প্রাতরাশ, মধ্যাহ্নভোজন, নৈশভোজের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাকি সকালের খাওয়ার সময়টি। জলখাবার না খেলে সারা দিনের জন্য চালিকাশক্তি মেলে না। শরীরের জৈবপ্রক্রিয়াগুলি শুরুই হয় না। আপনি হয়তো খাবার খাওয়ার সময়ে কেবল ক্যালোরির কথা মাথায় রাখেন, আবার কেউ কেউ হয়তো শুধুমাত্র মনের মতো খাবার খোঁজেন। কিন্তু পুষ্টিবিদ এবং চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রাতরাশের অভ্যাসের কারণেই কিন্তু হজমের অবনতি হচ্ছে, বিপাকক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, অন্ত্রের স্বাস্থ্য বিগড়ে যাচ্ছে।
অধিংকাশ বাড়িতেই স্বাস্থ্যের বদলে সুবিধাকে বেছে নেওয়া হয়। আর সেখানেই ভুল হয়ে যায়৷ ছোট ছোট পদক্ষেপের কারণেই সারাটা দিন বদহজম, পেটফাঁপা এবং অস্বস্তিতে কাটে। কী কী সেই ভুল?
১. প্রাতরাশ বাদ দেওয়া: ব্যস্ত জীবনে অনেকেই খালি পেটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান৷ সেটিই সুবিধাজনক মনে হয় তাঁদের। কাজে গিয়ে হয়তো হাতের সামনে যা পেলেন, তা-ই খেয়ে নিলেন। তাতে তৎক্ষনাৎ পেট ভরে যাচ্ছে ভেবে শান্তি পেলেন। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলেন, সবচেয়ে সাধারণ এবং একই সঙ্গে ক্ষতিকারক অভ্যাস এটি। সকাল সকাল খাবার না পেয়ে অ্যাসিড তৈরি হয়ে যায় শরীরে। ফলে বদহজমের সমস্যা শুরু হয়ে যায়। দেরিতে খাবার খেলে পাচকরসের কাজের গতিও ধীর হয়ে যায়। ঘুম থেকে ওঠার এক ঘণ্টার মধ্যেই যদি খাবার খেয়ে নিতে পারেন, তা হলে অন্ত্র নিজের কাজ সুষ্ঠু ভাবে করতে পারে। ফলমূল, বাদাম, ওটস, পোহার মতো খাবার দিন শুরু করার জন্য উপযুক্ত।
২. চিনিযুক্ত খাবার খাওয়া: চিনিযুক্ত বা পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেটযুক্ত খাবার, যেমন, প্যাকেটজাত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবারের মধ্যে লুকিয়ে থাকে এই উপাদানগুলি। হজমের প্রক্রিয়া ধীর করে দেওয়ার পাশাপাশি চিনি বা মিষ্টি খাবারের প্রতি আগ্রহ আরও বাড়িয়ে তোলে এগুলি। পাতে যদি এমন খাবার থাকে, যেগুলিতে প্রোটিন, ফাইবার, অল্প পরিমাণে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট রয়েছে, তা হলে সারাটা দিন শারীরবৃত্তীয় কাজে ব্যাঘাত ঘটবে না। এতে হজমের ক্ষমতা উন্নত হয়, বিপাকক্রিয়া ভাল থাকে, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শক্তির জোগান অব্যাহত থাকে।
৩. ফাইবার বাদ দেওয়া: ধরা যাক আপনি সময় মতো খাবার খাচ্ছেন, কিন্তু পাতে ফাইবার না থাকলে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে জল না খেলে কোনও লাভই হবে না। অন্ত্রের ভিতর দিয়ে খাবার চলাচল করা, মল তৈরি হওয়া, শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বার করার জন্য ফাইবারের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। জল সেই কাজেই অনুঘটকের কাজ করে। তা ছাড়া অন্ত্রের উপকারী ব্যাক্টেরিয়াকে পুষ্টি প্রদান করার জন্যেও ফাইবারের দরকার। তাই সকালবেলা জলখাবারের পাতে ফল, সব্জি, নানা রকমের বীজ রাখা দরকার। পাশাপাশি, সারা রাত ধরে শরীর জল পায় না। তাই সকাল সকাল পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান না করলে জলের ঘাটতি হবে শরীরে। ঘুম থেকে উঠে হালকা গরম জল পান করলে পাচকরসগুলি সক্রিয় হয়ে ওঠে।