সন্তান শিক্ষাদীক্ষায় বড় হবে, মানুষের মতো মানুষ হবে— এমন স্বপ্নই দেখেন অভিভাবকেরা। কিন্তু কী ভাবে সন্তানকে বড় করলে লক্ষ্যলাভ সম্ভব, তা স্পষ্ট করে বলা যায় না। অভিভাবকত্বেরও নানা রকম ধরন থাকে। তার মধ্যে কোনটি সন্তানকে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে দেবে, তা বলা শক্ত। তবে মনোবিদ থেকে চিকিৎসকেরা বলেন, ভাল অভ্যাস সন্তানের বড় হওয়ার পাথেয় হতে পারে।
মনো-সমাজকর্মী মোহিত রণদীপ বলেন, ‘‘অভিভাবকদের অনুকরণ করার প্রবণতা থাকে শিশুদের মধ্যে। তাই বাবা-মায়েদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।’’
স্ক্রিন টাইম হোক মেপে: পড়াশোনায় মন বসানো কি সহজ কথা, যখন মোবাইল এবং ইন্টারনেটের এমন আকর্ষণ রয়েছে! ছোট থেকে বড়— সকলেই মোবাইলে মশগুল। মনোবিদেরা বলেন, মোবাইলের ভিডিয়ো, রিল দেখার পরই যদি কেউ বই নিয়ে পড়তে বসে, স্বাভাবিক ভাবে লেখার অক্ষরে মন দেওয়া কষ্টকর হবে। চলমান ছবি দেখার পর বইয়ের লেখা কোনও ভাবেই মনোযোগ আকর্ষণ করবে না। তাই সবচেয়ে আগে দরকার মোবাইলের ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনা। পেরেন্টিং কনসালট্যান্ট পায়েল ঘোষ বলেন, "মোবাইল দেওয়া যাবে সন্তানকে, তবে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। চাইলেই সেটি দেওয়া যাবে না, এ কথা অভিভাবকদের বোঝাতে হবে।"
আরও পড়ুন:
খাদ্যাভ্যাস: ছোটরা চিপ্স , চকোলেট, কেক, পেস্ট্রি খেতে ভালবাসবে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে মস্তিষ্কের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির জন্য শরীর ভাল রাখতে হলে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া আবশ্যক। বিভিন্ন রকম ফল, সব্জি, মাছ, মাংস, ডিম, বাদাম— এই সমস্ত খাবারই শিশুর শারীরিক এবং মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাইরের অস্বাস্থ্যকর খাবার যদি বাড়িতে এড়িয়ে চলা হয়, এবং ছোট খেকে ফল, সব্জি দেখিয়ে তার গুণাগুণ সন্তানকে শেখানো যায়, তা হলে ধীরে ধীরে তার মধ্যেও পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হবে।
খেলাধুলা: পড়াশোনা নিয়ে অভিভাবকেরা যতটা ভাবেন, খেলাধুলা নিয়ে সেই মাথাব্যথা নেই। বছর ৩০ আগেও মাঠঘাটে ছোটাছুটি করে খেলা করত ছোটরা। কিন্তু এখন না আছে মাঠ, না অভিভাবকদের সময়। খেলাধুলা কিন্তু শরীরচর্চার মাধ্যমও। খেলার সময় এক দিকে যেমন শিশুর স্ক্রিনটাইম কমবে, তেমনই তাদের মস্তিষ্কের বিকাশও ঘটাবে। এলাকায় সন্তান খেলাধুলার সঙ্গী না পেলে, শিশুদের পছন্দের কোনও খেলায় ভর্তি করে দিতে পারেন।
ঘুম: শরীর ভাল রাখার জন্য, পড়াশোনা মনে রাখার জন্যও পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি। দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম না হলে স্বাস্থ্যে তার প্রভাব পড়বে। এমনকি, হরমোনের ভারসাম্যও বিগড়ে যেতে পারে। সে কারণে সন্তান যেন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমোয় এবং ওঠে, সেই অভ্যাস তৈরি করা জরুরি। আমেরিকার ন্যাশনাল হার্ট, লাং অ্যান্ড ব্লাড ইনস্টিটিউট-এর জার্নালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলছে, শৈশব এবং কৈশোরের মানসিক এবং শারীরিক বিকাশে ঘুমের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
সামাজিক বিকাশ: শিশুর যথাযথ সামাজিক বিকাশ ব্যক্তিত্ব গঠনে সাহায্য করে। তাই কী ভাবে আর পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলতে হয়, মিশতে হয়, সেই শিক্ষা ছোট থেকেই পাওয়া দরকার। তা ছাড়া বন্ধু থাকলে, বা কথা বলার লোক থাকলে, যথাযথ ভাবে মনের ভাব প্রকাশ করতেও শিখবে সে।