হাড় মজবুত রাখতে শুধু ক্যালশিয়ামই যথেষ্ট তা নয়। অনেকেই ভাবেন, ক্যালশিয়ামের অভাব হলেই হাড় ক্ষয়ে যেতে থাকে। হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ক্যালশিয়াম যেমন জরুরি, তেমনই আরও কিছু উপাদানও রয়েছে যাদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলির অভাব হলেই হাড়ের ক্ষয় শুরু হয়ে যায়, ব্যথা হয় গাঁটে গাঁটে, যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলে অস্টিয়োপোরোসিস। চল্লিশের পরে মহিলারা এই রোগে আক্রান্ত হন বেশি। রজোনিবৃত্তির পরে এই রোগের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। কারণ ওই সময়ে হরমোনের ওঠানামা বাড়ে, ফলে শরীরে ক্যালশিয়াম তো বটেই ভিটামিন ডি, কে, জ়িঙ্ক, ফসফরাসের মতো উপাদানেরও ঘাটতি হতে থাকে। এই সব উপাদানও হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে খুবই জরুরি।
হাড় ভাল রাখে কোন কোন খনিজ ও ভিটামিন?
ভিটামিন ডি ও ম্যাগনেশিয়াম
এই বিষয়ে পুষ্টিবিদ শম্পা চক্রবর্তীর মতে, হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে ভিটামিন ডি ও ম্যাগনেশিয়ামও ডায়েটে থাকা খুব জরুরি। সেই সঙ্গে রাখতে হবে ফসফরাস ও ভিটামিন কে। পেশিতে টান ধরা, ক্লান্তি, উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বেশি হয় মহিলাদের। তাই পেশি ও স্নায়ুর জন্য সবচেয়ে বেশি জরুরি ম্যাগনেশিয়াম। তার জন্য প্রচুর পরিমাণে সবুজ শাকসব্জি, নানা ধরনের বাদাম, যেমন কাঠবাদাম, আখরোট, কাজু খেতে হবে। ওট্স, ডালিয়া, কিনোয়ার মতো দানাশস্যও খেতে পারেন নিয়ম করে। আর খেতে হবে মাছ। ভেটকি, বাসা, পমফ্রেটের মতো সামুদ্রিক মাছে ম্যাগনেশিয়াম থাকে। ছোট মাছ খাওয়াও খুব ভাল।
ভিটামিন ডি ছাড়া শরীর ক্যালশিয়াম শোষণ করতে পারে না। পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি ছাড়া খাবার থেকে প্রাপ্ত ক্যালশিয়ামের মাত্র ১০-১৫ শতাংশ শোষিত হয়। ভিটামিন ডি পেতে সূর্যের আলো যেমন জরুরি, তেমনই সঠিক খাওয়াদাওয়াও প্রয়োজন। প্রাণীজ প্রোটিনে ভিটামিন ডি বেশি থাকে, যেমন ডিম, বড় মাছ, মাংস, চিকেনের লিভার। নিরামিষের মধ্যে ট্স, ডালিয়া, কিনোয়ায় ভিটামিন ডি পাওয়া যাবে। পাতে রাখুন ব্রকোলি, পালং শাক, বাঁধাকপি ও লেটুস। পাতে রাখুন সয়াবিন, পালং শাক।
ভিটামিন কে
ভিটামিন কে হল এমন এক ভিটামিন যা ক্যালশিয়ামের মতোই হাড় ও পেশির শক্তি বাড়াতে পারে। পালংশাক, নটেশাক, সর্ষে শাক বা যেকোনও ধরনের শাক পাতাতেই ভিটামিন কে রয়েছে। যেকোনও মজানো খাবারে ভিটামিন কে থাকে বেশি। ব্রোকোলি, বাঁধাকপি, জামের মতো ফলে এবং সয়াবিন, ডিমের কুসুম, মুরগির মাংশে ভরপুর ভিটামিন কে থাকে।
জ়িঙ্ক
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে জ়িঙ্ক। অস্টিয়োপোরোসিসের মতো রোগ ঠেকিয়ে রাখতে জ়িঙ্ক অপরিহার্য। দুগ্ধজাত খাবার, কুমড়ো বীজ, বাদাম এবং ডিমের মধ্যে জ়িঙ্ক থাকে।
ফসফরাস
হাড় ভাল রাখতে এমন খাবার খেতে হবে যাতে ফসফরাসের মাত্রাও বেশি। দুগ্ধজাত খাবার যেমন দুধ, দই, পনির, মাথ, মাংস, নানা ধরনের বাদাম, দানাশস্যে ফসফরাস থাকে।
ভিটামিন সি
হাড়ের বৃদ্ধির জন্য জরুরি ভিটামিন সি। এতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সহায়তা করে। সাইট্রাস ফল অর্থাৎ লেবুজাতীয় ফলের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। মরসুম বদলের সময় বেশি করে এই ধরনের ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। টম্যাটো, পেয়ারা, ক্যাপসিকাম, স্ট্রবেরি, ব্রকোলি, সর্ষে শাক— ভিটামিন সি-এর ভাল উৎস। পেঁপের মধ্যেও প্রচুর পরিমাণে আছে ভিটামিন সি। কাঁচা পেঁপে এবং পাকা পেঁপে দু’টিই খেতে পারেন।