বাঙালি রান্নাঘরে গাজর, বিট, আলু, বেগুন, কুমড়ো, কপির মতো সব্জি যে হারে রান্না হয়, বিন তার ধারেকাছেও আসে না। তার প্রয়োজন পরে মূলত তখন, যখন বাড়িতে ফ্রায়েড রাইস, সব্জি পোলাও বা ভেজ বিরিয়ানি গোছের কিছু রান্নাবান্না হয়। বিনের তরকারি খুব বেশি দেখা যায় না বাঙালি বাড়িতে! মোটের উপর বিনের প্রতি বঙ্গজনের এক রকম অবহেলাই লক্ষ করা যায়।
অবহেলার একটি কারণ হতে পারে বিনে স্বাদের কমতি। তবে গবেষণা বলছে, পুষ্টিতে কোনও কমতি নেই বিনে। বরং বিন যদি কেউ নিয়মিত খান, তবে অনেক রোগই রাখা যেতে পারে দূরে।
আমেরিকার নর্থ ডাকোটা স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণাপত্র বলছে, বিনে ক্যালোরির মাত্রা অত্যন্ত কম। প্রতি ১০০ গ্রাম বিনে ৩১ কিলোক্যালোরি শক্তি থাকে। এ ছাড়া বিনে কার্বোহাইড্রেটের মাত্রাও কম। প্রতি ১০০ গ্রামে ৭ গ্রাম শর্করা রয়েছে। তবে ফাইবার রয়েছে ২.৭ গ্রাম। ফ্যাট রয়েছে নামমাত্র। ১০০ গ্রামে ০.২ গ্রাম। এ ছাড়া প্রোটিন রয়েছে ১.৮ গ্রাম। রয়েছে প্রচুর পরিমাণি ভিটামিন কে, সি, এ এবং বি৯। আছে পটাশিয়াম, আয়রনের মতো জরুরি খনিজও।
নিয়মিত বিন খেলে কোন কোন রোগ দূরে রাখা যায়?
১। স্লোভেনিয়ার কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের একটি গবেষণা বলছে, প্রতি দিন যদি ১/৪ কাপ করেও বিন খান তবে তা রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করবে।
২। নর্থ ডাকোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা বলছে বিন টাইপ টু ডায়াবিটিসের রোগীদের জন্য বিশেষ উপকারী। তাঁদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে বিন।
৩। বিন কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও সাহায্য করে বলে জানাচ্ছে আরও একটি গবেষণা। কানাডার অন্টারিও-র ইউনিভার্সিটি অফ গোয়েল্ফের সেই গবেষণায় দেখা গিয়েছে, নিয়মিত বিন খেয়েছেন যাঁরা, তাঁদের রক্তে এলডিএল বা ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল কমেছে। রক্তে লিপিড লেভেলও নিয়ন্ত্রণে থেকেছে।
৪। বিনে রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েড। যা একাধারে প্রদাহনাশক, আবার রক্তে জমাট বাঁধতেও দেয় না। এই গুণও হার্টের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য জরুরি।
৫। বিনে থাকা ভিটামিন কে, ক্যালশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৬। ২০২৩ সালের ওই গবেষণা বলছে, নিয়মিত বিনের রস খেলে তা ইউরিক অ্যাসিড এবং তদ্বজনিত অস্থিসন্ধির ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৭। আর্থ্রাইটিসের ব্যথা বা পেশির ব্যাথাও কমাতে সাহায্য করে বিন।