জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত অভিনেত্রী। পদ্মশ্রীতে সম্মানিত। ভারতীয় চলচ্চিত্রে নারীচরিত্রের জমি শক্ত করার পথপ্রদর্শক। উজ্জ্বল, আলোকিত পেশাজীবন তাঁর। কিন্তু চর্চা হয় তাঁর ওজন নিয়ে। থেকে থেকে প্রশ্ন ওঠে, অভিনেত্রী ‘কত মোটা হলেন’, ‘কত রোগা হলেন’। নায়িকা হয়েও নিজেকে জ়িরো ফিগারের মাপকাঠিতে বাঁধতে চাননি, এত বিচ্যূতি কি সমাজের সহ্য হয়! আর তাই ঘনিষ্ঠ হোন বা দূরের মানুষ, রোগা হওয়ার সহজ উপায় বাতলে দিতে চেয়েছেন সকলে। সেই বিদ্যা বালন সম্প্রতি ওজন ঝরিয়ে ছিপছিপে হয়েছেন। তা কেবল নিজের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই। নিজের শরীরের গঠন, আকার অথবা ওজন নিয়ে আর বিশ্বাস হারান না তিনি। আবার যদি ওজনও বেড়ে যায়, তাতেও আর কিছু যায় আসে না তাঁর। চেহারা নিয়ে হতাশায় ভোগেন না আর। তিনি এখন নিজেকে ‘নির্লজ্জের মতো আশাবাদী’ বলছেন।
ছবি: সংগৃহীত।
ওজনের জন্য বছরের পর বছর ধরে সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছেন তিনি। কী ভাবে তিনি এ সবের ঊর্ধ্বে উঠেছেন, সে সম্পর্কে সম্প্রতি মুখ খোলেন বিদ্যা। এমন এক সময় ছিল, যখন ওজন নিয়ে কটাক্ষ শুনতে শুনতে নিজেকে পর্দায় দেখতেও ভাল লাগত না উচ্চ-প্রশংসিত অভিনেত্রীর। ‘ভুল ভুলাইয়া ৩’-এর প্রচারের সময়ে বিদ্যা ওজন ঝরানো নিয়ে কথা বলতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‘সারাটা জীবন আমি কেবল রোগা হওয়ারই চেষ্টা করে এসেছি। খাদ্যাভ্যাস বদলে কৃচ্ছ্রসাধন করেছি। নিয়ম মেনে ব্যায়াম করেছি। মাঝে মাঝে ওজন কমত ঠিকই, কিন্তু তা আবার বেড়েও যেত। কিন্তু চেন্নাইয়ের এক গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর, তারা আমায় বলে, স্থূলত্বটা বিষয়ই নয়। আমার শরীরের গঠনের কারণ প্রদাহ। আর এটিই আমার জীবনে পরিবর্তন এনে দেয়।’’
ছবি: সংগৃহীত।
সেই বিদ্যা এখন আর শরীরের মেদ নিয়ে ভাবিত নন। স্বাস্থ্য ভাল রাখাই তাঁর উদ্দেশ্য। সম্প্রতি বিদ্যা বললেন, ‘‘আমি মনে করি, আমি নির্লজ্জের মতো আশাবাদী। নিজের উপর অগাধ বিশ্বাস আমার। কোনও দ্বিধা বোধ না করেই নিজের সবচেয়ে ভারী চেহারা নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছি আমি। অনেকে আমায় উপদেশ দিয়েছেন রোগা হওয়ার। কিন্তু সত্যি বলতে কি, আমি আর মনেই করি না যে, আমার মধ্যে কোনও সমস্যা আছে।’’ যে দিন থেকে এমন ভাবে ভাবতে শুরু করেছেন, তার পর থেকে বিদ্যা কেবল নিজের শিল্প, কাজের দিকে মনোযোগ দিতে সক্ষম হয়েছেন। অন্যের ধারণা তাঁকে আর ভয় পাওয়ায় না। এ ভাবেই ‘বডি পজ়িটিভিটি’র নজির গড়লেন অভিনেত্রী।
আরও পড়ুন:
‘পাবমেড’-এর একটি জার্নালে ‘বডি পজিটিভিটি’, ‘বডি ইমেজ’ নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ পেয়েছিল ২০১৯ সালে। সেখানে পর্যবেক্ষণ করে দেখা গিয়েছিল, মহিলাদের মধ্যে শরীর নিয়ে ছুতমার্গ কমেছে আগের থেকে। এখন তাঁরা নিজের দেহের আকার, ওজন নিয়ে সন্তুষ্ট। এমনকি পুরুষদের থেকেও বেশি। কিন্তু গবেষকেরা ঠিক উল্টো ফলাফল পাবেন বলেই ধারণা করেছিলেন। কারণ মহিলাদের শরীরের আকার ও গঠন নিয়ে কুমন্তব্য বেশি হয়। সুতরাং এ কথা স্পষ্ট, নেতিবাচকতা সরিয়ে নিজেদের ভালবাসতে শেখার চেষ্টা করছেন মহিলারা।