অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য ডেঙ্গি বিপজ্জনক। গর্ভাবস্থায় ডেঙ্গি ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসা প্রয়োজন। জ্বর হলেই হবু মায়েদের নানা শারীরিক অসুবিধা দেখা দিতে পারে। আর ডেঙ্গির ভাইরাস জনিত জ্বর যে আরও ভয়ঙ্কর চেহারা নেয় তা আর নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। এতে গর্ভস্থ শিশুর ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় জ্বর হলে কী করণীয়?
জ্বর মানেই যে তা ডেঙ্গি, তা না-ও হতে পারে। তবে কিছু লক্ষণ দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে হবু মায়েদের। এই বিষয়ে সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি মশা কামড়ালে কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসবে, ভয়ানক মাথা যন্ত্রণা হবে, গা হাত পা ব্যথা হবে। প্রচণ্ড ক্লান্তি ভাব আসবে। সেই সঙ্গে বমি হতে পারে, খাবার বিস্বাদ লাগবে, খিদে কমে যাবে। গায়ে-পিঠে ছোট ছোট র্যাশ বেরোতে পারে। প্রস্রাব কমে যেতে পারে। হেমারেজিক জ্বর হলে তখন মাড়ি বা অন্য কোনও জায়গা থেকে রক্তপাত হতে পারে।
হবু মায়েদের জ্বর হলেই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। এনএস১ অ্যান্টিজেন টেস্ট এবং ‘আইজিএম’ ও ‘আইজিজি’ অ্যান্টিবডি টেস্ট করিয়ে নেওয়া জরুরি। জ্বরের সঙ্গে বমি হলে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করে দেওয়াই শ্রেয়। না হলে ডিহাইড্রেশন হয়ে গিয়ে মা ও গর্ভস্থ শিশু দু’জনেরই ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকবে। গর্ভাবস্থায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুব কমে যায়। সর্দি-কাশি বা অন্যান্য সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই অন্তঃসত্ত্বাদের কড়া নজরে রাখতেই হবে।
আরও পড়ুন:
সতর্ক থাকার উপায়
জ্বর হলেই ডিহাইড্রেশন হয়। তাই প্রচুর জল ও তরল খাবার খাওয়া উচিত। ওআরএস যুক্ত জল ছাড়াও বারে বারে অল্প অল্প করে সাধারণ জল খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্যুপ, ফলের রস খেলে ভাল হয়।
অনেক সময় হবু মায়েদের ব্লাড থিনার দেওয়া হয়। জ্বর হলে ব্লাড থিনার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। প্যারাসিটামল খাওয়ার পরেও জ্বর না কমলে জ্বর হওয়ার তৃতীয় দিনে ডেঙ্গির রক্ত পরীক্ষা করা আবশ্যিক।
জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল ছাড়া আর কোনও ওষুধ খাওয়া চলবে না। কারণ গর্ভাবস্থায় অনেক রকম ওষুধ খাওয়াই বারণ থাকে। তাই নিজে থেকে কোনও রকম ওষুধ না খাওয়াই ভাল। অনেক সময় ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে জ্বর নেমে গেলেও দুর্বলতা বাড়তে থাকে। তাই সে ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকাই জরুরি।
ডেঙ্গিপ্রবণ এলাকায় অন্তঃসত্ত্বাদের উপরে বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন। প্রয়োজনে মশারির ভিতরে রাখাই উচিত। পুরো গা-ঢাকা পোশাক পরিয়ে রাখা জরুরি।
ডেঙ্গিতে সাধারণ জ্বরের ওষুধ ও স্যালাইন দিতে হয়। অতিরিক্ত ফ্লুইড আবার প্রসূতির হার্টের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। এ ছাড়া, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের আশঙ্কা তো থাকেই। সব মিলিয়ে রোগীকে লাগাতার নজরে না রাখলে যে কোনও মুহূর্তে বিপদ হতে পারে।