শঙ্খনাদের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে ভারতে। শাঁখের আওয়াজকে পবিত্র বলে মানেন ভারতীয়দের একটা বড় অংশ। পুজোয়, ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে তাই শাঁখ বাজানো হয়। কিন্তু সে তো শাস্ত্রে বলা কথা মেনে চলা। শাঁখ বাজালে স্বাস্থ্যের কোনও উপকার হয় কি? কিছু দিন আগে বলিউডের অভিনেতা এবং মার্শাল আর্টিস্ট বিদ্যুৎ জামওয়াল বলেছিলেন, তাঁর ফিটনেস প্রশিক্ষণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল শাঁখ বাজানো। সে কাজে যে তিনি দক্ষ এবং অভ্যস্ত, তা এক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের মঞ্চে শাঁখ বাজিয়ে দেখিয়েও ছিলেন বিদ্যুৎ। ইদানীং সমাজমাধ্যমে অনেকেই ফুসফুসের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য শাঁখ বাজানোর কথা বলছেন। কিন্তু সত্যিই কি শাঁখ বাজালে ফুসফুস ভাল থাকে?
শঙ্খবাদনে বিশ্বাসীরা যা বলছেন
ফিটনেস প্রশিক্ষক অর্পিত সিংহ শাঁখ বাজানো শেখানোর জন্য একটি প্রতিষ্ঠানই খুলে ফেলেছেন। অর্পিত আগে মার্শাল আর্ট শেখাতেন। এখন তার পাশাপাশি শাঁখ বাজানোর ওয়ার্কশপও করান। অর্পিত বলছেন, ‘মার্শাল আর্টের একটি ধরন কালারি শিক্ষার সময় ২০১২ সাল থেকে আমি শাঁখ বাজানো শুরু করি। কারণ আমার কাছে শাঁখ বাজানো ফুসফুসের ক্ষমতা বৃদ্ধির একটি মাধ্যম। আমি মনে করি এতে ফুসফুসের খাঁচা আরও শক্তিশালী হয়।’’ সেই বিশ্বাস থেকেই শাঁখ বাজানোর মাধ্যমে স্বাস্থ্যরক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান খুলেছেন। তিনি বলছেন, ‘‘আমার ওয়ার্কশপে যাঁরা যোগ দেন তাঁদের শাঁখ বাজানোর ‘বায়োমেকানিক’ বিষয়টি আমি আগে স্পষ্ট করে বোঝাই। তার পরে শেখানো হয় শঙ্খবাদন। তবে ওই ওয়ার্কশপের সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। নেহাতই ফিটনেসের প্রশিক্ষণ।’’

ছবি: সংগৃহীত।
স্বাস্থ্যরক্ষা এবং সুস্থতা বজায় রাখার কাজ করেন লুসি মার্সেলট শুক্ল। তিনি এক জন উদ্যোগপতি। তাঁর ব্যবসাও স্বাস্থ্যরক্ষা সংক্রান্ত বিষয় নিয়েই। যদিও সেই ব্যবসা মূলত ব্রিটেন এবং পর্তুগালে। শুক্ল নিজে তাঁর স্বাস্থ্যরক্ষা এবং ফিটনেসের জন্য নিয়মিত শাঁখ বাজান। তিনি বলছেন, ‘‘আমার সকালের যে রুটিন, তার মধ্যে অন্যতম শাঁখ বাজানো। তার কারণ, আমার মধ্যে শাঁখের ওই শব্দ একটা আধ্যাত্মিক ভাব আনে। যে হেতু আমার কাছে ভাল থাকার নানা উপায়ের একটি আধ্যাত্মিকতাও, তাই আমি শাঁখ বাজাই। আমার গ্রাহকেরা কেউ চাইলে তাঁদেরও শেখাই।’’
চিকিৎসকেরা কী বলছেন?
ফুসফুসের রোগের চিকিৎসক বিকাশ মিত্তল মনে করেন শাঁখ বাজানো ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। তিনি বলছেন, ‘‘শাঁখ বাজানোর জন্য আমাদের অনেকটা জোর দিয়ে নিঃশ্বাস ছাড়তে হয়, যা ফুসফুসের পেশির ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শ্বাস-প্রশ্বাসের হার বৃদ্ধি করে। শ্বাস ছাড়ার ক্ষমতা বর্ধিত করে, যা সার্বিক স্বাস্থ্যের জন্য ভাল।’’

ছবি: শাটারস্টক।
ফুসফুসের চিকিৎসক রবি শেখর ঝা-ও শাঁখ বাজানোকে ফুসফুসের স্বাস্থ্যের জন্য ভাল বলেই মানেন। তিনি বলছেন, ‘‘শাঁখ বাজানোর আগে আমরা গভীর শ্বাস নিই। বাজানোর সময় জোর দিয়ে সেই শ্বাস ছাড়ি। তবে শুধু যে জোর দিয়ে শ্বাস ছাড়ি তা নয়, শাঁখ বাজানোর সময় শ্বাস ছাড়ার প্রক্রিয়াকে আমরা নিয়ন্ত্রণও করি। এই যে নিয়ন্ত্রিত এবং জোরে শ্বাস ছাড়ার দীর্ঘ প্রক্রিয়া, তা ফুসফুসের ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। শুধু তা-ই নয়, ফুসফুস যে পাঁজরের সঙ্গে জুড়ে থাকে, তারও ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এমনকি, শাঁখ বাজালে পেটের পেশিও সুগঠিত হয়, যা সুস্থ শ্বাসপ্রশ্বাসের জন্য জরুরি।’’
শুধু শরীর নয়, শাঁখ বাজালে মানসিক শান্তিও মেলে বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা। চিকিৎসক ঝা বলছেন, ‘‘শাঁখ বাজানোর প্রক্রিয়া মানুষের শরীরের প্যারাসিমপ্যাথেটিক স্নায়ুতন্ত্রকে জাগায়, যা মনেও শান্তি আনে। সুস্থ ভাবে শ্বাসক্রিয়া না হলে অনেক সময়েই মানসিক চাপ বা উদ্বেগ তৈরি হতে পারে।’’
শাঁখ বাজানোর অভ্যাস কি সবার জন্যই ভাল?
চিকিৎসক মিত্তল জানাচ্ছেন, সুস্থ মানুষ নিয়মিত এবং দীর্ঘ দিন ধরে শাঁখ বাজানো অভ্যাস করলে তা ফুসফুসের নিঃশ্বাস ছাড়ার পেশিগুলিকে শক্তিশালী করে। শ্বাসক্রিয়াকেও উন্নত করে। ফুসফুসের ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে। তবে একই সঙ্গে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, ‘‘যাঁদের ফুসফুসের বড় রকমের রোগ রয়েছে বা যাঁদের শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়, তাঁরা শাঁখ বাজালে উল্টো ফল হতে পারে।