সোহা আলি খান থেকে সমান্থা রুথ প্রভু, টাইগার শ্রফ, বিদ্যুৎ জামওয়াল... ডেড হ্যাং করেন বলিউডের অনেকেই। সে ভিডিয়ো ভাইরাল সমাজমাধ্যমে, তা দেখে ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই এক্সারসাইজ়। ডেড হ্যাং চ্যালেঞ্জে মেতেছেন নেট নাগরিকেরাও। লোহার রড বা বার এক বা দু’হাতে ধরে শরীরকে শূন্যে ঝুলিয়ে দেওয়াই ডেড হ্যাং এক্সারসাইজ়।
এই ব্যায়াম ক্যালাসথেনিক্সের আওতায় পড়ে, যেখানে আলাদা করে ওজন তোলার বা যন্ত্রপাতির প্রয়োজন পড়ে না। ব্যক্তির নিজের শরীরের ভারকেই ব্যবহার করা হয়। ডেড হ্যাং করার জন্য সব সময়ে জিমে যাওয়ারও প্রয়োজন পড়ে না, বাড়িতেও করা যায়।
কী করবেন?
ফিটনেস প্রশিক্ষক অরিজিৎ ঘোষাল বলছেন, “জিমে ডেড হ্যাং-এর জন্য নির্দিষ্ট বার সেট করা থাকে। নিজের উচ্চতা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বার বেছে নিতে হয়।” বাড়িতেও অনায়াসে এই সেট আপ করে নিতে পারেন। শুধু খেয়াল রাখবেন বার বা রডটি যেন শক্তপোক্ত হয়। ব্যক্তির শরীরের ভার বহন করতে না পেরে রডটি যদি ভেঙে পড়ে, তা হলে বড়সড় বিপদ ঘটতে পারে। “এ বার পুল-আপ বার বা রডকে ওভারহ্যান্ড গ্রিপে শক্ত করে ধরুন। মাথা থেকে দুই হাতের মাঝের ব্যবধান যেন সমান হয়, সে দিকে নজর রাখুন। এ বার হাত পুরো সোজা রেখে শরীর ঝুলিয়ে দিন। পা স্থির রাখুন। এই অবস্থায় শরীরকে স্থির ও শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখুন।”
- বিগিনারস স্তরে শরীরকে রিল্যাক্স রাখুন। একে প্যাসিভ হ্যাং বলা হয়। দিনে ১৫–২০ সেকেন্ড করে দু’-তিন সেটে নিয়মিত করুন।
- প্যাসিভ হ্যাং অভ্যাস হয়ে গেলে এ বার অ্যাক্টিভ হ্যাং-এর পালা। এ ক্ষেত্রে কাঁধ সম্পূর্ণ ছেড়ে না দিয়ে সেখানের পেশির গঠনের দিকে নজর দেওয়া হয়।
- এক পায়ের গোড়ালির উপরে অন্য পা রেখে ক্রস লেগ ডেড হ্যাংও করা যায়। এতে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখা কঠিন হয়। হাত, কাঁধের সঙ্গে কোর, অ্যাবডমিনাল এবং হিপ মাসল বেশি সক্রিয় হয়।
- অ্যাডভান্স স্তরে এর সঙ্গে ওজন নিতে পারেন। কোমরে আলাদা করে ওজন বেঁধে কিংবা ওয়েট ভেস্ট, স্যান্ড ব্যাগ ইত্যাদিও ব্যবহার করতে পারেন। লেগ ক্রস ডেড হ্যাং করে পায়েও কোনও ডাম্বেল নিতে পারেন।
- বার-এ গ্রিপের ধরন বদলেও এই এক্সারসাইজ়ে বৈচিত্র আনা যায়। ওভারগ্রিপ-এ বাইসেপ, ট্রাইসেপ বা কাঁধের পেশিতে যতটা চাপ পড়বে, আন্ডারগ্রিপ কিংবা মিক্স গ্রিপে তার চেয়ে আলাদা হবে। তা ছাড়া, অ্যাডভান্স স্তরে সিঙ্গল হ্যান্ড ডেড হ্যাংও করতে পারেন।
সতর্কতা
অরিজিৎ বলছেন, “ওজন নিয়ে ডেড হ্যাং করলে কোমরে ওয়েট হোল্ডিং বেল্ট বা ডেডলিফ্ট বেল্ট ব্যবহার করতে পারেন।” তা ছাড়া, ডেড হ্যাং করার সময়ে অবশ্যই নীচে টুল বা স্টেপ প্ল্যাটফর্ম রাখুন। আচমকা হাত ছেড়ে পড়ে গেলেও যেন চোট না লাগে, তার জন্য নীচে ম্যাট্রেস বা যোগা ম্যাট পেতে রাখতে পারেন। পুল-আপ বা মাঙ্কি বারের চেয়ে কিন্তু ডেড হ্যাং এক্সারসাইজ় একটু আলাদা। ডেড হ্যাং-এ কেবল ঝুলে থাকা হয়, পুল-আপ করার সময়ে শরীরকে টেনে বারের উপরের দিকে তুলতে হয়।
ডেড হ্যাং-এর সুবিধা
এখনকার যান্ত্রিক জীবনে ছোট-বড় প্রায় সকলেরই অধিকাংশ সময় কাটে কম্পিউটার কিংবা মোবাইলে ঘাড় গুঁজে। কাজের সূত্রে দীর্ঘক্ষণ চেয়ারে বসে কাটাতে হয় অনেককেই। তাতে চাপ পড়ে মেরুদণ্ডে। অল্প বয়স থেকে ভারী ব্যাগের ভারে ক্রমশ নুইয়ে পড়ছে বাচ্চারাও। অরিজিতের মতে, নিয়মিত ডেড হ্যাং অভ্যাস কিন্তু পশ্চার ঠিক করতে পারে। তা ছাড়া, কিছু ক্ষেত্রে মেরুদণ্ডের সমস্যা, ব্যথায় সাহায্য করতে পারে এই ব্যায়াম। ডেড হ্যাং-এ গ্রিপের জোর, হাত, কাঁধ, ঘাড়ের মোবিলিটি বাড়ে। কোর মাসল, আপার বডি ও পিঠের স্ট্রেংথ বাড়ে। হাত, ঘাড়, কোমর ইত্যাদির সাধারণ ব্যথাও কমে। তবে হাত, কোমর বা ঘাড়ে পুরনো চোট থাকলে বা ফ্রোজ়েন শোল্ডারের সমস্যা থাকলে এই ব্যায়াম করা ঠিক নয়।
শুরুর দিকে নিয়মিত ১০-১৫ সেকেন্ড ডেড হ্যাং করলেই যথেষ্ট। অভ্যাস হয়ে এলে মিনিটখানেকও করা যায়। তবে প্রাথমিক ভাবে ফিটনেস বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে ডেড হ্যাং করা জরুরি। তাতে পশ্চার ঠিক হয়, নয়তো পেশির ক্ষতি হতে পারে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)