রক্তের রোগ সিক্ল সেল অ্যানিমিয়ার পরীক্ষা এ বার আরও সহজে ও কম খরচে হতে পারে। প্রত্যন্ত এলাকার লোকজন খরচের কারণে রক্তের রোগের চিকিৎসা করাতে পারেন না। রোগটি যথাসময়ে ধরাও পড়ে না। সেই সমস্যা দূর করতেই নতুন যন্ত্র তৈরি করেছেন বেঙ্গালুরুর রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা। যন্ত্রটি কম সময়ে ও কম খরচে রোগ নির্ণয় করে দেবে বলেই দাবি।
থ্যালাসেমিয়া যতটা পরিচিত, ততটা সিক্ল সেল অ্যানিমিয়া নয়। রক্তের এই রোগ নিয়ে সচেতনতা খুবই কম। অথচ দেশে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কম নয়। বিশেষ করে উপজাতি অধ্যুষিত এলাকায় এই রোগের প্রকোপ বেশি। বাজেট পেশ করার সময়ে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনও রোগটির বিষয়ে উল্লেখ করেছিলেন। বলা হয়েছে, ২০৪৭ সালের মধ্যে রক্তের এই রোগ দূরীকরণের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় সরকার। উত্তর-পূর্বাঞ্চল-সহ সারা দেশের উপজাতি অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে এই রোগ ভয়াবহ চেহারা নিতে পারে বলেই আশঙ্কা।
কী এই সিক্ল সেল রোগ?
লোহিত রক্তকণিকার আকার সাধারণত গোলাকার হয়। যদি সেই আকার বিকৃত হয়ে যায়, তখন রক্তসংবহন প্রক্রিয়াই ব্যাহত হয়। গোলাকার লোহিত রক্ত কণিকার আকার বদলে দাঁড়ায় ধান কাটার কাস্তের মতো। চিকিৎসা পরিভাষায় এর নাম ‘সিকল সেল ডিজ়িজ়’। রোগটি জিন-বাহিত। বংশগত ভাবে ছড়ায়। অর্থাৎ বাবা বা মা যদি দু’জনেই অথবা তাঁদের মধ্যে এক জন রোগের বাহক হন, তা হলে ২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগটি সন্তানের মধ্যেও ছড়ানোর আশঙ্কা থেকে যায়। উপজাতি গোষ্ঠীর মধ্যে একই পরিবারে বিয়ে করার প্রবণতা আছে, তাই রোগটি তাঁদের মধ্যে বেশি ছড়ায়।
আরও পড়ুন:
রোগের উপসর্গ কী কী?লোহিত কণিকার আকার যে হেতু বদলে যায়, সে কারণে রক্ত চলাচল সঠিক ভাবে হয় না। অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত কোষে কোষে পৌঁছতে পারে না, ফলে শ্বাসের সমস্যা শুরু হয়। গাঁটে গাঁটে ব্যথা, শরীরের গ্রন্থিগুলি ফুলে ওঠা, বুকে-পেটে প্রচণ্ড যন্ত্রণা হয়। সেই সঙ্গে ত্বকের রং ফ্যাকাশে হতে থাকে, জন্ডিসের উপসর্গও দেখা দেয়। শিশুদের ক্ষেত্রে বৃদ্ধি থমকে যায়, হরমোনের তারতম্য শুরু হয়। হাত-পায়ের গঠন বিকৃত হতে পারে, লিভার-কিডনির রোগও দেখা দিতে পারে। সিক্ল সেল অ্যানিমিয়া থাকলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ে। রক্তের ক্যানসার বা লিউকেমিয়ার আশঙ্কাও বহুগুণে বেড়ে যায়।
কী যন্ত্র আবিষ্কার হল?
বেঙ্গালুরুর রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউট ও সেন্ট জন্স মেডিক্যাল কলেজের গবেষকেরা যৌথ ভাবে একটি যন্ত্র তৈরি করেছেন যার নাম ‘ইলেক্ট্রো-ফ্লুইড ডিভাইস’। এই যন্ত্রে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের সাহায্যে লোহিত রক্তকণিকায় কী ধরনের বিকৃতি হচ্ছে, তা ধরা সম্ভব। গবেষকেরা জানাচ্ছেন, রক্তকোষ কাস্তের মতো আকার নিয়েছে কি না, তা ধরতে হাই পারফর্ম্যান্স লিকুইড ক্রোম্যাটোগ্রাফি (এইচপিএলসি) পরীক্ষা করা হত। এই পরীক্ষাটি করার খরচ অনেক। পাশাপাশি, সময়ও অনেক বেশি লাগে। গ্রামাঞ্চলে অভাবগ্রস্ত মানুষজনের পক্ষে এমন টেস্ট করানো সম্ভব নয়। এ দিকে রক্তকোষের অস্বাভাবিকতা যদি ধরাই না পড়ে, তা হলে রোগটি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যাবে। জিন-বাহিত হয়ে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যেও ছড়াবে। সে কারণেই কম খরচে রোগটি নির্ণয় করার জন্য যন্ত্রটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।
রক্তের কোষে মিউটেশন বা রাসায়নিক বদল দ্রুত হওয়ার কারণেই রোগটি ভয়াবহ আকার নিচ্ছে বলে মনে করছেন গবেষকেরা। কী ধরনের বদল ঘটছে, তা-ও চিহ্নিত করা যাবে যন্ত্রটিতে। একই সঙ্গে বায়োপসি করার সুবিধাও থাকবে। রক্তের কোষের অনিয়মিত বিভাজন হচ্ছে কি না, তা-ও ধরা যাবে। সে ক্ষেত্রে মারণ রোগের ঝুঁকিও কমবে।