করোনার প্রকোপ কমেছে মানেই যে ভাইরাসজনিত জ্বরের উপদ্রব কমেছে তা নয়। বরং খামখেয়ালি আবহাওয়ায় ইনফ্লুয়েঞ্জা, সোয়াইন ফ্লু-এর ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত আতঙ্কের কারণই হয়ে উঠেছে। এতে ছোটরাই বেশি ভুক্তভোগী। প্রতি বছর শীতের সময় এলেই ইনফ্লুয়েঞ্জা, সোয়াইন ফ্লু-এর প্রকোপ বাড়ে। শুধু শীতের সময় বলে নয়, এখন বাতাসে যে পরিমাণ দূষণ বেড়েছে, তাতে দূষিত কণায় ভর করে ভাইরাস আরও দ্রুত বংশবিস্তার করে চলেছে। জ্বরের প্রকোপও তাই বাড়ছে। সে কারণেই সাধারণ ফ্লু-এর টিকার পাশাপাশি আরও এক ধরনের প্রতিষেধক আনতে চলেছে অ্যাস্ট্রজেনেকা।
জ্বরের নতুন টিকায় সুচ ফোটানোর ভয় নেই
অ্যাস্ট্রজেনেকার নতুন টিকার নাম ‘ফ্লুমিস্ট’। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, এটি ন্যাজ়াল ভ্যাকসিন, অর্থাৎ, নাকে স্প্রে করে নিতে হবে। এই প্রতিষেধক ছোটরা নিজেরাও নিতে পারে বাড়িতে। তাই আলাদা করে চিকিৎসকের কাছে বা ক্লিনিকে যাওয়ার দরকার পড়বে না। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) এই টিকায় অনুমোদন দিয়েছে। এফডিএ-র তরফে জানানো হয়েছে, প্রতি বছর অনেক শিশুই ইনফ্লুয়েঞ্জা বা সোয়াইন ফ্লু-র মতো সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। তাই ছোটরাও নিতে পারবে এমন প্রতিষেধকই তৈরি করা হয়েছে। তবে ফ্লুমিস্ট প্রাপ্তবয়স্কেরাও নিতে পারেন। ২ বছরের শিশু থেকে ১৭ বছর এবং ১৮ থেকে ৪৯ বছর অবধি এই টিকা নেওয়া যাবে। যাঁদের সর্দি-কাশি বা অ্যালার্জির ধাত রয়েছে, তাঁরা এই প্রতিষেধক নিয়ে রাখলে উপকার পাবেন। আর যেহেতু সুচ ফোটানোর ভয় নেই, তাই অভিভাবকেরা বাড়িতে এই প্রতিষেধক অন্যান্য ওষুধের মতোই সংরক্ষণ করে রাখতে পারেন। টিকার ডোজ বছরে একবারই নেওয়া যাবে, তবে প্রতিষেধক নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
আরও পড়ুন:
কোন কোন ভাইরাস প্রতিরোধ করবে?
অ্যাস্ট্রজেনেকার টিকা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারবে। ইনফ্লুয়েঞ্জা হল এমন এক রোগ, যার ভাইরাস নিত্য রূপ বদলায়। মোটামুটি তিন ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হন মানুষ। একটি সাধারণ, মরসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা। দ্বিতীয়টি, মহামারির আকার ধারণ করে, এমন, ইনফ্লুয়েঞ্জা। তৃতীয়টি হল, জুনোটিক ইনফ্লুয়েঞ্জা। যা প্রাণী থেকে ছড়ায়। যেমন, বার্ড ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু ইত্যাদি। শিশুরা এই ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হলে ভয় বেশি।
সোয়াইন ফ্লুয়ের কিছু প্রজাতিও ইদানীং কালে সক্রিয় হয়ে উঠেছে, যেমন, এইচ১এন১, এইচ৩এন২। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যে ভাবে হয়, সেই একই ভাবে শ্বাসের মাধ্যমে ছড়ায় এই ভাইরাস। এবং মূলত ফুসফুসেই সংক্রমণ ঘটায়। ছোটরা খুব তাড়াতাড়ি সংক্রমিত হয়ে পড়ে এতে। রোগ প্রতিরোধ শক্তি যাদের কম, হাঁপানি বা সিওপিডির সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে এই ভাইরাস।
গবেষকেরা বলছেন, ফ্লুমিস্ট টিকা নিয়ে রাখলে ভাইরাস সংক্রমণের ভয় কমবে। তবে যে শিশুদের হাঁপানির চিকিৎসা চলছে অথবা যারা অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খায়, তাদের ক্ষেত্রে টিকা নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এই টিকা নেওয়া যাবে না।