পেঁয়াজ রসুন দেওয়া খাবারকে অতিমশলাদার, গুরুপাক বলে ভাবা হয়। এক সময় বাংলার বিধবাদের পেঁয়াজ-রসুন খেতে দেওয়া হত না তা ‘শরীর গরম’ করতে পারে বলে। আজও দেশের বেশ কিছু অংশেে ব্রাহ্মণ এবং জৈনরা পেঁয়াজ রসুন দেওয়া খাবার এড়িয়ে চলেন। তবে কি পেঁয়াজ-রসুন খাওয়া সত্যিই খারাপ? এ প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন এক অন্ত্রের চিকিৎসক।
এমস এবং হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় প্রশিক্ষিত ওই চিকিৎসকের নাম সৌরভ শেঠি। তিনি বর্তমানে আমেরিকার সান ফ্রান্সিসকোয় গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, হেপাটোলজি এবং অ্যাডভান্সড ইন্টারভেনশনাল এন্ডোস্কপির বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত চিকিৎসক। করোনাকালে সাধারণ মানুষের সাহায্যের জন্য তিনি ইনস্টাগ্রামে নানা ধরনের চিকিৎসা বিষয়ক ভিডিয়ো পোস্ট করতে শুরু করেন। যা জনপ্রিয় হয়। এবং তার পরে তিনি প্রায়ই সমাজমাধ্যমে নানা বিষয়ে পরামর্শ দিতে শুরু করেন। সম্প্রতি তেমনই এক ভিডিয়োয় পেঁয়াজ-রসুন খাওয়া নিয়ে যে ধন্দ এবং ধারণা, তা নিয়ে আলোচনা করেছেন সৌরভ।
পেঁয়াজ-রসুন খাওয়া ভাল না খারাপ?
১। চিকিৎসক জানাচ্ছেন, পেঁয়াজ এবং রসুন— উভয়ই অ্যালিয়াম জাতীয় খাবার। এই ধরনের খাবার শরীরে গেলে লিভার থেকে ডিটক্স এনজ়াইম নিঃসরণে সাহায্য করে। অর্থাৎ এমন উৎসেচক যা শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বার করে দিতে সাহায্য করে।
২। অ্যালিয়াম জাতীয় খাবার শরীরে গেলে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের কাজ করে। যা কোষকে ক্ষতির হাত খেকে বাঁচায়।
৩। পেঁয়াজ এবং রসুনে আছে বিভিন্ন ধরনের অরগ্যানো সালফার। যেমন, অ্যালিসিন, ডায়ালিল সালফাইড, ডায়ালিল ডিসালফাইড। গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, এগুলিতে টিউমার প্রতিরোধ করার ক্ষমতা রয়েছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব মেডিক্যাল জার্নাল ‘হার্ভার্ড হেল্থ’-এও বলা হয়েছে, পেঁয়াজ-রসুন হল উপকারী স্টার্চহীন সব্জি। যাতে থাকা অ্যালিসিনকে টিউমারনাশক উপাদান বলেও বর্ণনা করেছেন গবেষকেরা।
৪। ক্যানসার আক্রান্ত কোষের বৃদ্ধি রোধ করতে পারে। সেই কোষের মৃত্যুর যে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, তাতেও সাহায্য করতে পারে। এ ছাড়া শরীরে কারসিনোজেন বা ক্যানসার জাতীয় কোষ তৈরি হওয়াও ঠেকাতে সাহায্য করে।
৫। উপকারী ব্যাক্টেরিয়ার জন্য পেয়াঁজ-রসুন শরীরে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে, একই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে আরও জোরালো করতে সাহায্য করে। যা ক্যানসারের মতো দীর্ঘমেয়াদি অসুখকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
পেঁয়াজ-রসুন খেলে কি ক্যানসারের সম্ভাবনা কমবে?
আমেরিকান ইনস্টিটিউট ফর ক্যানসার রিসার্চ ২০১৬ সালেই ‘ফুড দ্যাট ফাইট ক্যানসার’ (অর্থাৎ যে সমস্ত খাবার ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে)-এর তালিকায় নথিভুক্ত করেছে রসুনকে। একই সঙ্গে তারা জানিয়েছে, রসুন যে পরিবারের সদস্য সেই অ্যালিয়াম পরিবারের অন্য সব্জি যেমন লাল পেঁয়াজ, ছোট পেঁয়াজ বা ছাঁচি পেঁয়াজ, পেঁয়াজকলি, পেঁয়াজ শাকেও ফাইটোকেমিক্যাল এবং কিছু জরুরি ভিটামিন রয়েছে। যা টিউমারের বৃদ্ধিকে আটকাতে পারে।
আরও পড়ুন:
‘ব্রিটিশ জার্নাল অফ ক্যানসার’-এ প্রকাশিত একটি চিঠিতে এক গবেষক জানিয়েছেন, পেঁয়াজ-রসুনে থাকা অরগ্যানোসালফার প্রস্টেট ক্যানসার, পাকস্থলীর ক্যানসার, বৃহদন্ত্রের ক্যানসার, এমনকি খাদ্যনালীর ক্যানসারের ঝুঁকিও কমাতে পারে। কিছু গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, রসুন খেয়ে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকিও কমেছে।
সৌরভ জানাচ্ছেন, এই সমস্ত দাবির কয়েকটি গবেষণাধীন হলেও এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই যে, পেঁয়াজ এবং রসুনে থাকা অ্যালিসিনের ক্যানসার প্রতিরোধের ক্ষেত্রে সম্ভাবনাময়। বিশেষ করে রসুনে অ্যালিসিন এবং অরগ্যানো সালফার উপাদান রয়েছে বেশি মাত্রায়।
কী ভাবে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার মেলে?
কাঁচা রসুনের কোয়া চিবিয়ে খাওয়া বা রসুন কেটেই রান্নায় দিতে বারণ করছেন চিকিৎসক। সৌরভ জানাচ্ছেন রসুন কাটার পরে বা থেঁতো করার পরে ১০ মিনিট রেখে দিন। তা হলেই তার ভিতরে থাকা অ্যালিসিন সক্রিয় হবে। তার পরে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার মিলবে।