খামখেয়ালি আবহাওয়ার জন্য ঘরে ঘরে ভাইরাল জ্বর। মরসুম বদলের সময়েই মূলত ভাইরাসের হানায় সর্দি-কাশি আর জ্বরে ভোগান্তি বাড়ে। শীতের সময়টাতেই বিশেষ করে জ্বর, সর্দি-কাশি, গলাব্যথা বেশি ভোগায়। এমনকি বদহজম, পেটখারাপ, গা-বমি ভাবের মতো সমস্যাও হচ্ছে কারও কারও। চার-পাঁচ দিন ওই সমস্যা থাকছে। শিশু, বয়স্ক আর দুর্বল প্রতিরোধ ক্ষমতা যাঁদের, তাঁদের সমস্যাই বেশি। দিন কয়েক ওষুধ খেয়ে জ্বর কমলেও সপ্তাহখানেক ধরে হাত-পায়ের যন্ত্রণা, চোখের ভিতরে ব্যথা এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যাও হচ্ছে। শরীরও দুর্বল হয়ে পড়ছে।
সাধারণত শীত শুরু হওয়ার আগের সময়টাতে বাতাসে নানা ধরনের ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাসের উপদ্রব বাড়ে। কালীপুজো-দীপাবলির পরে দূষণের পাল্লা এমনিতেই ভারী থাকে। দূষিত বাতাসে ভর করে জীবাণুদের বংশবৃদ্ধি দ্রুত হয়। এমনটাই জানালেন সংক্রামক রোগ বিষয়ক চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার। তাঁর মতে, ডেঙ্গি, ইনফ্লুয়েঞ্জার পাশাপাশি অ্যাডিনোভাইরাস, রেসপিরেটারি সিনসেশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি)-এর দাপট বেড়েছে। যে কারণেই ঘরে ঘরে জ্বর, সর্দি-কাশি হচ্ছে। জ্বর ১০০-র আশপাশেই ঘোরাফেরা করছে। কারও ঘুরেফিরে জ্বর আসছে। সেই সঙ্গে নাক, চোখ দিয়ে অনবরত জল পড়া, শুকনো কাশিও ভোগাচ্ছে। জ্বরের সঙ্গে পেটের গোলমালও হচ্ছে অনেকের।
কী কী লক্ষণ দেখা দিচ্ছে?
জ্বর, সর্দিকাশি, নাক বন্ধ, গলাব্যথার লক্ষণ প্রথমেই দেখা দিচ্ছে। ক্রমাগত নাক দিয়ে জল পড়া, গলা শুকিয়ে যাওয়ার সমস্যা নিয়ে অনেকেই আসছেন।
আরও পড়ুন:
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, দ্রুত শ্বাস নেওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় বুক ধড়ফড় করা, নিউমোনিয়ার উপসর্গ দেখা দিচ্ছে অনেকের। সর্দি-কাশির অ্যাডিনোভাইরাস, রাইনো ভাইরাস কিন্তু করোনার চেয়েও বেশি ছোঁয়াচে হয়ে উঠেছে, এমনটাই মত চিকিৎসকের। গুরুতর ভাবে অ্যাডিনোভাইরাসে আক্রান্ত হলে গলা ও ঘাড়ের চারদিকের গ্ল্যান্ড ফুলে যেতে পারে। সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা হবে। রাইনোভাইরাস নাক দিয়ে ঢোকে। এর সংক্রমণ হলে গলা ব্যথা, ঢোঁক গিলতে না পারা, শুকনো কাশি ভোগাতে পারে।
সতর্ক থাকতে কী করবেন?
থুতু-লালার মাধ্যমে ছড়াতে পারে এই সব ভাইরাস। তাই জ্বর হলে মাস্ক পরা খুব জরুরি। বারে বারে হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে বাইরে থেকে এলে হাত ভাল করে ধুয়ে, স্যানিটাইজ় করে তবেই ঘরে ঢুকুন।
জ্বর হলে প্যারাসিটামল আর বেশি করে জল খাওয়ারই পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসক। তবে জ্বর তিন দিনের বেশি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে টেস্ট করিয়ে নিতে হবে।
রাস্তার খাবার ভুলেও খাবেন না। বাড়িতে কম তেলে রান্না করা খাবারই খেতে হবে। নিজে থেকে ওষুধ বা সাপ্লিমেন্ট খাওয়া চলবে না।
অনেকেই ভাবেন শীত এলেই শিশুদের ফ্লু-এর প্রতিষেধক দিয়ে রাখবেন। তবে চিকিৎসকের মতে, ছোটদের ক্ষেত্রে নিজস্ব শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই বাড়িয়ে রাখাই বেশি জরুরি। সে জন্য আমলকি, লেবুর রস অর্থাৎ ভিটামিন সি আছে, এমন ফল ও সব্জি খেতে হবে। তবে হাঁপানির বা সিওপিডি-র রোগী অথবা ক্রনিক শ্বাসপ্রশ্বাসের অসুখ, ফুসফুসের সংক্রামক রোগ আছে এমন রোগীদেরই ফ্লু-এর টিকা নিয়ে রাখা ভাল।