দিন কয়েক আগেও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা করছিলেন স্বচ্ছন্দে। আর এখন হাঁটতে গেলেও মাঝে মধ্যে পিন ফোঁটার মতো একটা ব্যথা টের পাচ্ছেন। কখনও হাঁটু কখনও বা গোড়ালিতে। কারও বা পুরনো কনুই কিংবা কব্জির ব্যথা চাগাড় দিয়ে উঠেছে হঠাৎ করেই। তার কারণ, ধীরে ধীরে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। এই সময়টা ব্যথা বেদনা নতুন করে বাড়ে। তার কারণও আছে। তবে একটু সচেতন হলে ব্যথাকে তুড়িতে উড়িয়ে ঠান্ডার সময়েও তরতরিয়ে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে পারবেন।
দিল্লি এমস প্রশিক্ষিত হায়দরবাদের এক বেসরকারি হাসপাতালের রিউমাটোলজির চিকিৎসক বিষ্ণু কোনেরু এক পডকাস্টে জানিয়েছেন, শীতে যাঁরা গাঁটের ব্যথার সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের কোন কোন বিষয়ে খেয়াল রাখা উচিত। কী ভাবেই বা তাঁরা সেই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণের রাখতে পারবেন?
১। পোশাকে নজর দিন
শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখার চেষ্টা করুন। অনেক সময় ঠান্ডায় হাত-পা আড়ষ্ট হয়ে গেলে তা থেকেও অস্থিসন্ধির ব্যথা শুরু হয়। তাই যথাযথ গরম পোশাক পরুন। হাঁটুতে বা পায়ের গাঁটে ব্যথার সমস্যা থাকলে অবশ্যই পা- ঢাকা থাকে এমন গরম প্যান্ট বা পোশাক পরুন।
২। ঈষদুষ্ণ জলে স্নান
যাঁদের বাতের ব্যথা, আর্থ্রাইটিসের ব্যথা বা গাঁটের ব্যথা হয়, তাঁরা দিনের কোনও সময়েই ঠান্ডা জল ব্যবহার করবেন না। স্নান হোক বা অফিস থেকে ফিরে হাত-পা-মুখ ধোয়া সবই ঈষদুষ্ণ জল ব্যবহার করে করুন। কারণ উষ্ণ জল পেশি শিথিল করে। গাঁটের ব্যথাও কমায়।
৩। নিয়মিত হালকা ব্যায়াম
শীতে এক ধরনের আলস্য দখল নেয় শরীরের। ঠান্ডা বাড়লে আরও জবুথবু ভাব আসে। এতে ব্যথা হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই সকাল সকাল শরীর সচল রাখার জন্য হালকা শরীরচর্চা করা দরকার। সেটা হাঁটা হতে পারে, হালকা স্ট্রেচিং, যোগাসন, সাইকেল চালানোও হতে পারে। যাঁরা সাঁতার কাটতে জানেন, তাঁরা সাঁতার কাটতে পারেন (তবে ঠান্ডা জল এড়িয়ে চলাই ভাল)। এতে অস্থিসন্ধি এবং পেশির নমনীয়তা বজায় থাকে। তবে খুব বেশি ভারী ব্যায়াম করতে যাবেন না।
৪। ওজন নিয়ন্ত্রণ
শরীরের অতিরিক্ত ওজনের ভার গিয়ে পড়ে হাঁটু এবং গোড়ালির উপর। তাই হাঁটু এবং গোড়ালির ব্যথা এড়াতে প্রথমেই নিজের ওজন কমানোর দিতে নজর দিন। অস্বাস্থ্যকর খাওয়াদাওয়ায় রাশ টানুন। নির্দিষ্ট নিয়মে বেঁধে ফেলুন খাদ্যাভ্যাস। দরকার হলে পুষ্টিবিদের সাহায্য নিয়ে ডায়েট চার্ট তৈরি করে তা মেনে চলুন।
৫। পর্যাপ্ত জল পান
শীতকালে জল কম খাওয়ার একটা স্বাভাবিক প্রবণতা দেখা যায়। কিন্তু অস্থিসন্ধি বা গাঁটের ব্যথা কমাতে হলে জল বেশি করে খাওয়া জরুরি। অস্থিসন্ধির চারপাশে যে পিচ্ছিল পদার্থ হাড়ের মধ্যে ঘর্ষণ কমায়, পিচ্ছিলতা বজায় রাখতে সাহায্য করবে জল।
৬। সঠিক জুতো বাছুন
যাঁদের পায়ের ব্যথার সমস্যা, তাঁরা অবশ্যই নজর দিন জুতোয়। এমন জুতো পরুন, যা পায়ে আরাম দেবে। হাঁটার সময় পায়ের পেশিগুলিকে যথাযথ সাপোর্ট দেবে। জুতো কেনার সময় মাপ বুঝে নিন। ছোট জুতো পায়ে স্বস্তি দেওয়ার বদলে অস্বস্তির কারণ গতে পারে।
৭। খাওয়াদাওয়া
ব্যথার কারণ শরীরে তৈরি হওয়া প্রদাহ। তাই শীতে প্রদাহনাশক খাবার রাখুন পাতে। হলুদ এবং আদা প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত আদা-হলুদ গোলমরিচ দুধে গুলে খেতে পারেন। এর পাশাপাশি ভিটামিন ডি, ক্যালশিয়াম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে এমন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। প্রক্রিয়াজাত এবং প্যাকেটজাত খাবার যতটা পারবেন কম খান। আর ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে দিতে পারে, এমন খাবারও এড়িয়ে চলুন।