফেরার পথে যে অটোর বদলে ধরেছে হাঁটাপথ। শিকারি কুকুরের মতো বাতাসের শরীর শুঁকে শুঁকে চিনে নিচ্ছে আততায়ীর ঠিকানা। আততায়ীর নাম তখনও বসন্ত।

মডেল: মিমি-অঙ্কুশ, ছবি: সুব্রতকুমার মণ্ডল।

হ্যাঁ, তখনও এমনই ছিল কোনও এক মধ্যবিত্ত যুবকের বসন্তযাপন। কারণ, তার বেঁচে থাকায় তখনও অনেকে এবং অনেক কিছু জুড়ে ছিল না। জুড়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল না বলেই হয়তো। সারাক্ষণ বয়ে বেড়ানোর মতো সেলফোন ছিল না, ছিল না নিজের দিনযাপনকে উপস্থাপিত করার মতো সোশ্যাল মিডিয়ার স্ক্র্যাপবুক, ছিল না সারা পৃথিবীতে নিখরচায় বার্তা-বিনিময়ের মতো হাজারো অ্যাপস্। ফলে এই যাতায়াতের পথগুলো, এই একা থাকার সময়গুলো সত্যিকারের একা হয়ে থাকত মানুষ।

সে চাইলেই বসন্তকে অনুসরণ করতে পারত, সারাক্ষণ নিজেকে অনুসরণ করতে হত না। সে চাইলেই যে-বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা দিতে গিয়েছে, কেবল তারই সঙ্গে আড্ডায় মশগুল হয়ে থাকতে পারত। দু’জনের আড্ডার ফাঁকে ঢুকে পড়তে পারত না চার জনের মেসেজ বা তেরো জনের আপডেট। মোট কথা, অন্যের গতিবিধি জানবার আর সারাক্ষণ নিজেকে জানান দেওয়ার উপায় ছিল না। আর উপায় ছিল না বলেই হয়তো তাগিদও ছিল না কোথাও। ফলে ২০ বছর আগের সেই যুবক আর তার মতো সমস্ত যুবক-যুবতী সে ভাবেই পার করেছে অনেকগুলো বসন্ত।

পাশাপাশি এ-ও ঠিক, কলকাতা অনেক বেশ দিল খোলা আর দরাজ ছিল সে সময়ে। রাজপথে তার বুকের বোতাম কুড়িয়ে পাওয়া যেত আকছাড়। দিগন্তে হেলাফেলা করে হাওয়াকে খেলাতে পারত সে। এখন তো তার দিগন্তই দেখা যায় না আর! চাকায়-কংক্রিটে-আলোয়-বিজ্ঞাপনে-পার্টিতে ভরে গিয়েছে তার শরীর। মনের বসন্ত কি একটুও মনখারাপ করেনি তাতে? কিন্তু আজ এত দিন পর বসন্তকে নিয়ে একটা কবিতা লিখতে গিয়ে এই যে তৃতীয় স্তবকে এসে থমকে গেলাম আমি, সে কি কেবল জানালার বাইরে চোখ চলে যাওয়ার জন্য? নাকি মাথার মধ্যে কোথাও এই প্রশ্নও দেখা দিয়েছে আমি আজকের সময়টাকে, আজকের ছেলেমেয়েদের বুঝতে ভুল করে ফেলছি না তো?

এ কথা তো অস্বীকার করার কোনও প্রয়োজন নেই যে একটা ভার্চুয়াল জগৎ তৈরি হয়েছে, এবং গত কয়েক বছরে তা রমরম করে ছড়িয়ে পড়েছে দূরে দূরে... বহু মানুষকে একটা বিশাল মহাদেশের বাসিন্দা করে ফেলেছে দেখতে দেখতে। যে যত দূরেই থাক, তার বেঁচে থাকা কখনওই আরেক জনের থেকে খুব বেশি দূরে নয় যদি সে নিজের যাপনকে ভাগ করে নেয় পর্দায়। নিউ ইয়র্কের একটা মেয়ের দৈনন্দিনের সঙ্গে নৈহাটির একটা ছেলের রোজ-মর্রা মিশে যায় অনায়াসেই। এমনকী আমিও জেনে যাই, কোরিয়ায় গবেষণারত আমার কবিবন্ধু কী ভাবছে এখন। বা হায়দরাবাদে চাকরি করা আরেক কবিবন্ধু কোন কোন বই পড়ছে? সবই তাদের আপডেট থেকে জানা। আগে মনে হত এই আপডেশন-য়ের কি সত্যিই কোনও দরকার আছে? আমি কী ভাবছি বা কি পড়ছি বা এমনকী কোন অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি, তা অন্যদের জানিয়ে দেওয়া কি খুব জরুরি? এতে কি মানুষের প্রাইভেট স্পেস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না? তার পর এক সময় মনে হয়েছে এই যে লেখালেখির চেষ্টা করি আমরা, সে-ও কি এক ধরনের আপডেশনই নয়? এই যে কবিতা লেখা, সে তো একান্ত ব্যক্তিগতকে প্রকাশ করে ফেলাই। তা হলে? তখন বুঝলাম আমার আপত্তিটা আসলে ভাগ করে নেওয়ায় নয়, আত্ম-বিজ্ঞাপনে এবং ব্যক্তিগত প্রদর্শনে। এই যে সারাক্ষণ নিজের এবং নিজের নিজের কাজ ও অকাজের তুমুল প্রচারে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করা, এই যে প্রতি মুহূর্তে নিজেকে বিপণন করার একটা প্রাণপাত প্রচেষ্টা, এই যে দিনভর ‘যা কিছু আজ ব্যক্তিগত’-র পণ্যায়ন, সেটাকে ঘিরে আমার অসুবিধে রয়েছে। একদিকে যেমন ‘আমাকে দেখুন, কিনুন এবং ভোগ করুন’-এর নির্লজ্জ মাতামাতি, আরেক দিকে তেমনই দুরন্ত আদিখ্যেতা। ‘পৈতের ঠিক আগে আমার মাসতুতো ভাই’, ‘রাঙাজেঠিমার ৩৫তম বিবাহবার্ষিকীর ফ্যাব ক্র্যাব’ অথবা ‘গুল্লু আজও টিফিন খায়নি’ জাতীয় ক্যাপশন এবং ততোধিক অসামান্য সব ছবি। নিজের ছোট পরিসরের জীবনে ঘটে চলা প্রতি মুহূর্তের এই কমিক স্ট্রিপ কি সত্যিই আমাদের আদত জীবন? জানি না। কিন্তু এ সবের বাইরেও সোশ্যাল মিডিয়ার যে বৃহত্তর ও সঠিক ব্যবহার, সেটা কিন্তু মন্দ নয়। নিজের সময় ও তাকে ঘিরে ভাবনাচিন্তাকে একটা বড় পরিসরে অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া, বহুস্তরীয় প্ল্যাটফর্মে ডিসকোর্স এবং ডায়ালগের একটা বারান্দা খুলে দেওয়া ভালই তো! তাই শেষমেশ ভাগ বসাতে আমিও নিজের নাম এবং ছবিতে হাজির হলাম একটা সাইটে। ঢুকেই দেখি কমবয়সিদের ঝাঁক, ঠিক কলেজ-করিডরের মতো। ঝলমলে, হুল্লোড়ে, টগবগে! তখনই প্রশ্নটা এল মাথায় ভার্চুয়াল পৃথিবীতে কি তা হলে ভার্চুয়াল বসন্তও রয়েছে? এই দূর দূর অবধি বিছিয়ে থাকা নেট-পাড়ায় কি তা হলে বসন্তের আয়ু বাইরের পৃথিবীর চাইতে বেশি? চাইলেও তার ফতুয়ার খুঁট ধরে বেঁধে রাখা যায় পোস্টে আর ট্যুইটে? অনলাইন অঞ্জলির মতো ইন্টারনেট আবিরও কি চালু রয়েছে তবে? ২০ বছর আগেকার আমার মতোই আজ যাদের বয়স, তারা কি বানিয়ে নিতে পেরেছে পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার চিরহরিৎ ফ্যানপেজ? আজ যারা যাদবপুর-প্রেসিডেন্সি-স্কটিশ-আশুতোষ, আজ যারা বাবুঘাট-মোহর কুঞ্জ-রবীন্দ্র সরোবর-নন্দন, আজ যারা রাজনীতি-রক ব্যান্ড-টি টোয়েন্টি-গ্রুপ থিয়েটার, তাদের বসন্ত এখন কোথায়?

‘ভার্চুয়াল পৃথিবীতে সারা বছর কি বসন্তকে বেঁধে রাখা যায়?’ প্রশ্নটা মাথায় না রেখে পোস্ট করলাম। তার পর সারা দিনের অপেক্ষা। আমাদের পরের প্রজন্মের অনেকেই তার উত্তর দিলেন। শেষমেশ কুড়িয়ে বাড়িয়ে যতগুলো কমেন্ট পেলাম, তাতে কোনও একটা সিদ্ধান্তে আসা বেশ কঠিন। কেউ বলছেন, “বসন্তের হাওয়া তো মনে লাগে...সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং-য়ের ভার্চুয়াল পৃথিবীতে হাওয়া কি মনে লাগে?” আবার কেউ বলছেন, “রাখাই যায়। কিন্তু তা হলে বর্ষা আসবে না ভেবে আমি শিহরিত হলাম!” কারও বক্তব্য, “জানি না, তোমার পরের প্রজন্ম কতখানি বসন্ত বোঝে বা বেঁধে রাখতে পারে।” তবে দুই মেরুর দু’খানা উত্তর পেলাম আরও একটু পরে। খুব কমবয়সি একটি মেয়ে লিখল, “বেঁধে হয়তো রাখা যাবে। তবে বোধহয় বাড়িতে সাজানো প্লাস্টিকের গাছের মতো।” আর এক প্রবাসী যুবতীর মতে, “সোশ্যাল নেটওয়ার্ক তো এক রকম ইচ্ছেঠাকরুনের দেশ। এখানে শীত চাইলে শীত, বসন্ত চাইলে বসন্ত। সব আমাদের হাতে!” আমি পড়ে গেলাম ধাঁধায়। এরা তো একই প্রজন্মের দু’জন কমবয়সি মানুষ। অথচ দু’জন ভাবছেন একেবারে আলাদা রকম। হতেই পারে তা। কিন্তু তা হলে আমার মাথায় হঠাৎ গজিয়ে ওঠা এই খামখেয়ালি প্রশ্নের জুতসই উত্তর কি পাওয়াই হবে না শেষমেশ? তার পর মনে হল, এই দু’টোই তো আসলে ঠিক উত্তর! এই তো সেই জায়গা, যেখানে কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা। তবে হ্যাঁ, মনে মনে। তাই শীত চাইলেই শীত, বসন্ত মনে হলেই বসন্ত। সেই বসন্তের সব ঝাপটা বন্ধুদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চাইলেই বা আটকাচ্ছে কে? আবার এও ঠিক, কম দিনের অতিথি হলেও আজকের ছেলেমেয়েরা বসন্তকে এখনও পিঁড়ি পেতে আদরযত্ন করতে চায়। ভার্চুয়ালি সাজিয়ে রাখা বসন্তের বাইরে গিয়ে লাগামছাড়া হাওয়ার সামনে সাহসী বুক পেতে দাঁড়াতে চায়। এক সন্ধের জন্য হলেও নিজের সুতো ছেড়ে দিতে চায় সুগন্ধের মুঠোয়। আজকের এই প্রায়-চল্লিশ আমি যেমন নেট-পাড়ায় নিজের ঠিকানা খুলেছি, তেমনই আজকের কুড়ি-বাইশের দল চার দিনের বসন্তে সত্যিকারের ভাগ বসাচ্ছে, কেবল লাইক আর শেয়ারের বাইরে বেরিয়ে। সুতরাং বদল যতই হোক, জয় শেষমেশ বসন্তেরই। নিজেকে এ কথা বললাম বটে, কিন্তু এ-ও বুঝলাম সিদ্ধান্তটা একটু নড়বড়েই হয়ে গেল। মোদ্দা কথা, আমার মনের মতো হল না। আক্ষেপটা হয়তো থেকেই যেত, যদি না বেশ কিছুক্ষণ পর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঝলমলে ছাত্রী আমায় লিখত, “বসন্ত মনে। আর কোথাও তাকে আটকে রাখা যায় না। তাই বসন্ত সারা বছর।” এইটাই তো আমার মনের মতো উত্তর! আমিও বসন্তের অলিগলি ঘুরে ঠিক এই মোড়েই এসে দাঁড়াতে চাইছিলাম। যতই কলকাতার ধুলোময় আকাশরেখা ফিরিয়ে দিক বসন্তকে, যতই ভার্চুয়াল পৃথিবীর দেওয়াল ভরে যাক চৈত্রলিখনে, আসল বসন্ত তো ভেতরেই থাকার কথা। কেবল বছরের ওই কয়েকটা দিনই নয়, জীবনের যে কোনও ভাল থাকার নাম যদি দিই বসন্ত... সে তো আমাদের ভেতরেই। আমি আবার জানালা থেকে চোখ ফিরিয়ে আনি খাতার পাতায়। কেন কে জানে, মনে পড়ে যায় এক চিরযুবকের কথা। দোলে তার সঙ্গে শান্তিনিকেতনে গিয়েছি কত বার। আবির মেখে ভুত হয়ে যাওয়া সেই যুবককে আজও দেখতে পাই আমি...জীবনের সব গ্রীষ্ম-শীতের উর্ধ্বে উঠে তার গায়ে সারাক্ষণ সেঁটে থাকত বসন্তরং ফতুয়া... ওই তো, শান্তিনিকেতনের বাড়ির বারান্দায় বসে দোলের ছমছমে রুপোলি রাতে খোলা গলায় গান ধরেছে সেই যুবক, ‘আজ জ্যোত্‌স্না রাতে সবাই গেছে বনে’... তাকে তো আমি একটু হলেও দেখেছি। কোনও খ্যাতি, কোনও বিপণন, কোনও ব্যস্ততা তার সবুজ কেড়ে নিতে পারেনি। সারা জীবন তরুণতম প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করে গেলেন সেই চির-সাতাশ নীললোহিত... তাঁর মতো কি হতে পারব কখনও আমরা কেউ? পারলে কিন্তু ভাল হত খুব। একদিন-দু’দিন নয়, বারোমাসই বসন্তের হাওয়ায় মুখ ডুবিয়ে থাকা যেত বেশ। কে জানে কেন, এ কথা মনে হওয়ার পরেই পেয়ে গেলাম থমকে থাকা কবিতার শেষ স্তবকটা—

যদিও এখানে ভালই লাগছে বেশ,

কৃষ্ণচূড়ায় ভরে গেছে চারপাশ...

মুখের আড়ালে লুকিয়ে রেখেছি

ফেস-

বুকের ভেতরে বসন্ত বারোমাস!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

spring srijato
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE