উৎসবে তো বটেই দৈনন্দিন জীবনেও অস্বাস্থ্যকর, বেশি তেলমশলা, অতিরিক্ত ফ্যাটজাতীয় খাওয়াদাওয়া হয়েই থাকে। যাঁদের প্রেসার, সুগার, কোলেস্টেরল বা হার্টের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনও না কোনও সমস্যা রয়েছে, তাঁরা জানেন, ওই ধরনের খাওয়া দাওয়া তাঁদের স্বাস্থ্যের জন্য কতখানি ক্ষতিকর হতে পারে।
অস্বাস্থ্য়কর খাদ্যাভ্যাস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হার্টের রোগের মূল কারণ। কারণ নিয়মিত ভাজাভুজি, মিষ্টি, ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার খেলে তার প্রভাব পড়ে ধমনীতে। যে ধমনী দিয়ে হার্টে রক্ত সঞ্চালন হয় এবং তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়, সুস্থ রাখে, সেই ধমনীর দেওয়ালে জমতে থাকে কোলেস্টেরলের স্তর। ফলে রক্ত চলাচলের পথ সংকীর্ণ হয়। একটা সময়ের পরে ধমনীর পথ খুব সরু হয়ে এলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে আসে। তখন তৈরি হয় হার্ট ব্লকেজ। আশঙ্কা বাড়ে হার্ট অ্যাটাকের।
সেই ঝুঁকি কমাতে হলে ধমনীতে শরীরে যাওয়া দূষিত পদার্থের আস্তরণ পরতে দিলে চলবে না। কিন্তু কোন উপায়ে তা আটকানো সম্ভব? দিল্লিনিবাসী হার্টের চিকিৎসক প্রবীন চন্দ্র বলছেন, পাঁচটি খাবার নিয়মিত খেলে তা ধমনীর দেওয়ালে দূষিত পদার্থ জমতে দেবে না। পাশাপাশি হার্টে রক্ত সঞ্চালনও রাখবে ভাল।
১। ওটস
ওটসে রয়েছে সল্যুবল ফাইবার। যা কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। আমেরিকার ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনে উল্লিখিত এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত ওটস খেলে প্রাপ্তবয়স্কদের কোলেস্টেরলের মাত্রা অন্তত ৫-৭ শতাংশ কমেছে। কারণ, ওটসে রয়েছে বিটা গ্লুকান নামে এক ধরনের উপাদান। যা ধমনীর দেওয়ালে দূষিত পদার্থের আস্তরণ জমতে দেয় না। পাশাপাশি, হজমক্রিয়াকেও ভাল রাখে, যা পরোক্ষে হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে।
২। সজনে ডাঁটা বা সজনে পাতা
সজনে গাছের পাতা এবং ফল— উভয়ই অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ভরপুর। এ ছাড়া তাতে রয়েছে নানা ধরনের জরুরি ভিটামিন এবং বায়ো অ্যাক্টিভ উপাদান। সজনে পাতা এবং ফলে যে সমস্ত জরুরি উপাদান রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল কোয়েরসেটিন নামে এক ধরনের অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট। যা একাধারে শরীরের প্রদাহজনিত নানা সমস্যা দূরে রাখে। ধমনীর নমনীয়তা বজায় রাখে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে। নিয়মিত সজনে পাতা খেলে তা শরীরকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের হাত থেকে বাঁচাবে, যা হার্টের রোগের পাশাপাশি ক্যানসারের মতো জটিল রোগেও কারণ হতে পারে।
৩। আখরোট
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, আখরোটে প্রচুর পরিমাণে আলফা লাইনোলেনিক অ্যাসিড রয়েছে। যা কি না এক ধরনের স্বাস্থ্যকর ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এটি ধমনী পরিচ্ছন্ন রেখে রক্তে ‘খারাপ’ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি, রক্তচাপের সমস্যা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। অর্থাৎ নিয়মিত আখরোট খেলে হার্টের নানা রোগ দূরে থাকবে।
আরও পড়ুন:
৪। মেথি
কোলেস্টেরলের জন্য মেথি একটি অত্যন্ত কার্যকরী উপাদান। যা এ দেশের প্রায় সব রান্নাঘরে খুঁজলেই পাওয়া যাবে। মেথি ভেজানো জল বা রান্নায় নিয়মিত মেথি খাওয়া হার্টের রোগীদের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে। কারণ গবেষণায় দেখা গিয়েছে নিয়মিত যাঁরা মেথি খেয়েছেন, তাঁদের লিপিড প্রোফাইল অনেক ভাল।
৫। কারিপাতা
রান্নায় সুগন্ধ আনা এই পাতা ঔষধি গুণেও এগিয়ে। অ্যান্টি অক্সিড্যান্টে ঠাসা এই পাতা অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমায়। ফলে কোলেস্টেরল দূরে থাকে। প্রদাহ জনিত সমস্যা দূরে রেখে হার্টের অন্যান্য সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে কারি পাতা। সাহায্য করে রক্ত সঞ্চালনেও।